আপনারা আমার স্বপ্ন আর শৈশব কেড়ে নিয়েছেন : গ্রেটা থুনবার্গ

>
গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: সংগৃহীত
গত ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন বসে। সেখানে আয়োজিত ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে আমন্ত্রণ পায় গ্রেটা থুনবার্গ। ইংল্যান্ড থেকে নিউইয়র্ক শহরে সে পাড়ি জমায় বিশেষ এক তরিতে চেপে। গ্রেটার এই সমুদ্রযাত্রা ছিল কার্বন নিঃসরণমুক্ত। ১৫ দিনের যাত্রা শেষে জাতিসংঘের বাঘা বাঘা নেতাদের রীতিমতো ধমকে দিয়েছে এই কিশোরী! বক্তৃতাটি হয়ে গেছে ভাইরাল। পরিবেশ সুরক্ষায় বিশ্বনেতাদের গাফিলতির বিষয়টি গ্রেটা তুলে ধরেছে যুক্তিসহ। এখানে বক্তৃতাটির অনুবাদ দেওয়া হলো—

আমরা আপনাদের ওপর নজর রাখব। যা হচ্ছে তার সবই ভুল। আজ আমার এখানে থাকার কথা নয়। আমার থাকার কথা ছিল সমুদ্রের ওপারে একটা স্কুলে। তারপরও আপনারা সবাই আমাদের মতো কম বয়সীদের কাছে এসেছেন আশা খুঁজতে। কী সাহস আপনাদের!

আপনারা ফাঁকা বুলি দিয়ে আমার স্বপ্ন আর শৈশব কেড়ে নিয়েছেন। তবে এখনো আমি ভাগ্যবানদের একজন। কত না মানুষ ভুগছে। কত না মানুষ মারা পড়ছে। পৃথিবীর পরিবেশ ধ্বংসের মুখে। ব্যাপক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে আমরা। আর আপনাদের আলাপের বিষয় টাকাপয়সা। আপনারা শোনাচ্ছেন অনন্তকালীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গালভরা রূপকথা। কী সাহস আপনাদের!

৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বিজ্ঞান আমাদের সামনে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ। আপনাদের সাহস দেখে অবাক হয়ে যাই! এসব দেখেও না দেখার ভান করে এখানে এসে বলছেন, আপনারা যথেষ্ট করছেন। এই সমস্যার জন্য যখন রাজনীতি এবং সমাধান প্রয়োজন, তখন এসবের ছিটেফোঁটাও আমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে নেই। 

আপনারা নাকি আমাদের কথা শুনছেন। আপনারা নাকি অনুধাবন করছেন অবস্থা কতটা ভয়াবহ। আমি কতটা ব্যথিত কিংবা রাগান্বিত, তা ব্যাপার নয়; আমি আপনাদের কথা বিশ্বাস করতে চাই না। কারণ, এমন পরিস্থিতি অনুধাবন করার পরও প্রয়োজনীয়
কোনো ব্যবস্থা নিতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা অসৎ না হলে এমনটা করতেন না। এবং এ কারণেই আমি আপনাদের বিশ্বাস
করতে রাজি নই।

কার্বন নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার সবচেয়ে জনপ্রিয় আইডিয়াটি আগামী ১০ বছর কাজে লাগাতে পারলে কী হবে? বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার সম্ভাবনা দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। এটি হয়তো আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। তবে এই সংখ্যায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুপস্থিত। ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এতে উল্লেখ নেই। এই সংখ্যা বলছে না যে আরও হুমকি লুকিয়ে আছে ক্ষতিকর বায়ুদূষণে। কিংবা এতে প্রকাশ পাচ্ছে না জলবায়ুসংক্রান্ত কোনো ন্যায়বিচারের প্রতিচ্ছবি। আপনাদের প্রযুক্তির কারণে নিঃসরিত শত শত বিলিয়ন টন কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে আমার প্রজন্ম। এই বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা ‘৫০ শতাংশ’ সংখ্যাটিতে অনুপস্থিত।

অতএব ৫০ শতাংশ ঝুঁকি আমাদের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আমরা এটা মানি না। ‘আমরা’ মানে যাদেরকে এই পরিণামের ভুক্তভোগী হতে হবে।

কী সাহস আপনাদের! এমন একটা ভাব করছেন যেন এই সমস্যা ব্যবসা ও কিছু কারিগরি ত্রুটি নির্মূলের মাধ্যমে সহজেই সমাধানযোগ্য!

আজ যা বললাম, তার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো সমাধান বা পরিকল্পনা উপস্থাপিত হবে না। কারণ, আজ যা বললাম এবং যে সংখ্যাগুলো তুলে ধরলাম, তা আপনাদের কাছে ভীষণ অস্বস্তিকর। এবং আপনারা সত্য বলার মতো যথেষ্ট পরিণত নন।

আপনারা আমাদের বিপদে ফেলছেন। তবে কিশোর–তরুণেরা আপনাদের বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি আঁচ করতে শুরু করেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সব চোখ আপনাদের দিকে তাক করা। আপনারা যদি ঠিক করে থাকেন যে আমাদের বিপদে ফেলবেনই, তাহলে শুনে রাখুন—আমরা আপনাদের কখনোই ক্ষমা করব না।

আমরা আপনাদের এর থেকে রেহাই দেব না। এখান থেকে, ঠিক এই মুহূর্ত থেকে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। পৃথিবী জেগে উঠছে। আপনারা চান বা না চান, বদলের হাওয়া ছুটে আসছে। ধন্যবাদ।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মাহফুজ রহমান

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান