ক্যামেরা হাতে যোদ্ধা আঞ্জা

আঞ্জা নিডরিংহাউস
আঞ্জা নিডরিংহাউস

২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল। আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন অ্যাসোসিয়েট প্রেসের ৪৮ বছর বয়সী নারী সাংবাদিক আঞ্জা নিডরিংহাউস। ওই জনপদে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা ২০ বছরেরও বেশি। আঞ্জা তাঁর আরেক সহকর্মী ক্যাথি গ্যাননকে নিয়ে নির্বাচক পরিদর্শকদের গাড়িবহরে বসে ছিলেন, তাঁদেরই নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য অতর্কিত গুলি চালালে মৃত্যু হয় আঞ্জার।

আঞ্জা শুধু একজন ফটোসাংবাদিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন ক্যামেরা হাতে সাহসী এক যোদ্ধা। বলতেন –‘ক্যামেরা হাতে আমার কাজ মানুষের সাহসকে তুলে ধরা।’

২০০৩ সালে অ্যাসোসিয়েট প্রেস ১১ জন ফটোসাংবাদিককে ইরাক যুদ্ধের চিত্র তুলে আনতে পাঠায়। সে দলের একজন সদস্য ছিলেন আঞ্জাও। ২০০৫ সালে দলটি জিতে নেয় পুলিৎজার প্রাইজ ফর ব্রেকিং নিউজ ফটোগ্রাফি। সে বছরই সাহসিকতার জন্য আঞ্জা জয় করেন ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশনের পুরস্কার।

 লিবিয়া থেকে আফগানিস্তান—পুরো এলাকায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন আঞ্জা। তাঁর ছবির গল্প শুধু যুদ্ধের বিভীষিকা নয়, বরং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানবিক বিষয় যা হয়তো ওই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খুব নগণ্য ছিল। ২০০৫ সালে ইরাকের ফাল্লুজা শহরে মার্কিন মেরিন সৈন্যদের দেখে আতঙ্কে কানে হাত দেওয়া ছোট একটি মেয়ের চোখে দেখা যুদ্ধের বিভীষিকা অথবা ২০১৩ সালে কাবুলের একটি সুরম্য সুইমিং পুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ছেলেমেয়ে। আফগান যুদ্ধে কানাডীয় সৈন্যদের আক্রমণের আগে লাথি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া একটি মুরগি বা ঈদের দিনে খালি ঈদগাহ। আঞ্জার ছবিতে যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের বুটের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়া সহযোদ্ধাকে।

লিবিয়া যুদ্ধে বেনগাজিতে লিবিয়া সরকারের একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ধ্বংস করা হয়। আগুন লাগা পড়ন্ত সেই বিমানের ছবিও তোলেন আঞ্জা। আঞ্জার এই সাহসিকতা অন্য নারী সাংবাদিকদের মধ্যে ধরে রাখার জন্য ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিবছর আঞ্জার নামে একটি সাহসিকতা পুরস্কার দেয়। তিনজন নারী সাংবাদিক প্রতিবছর এই পুরস্কার পান, যার অর্থমূল্য ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন