দরজিবাড়ি যাওয়ার ঝামেলা নেই

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

ফ্রিল্যান্সার নাজিয়া তুবা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। দরজিবাড়ি গিয়ে পোশাকের মাপজোখ দিয়ে পোশাক বানানো বেশ ঝামেলার হয়ে যাচ্ছিল তাঁর জন্য। দরজিবাড়ি পর্যন্ত যেতে পারলেও ছেলেরা পোশাকের মাপজোখ নেন, তা–ও পছন্দ নয়। অবশেষে খোঁজ পেলেন ‘দরজি আপা’র। অনলাইনে দরজি আপা’র সঙ্গে যোগাযোগ করলে নারীরাই বাসায় এসে মাপ নিয়ে যাবেন। তারপর থেকে নাজিয়া অনলাইনের মাধ্যমে পোশাক বানাচ্ছেন।

শুধু নাজিয়া নন, রাজধানীতে বর্তমানে অনেক নারীই এ ধরনের সেবা নিচ্ছেন। অ্যাপ, ফোনকল বা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে দরজিসেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ঘরে বসে অর্ডার করলে দরজি এখন বাসায় চলে আসছে।

নাজিয়া বললেন, ‘সংশয় তো কিছুটা ছিলই। তাই প্রথমে সুতির কিছু পোশাক বানাতে দিই। অভিজ্ঞতা ভালো হওয়ায় পরে ঈদের পোশাকও বানিয়ে নিই। এ ছাড়া পোশাক বানানোর পরে কোনো সমস্যা হলে সেটাও ঠিক করে দেয় তারা। জ্যাম ঠেলে দরজির কাছে গিয়ে কাপড় দেওয়া, আবার আনা সব ঝামেলার কথা চিন্তা করলে দরজি আপার কাছে পোশাক বানালে যা খরচ হয়, তা বলতে গেলে হাতের নাগালের মধ্যেই আছে।’

ফেসবুকভিত্তিক ‘দরজি আপা’ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। এর উদ্যোক্তা চারজন। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম উদ্যোক্তা মাহমুদুল ইসলাম বললেন, কর্মজীবী নারীদের সুবিধার জন্য দরজিসেবা ঘরে পৌঁছে দিতে এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেই দরজি আপার যাত্রা। শুধু মেয়ে ও নারীদের পোশাক তৈরি করে দরজি আপা।

 দরজি আপার উদ্যোক্তা মাহমুদুল ইসলাম জানান, তাঁদের নিয়মিত সেবাগ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ২০০। শুক্র ও শনিবার বেশির ভাগ অর্ডার আসে। অর্ডার করার পর একজন নারী দরজি গ্রাহকের বাসায় গিয়ে মাপসহ অর্ডার বুঝে নেন। গ্রাহক ফোন দিলে দ্রুতই তারা পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। প্রায় ক্ষেত্রেই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পোশাক পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মিরপুরে নিজস্ব কারখানায় দরজি আপার গ্রাহকদের পোশাক তৈরি হচ্ছে। মিরপুরসহ ডিওএইচএস, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ক্যান্টনমেন্ট, কচুক্ষেত এলাকার গ্রাহকেরা দরজি আপার সেবা পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও দরজি আপার সেবা পাওয়া যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে একটি ক্লাস প্রজেক্টের কাজ করতে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে দরজিসেবার আইডিয়া পান ফারজানা আক্তারসহ তাঁর বন্ধুরা। গত বছরের ডিসেম্বরে তাঁরা শুরু করেন ‘ডিজিটাল দরজি’ নামের এক প্রতিষ্ঠান। ফারজানা বললেন, ‘ব্যস্ততার জন্য যাঁরা দরজির কাছে যেতে পারেন না, তাঁদের কথা মাথায় রেখে ডিজিটাল দরজির যাত্রা শুরু।’ ফেসবুক ও ফোনকলের মাধ্যমে অর্ডার পেলে ডিজিটাল দরজি থেকে একজন গিয়ে গ্রাহকের অর্ডার বুঝে নিয়ে আসেন। পুরো ঢাকাতেই এ সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। টঙ্গীতে নিজস্ব কারখানায় পোশাক তৈরি করে গ্রাহকের কাছে সাত দিনের মধ্যে পোশাক পৌঁছে দেয় ডিজিটাল দরজি। ডিজিটাল দরজির অর্ডার নেওয়া থেকে পোশাক বানানোর পুরো প্রক্রিয়াটার সঙ্গে নারীরাই যুক্ত রয়েছেন।

গত বছরের অক্টোবরে চালু হওয়া অ্যাপভিত্তিক সেবা ‘দরজি ই’র অন্যতম উদ্যোক্তা শ্রেড চৌধুরী বললেন, ‘বন্ধুরা প্রায়ই অভিযোগ করত, টেইলর বা দরজির কাছে যাওয়া ঝামেলার। বন্ধুদের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই “দরজি ই” শুরু করি। রাজধানীর সব এলাকাতেই এ সেবা চালু আছে।’

 ‘দরজি ই’র সেবা পেতে অ্যাপে কেউ অর্ডার করলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তৈরি পোশাক গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহক তাঁর বাজেট অনুযায়ী দরজি পছন্দ করতে পারেন এবং এলাকাভেদে দরজির দাম ওঠানামা করে।