বেহালাকে ঘিরেই ইশরার স্বপ্ন
লন্ডনের ‘অ্যাসোসিয়েটেড বোর্ড অব রয়্যাল স্কুলস অব মিউজিক’-এর সংগীতের পরীক্ষায় তৃতীয় গ্রেড থেকে সর্বোচ্চ নম্বরে পাস করেছেন ঢাকার বেহলাবাদক ইশরার হাবিব। ১৮ অক্টোবর সেই সনদ হাতে পেলেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাইম অর্কেস্ট্রার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। প্রাইম অর্কেস্ট্রা ক্লেফস মিউজিক ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান। এই ফাউন্ডেশনেরও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইশরার।
ইশরারের মা–বাবা দুজনই সরকারি কর্মকর্তা। ইশরার ঢাকার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। স্নাতকোত্তর পড়া শেষ করছেন।
ছোটবেলা থেকেই ইশরারের সংগীতের প্রতি আগ্রহ ছিল, আর সব সময় পাশে ছিলেন মা। ইশরারের নানাও ছিলেন সংগীতপ্রেমী। তিনি গানও লিখতেন। নানা ছাড়া বংশের আর কারও সংগীতের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক নেই সেভাবে। ইশরার ছোটবেলায় ভর্তি হন নজরুল একাডেমিতে। তবে চার বছরের কোর্সটি শেষ করা হয়নি। কেননা, তখন বেহালার সুর তাঁকে টানতে শুরু করেছে। তিনি বললেন, ‘ জীবনে যখন হোঁচট খাই তখন সংগীতের আশ্রয় নিই। আর যন্ত্রসংগীত, বিশেষ করে বেহালার সুর ইউনিক।’
২০০৯ সালে বেহালাবাদক নুরুজ্জামান বাচ্চুর কাছ থেকে তালিম নেওয়া শুরু করেন ইশরার। তিন বছর ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীত শেখার পর তাঁর সংগীতচর্চায় কিছুটা ভাটা পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যন্ত্রসংগীতশিল্পী মেহেদী হাসানের সঙ্গে পরিচয়। তাঁর হাত ধরেই পুরোদমে বেহালাচর্চা শুরু করেন ইশরার।
মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ক্লেফস মিউজিক ফাউন্ডেশন, ফাউন্ডেশনের অধীনে এরপর যাত্রা শুরু করে প্রাইম অর্কেস্ট্রা। ইশরার বললেন, ‘সংগীতকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। প্রাইম অর্কেস্ট্রার দলের সদস্যদের মধ্যে যে বন্ধন তা–ও আমার কাছে আশ্রয়ের মতো। এই অর্কেস্ট্রা আমাকে পুনরুজ্জীবিত করে। আর বেহালাকে অবলম্বন করেই এখন নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।’
প্রাইম অর্কেস্ট্রা বিভিন্ন সংগীত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকে। এই দলের বেশির ভাগ যন্ত্রশিল্পী নারী। যন্ত্রসংগীত চর্চা করতে চান, এমন যেকোনো যন্ত্রশিল্পীর জন্য প্রাইমের দরজা খোলা বলে জানালেন ইশরার। ফাউন্ডেশন শিল্পী তৈরি করবে, সেই শিল্পী নিজেকে প্রকাশ করবেন প্রাইম অর্কেস্ট্রার মাধ্যমে।
ক্লেফস মিউজিক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বললেন, ‘ইশরার অবদান রাখতে পেরেছেন বলেই তিনি আজ প্রাইমের প্রধান সমন্বয়ক। ওর আত্মশক্তি প্রবল, শেখার মনোভাব আছে, গবেষণার মানসিকতা আছে। নতুন কিছু করার উদ্যম আছে। নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণও আছে।’
ভবিষ্যতে সংগীত নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করতে চান ইশরার। প্রাইম অর্কেস্ট্রা একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সংগীতের প্রতিনিধিত্ব করবে, সেই স্বপ্নও দেখেন তিনি।