নারীদের নিয়ে রিবানার স্বপ্ন

রিবানা হক নারীদের সঙ্গে কাজ নিয়ে কথা বলছেন।  ছবি: আবদুস সালাম
রিবানা হক নারীদের সঙ্গে কাজ নিয়ে কথা বলছেন। ছবি: আবদুস সালাম

নিজের পছন্দেই বিয়ে করেছিলেন রিবানা হক। তবে বিয়ের পর মাত্র দুই বছরের মাথায় ২০১৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। জীবনের এই মোড়ে এসে বিদেশে পাড়ি জমানোর কথা ভাবছিলেন রিবানা। তিনি বললেন, ‘আমার সঙ্গে তখন বেশ কয়েকজন নারী কাজ করছিলেন। এই নারীদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিদেশে যাওয়া হয়নি।’

রিবানা হক স্থাপত্যকলায় পাঁচ বছরের বিএসসি পড়াশোনা শেষ করেছেন। কিন্তু স্থাপত্যকে পেশা হিসেবে না নিয়ে হয়েছেন উদ্যোক্তা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে তাঁর অনলাইনভিত্তিক হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠান ‘বুনন’। রিবানার বুননে পণ্য তৈরির কাজ করেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের ৪০ নারী। এই নারীদের জন্যই রিবানা হকের বিদেশ যাওয়া হয়নি। এখন আর বিদেশে যেতেও চান না এই উদ্যোক্তা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় বসেই বুনন পরিচালনা করেন রিবানা। তাঁর জন্ম নওগাঁয়। সেখানেই স্কুল ও কলেজের পাঠ শেষ করে তিনি একাই ঢাকায় চলে আসেন। ভর্তি হন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে। মা–বাবা ও ছোট বোন তখন নওগাঁয় থাকতেন।

ঢাকায় থাকতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েন রিবানা। বাবার পাঠানো টাকা পর্যাপ্ত ছিল না। আর বারবার বাবার কাছ থেকে টাকা নিতেও লজ্জাই লাগছিল। রিবানা বললেন, ‘আমি তো ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের কাজ করি, সেলাই নিয়ে কিছু করা যায় কিনা চিন্তা থেকে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে বুননের জন্ম হয়। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে শুরু করে বুনন। বর্তমানে এই পেজে লাইকের সংখ্যা প্রায় এক লাখ।’ বুননে সুতার তৈরি কুশন কভার, বেড কভার, টেবিল রানার, প্লেট ম্যাট, শিশুদের পোশাক, টুপি, জুতা ইত্যাদি পাওয়া যায়।

রিবানা বললেন, ‘আমি যখন শিক্ষার্থী তখন মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে জরিপের কাজ করেছিলাম। এখানকার নারীদের নিয়ে কিছু করার চিন্তা তখনই মাথায় আসে। তারপর আমি তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ করা শুরু করি। বর্তমানে আমার সঙ্গে ৪০ জন নারীকর্মী কাজ করছেন। আরও পাঁচজন কাজ শিখছেন।’

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিবানার মা–বাবা, ছোট বোন ঢাকায় পাড়ি জমান। বাবা আর রিবানার আয়ে সংসার ভালোই চলছিল। তবে গত আগস্ট মাসে তাঁর বাবা মারা যান। রিবানা বললেন, ‘বাবা ছিলেন আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তিনি কখনো আমাকে কোনো কিছুর জন্য চাপ দেননি, দোষারোপ করেননি। সব সময় আমার পাশে ছিলেন। বাবাই আমাকে শিখিয়েছেন, আবেগ দিয়ে কাজ হয় না। তিনি আমাকে বাস্তববাদী হতে শিখিয়েছেন।’ সংসারের ভার এখন রিবানার কাঁধে।

রিবানা জানালেন, বুননের লক্ষ্য সুবিধাবঞ্চিত নারীর সামাজিক উন্নয়ন। এখানকার কর্মীরা প্রতিটি পণ্য তৈরির জন্য ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন। একেকজন কর্মীর মাসিক গড় আয় ৬ থেকে ১৫ হাজার টাকা। রিবানা চান, কমপক্ষে এক হাজার নারীকর্মী বুননের সঙ্গে কাজ করবেন এবং তাঁদের হাতে তৈরি পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হবে।

 স্থাপত্যকলা নিয়েও কাজ শুরু করেছেন রিবানা। হস্তশিল্পের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র করার স্বপ্ন দেখেন এই উদ্যোক্তা। রিবানা বললেন, ‘এমন একটি স্কুল করতে চাই, যেখানে কাজ শিখে মেয়েরা আত্মনির্ভরশীল হবে। স্কুল করতে প্রয়োজন ঋণ বা অনুদান।’