আমরা কবে বিজয়ী হব?

সিনিয়র ও জুনিয়র,দুই বিভাগে সনদ পান বিজয়ীরা। ছবি: সংগৃহীত
সিনিয়র ও জুনিয়র,দুই বিভাগে সনদ পান বিজয়ীরা। ছবি: সংগৃহীত

গত বছর খুব আগ্রহ নিয়ে আমি কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতার ফল প্রকাশের দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ওয়েবসাইটে যখন দেখলাম, সিনিয়র বিভাগে কানাডার ক্যাথেরিন ওয়াং বিজয়ী ও নাইজেরিয়ার নেমদি ওজোয়েমিনা রানারআপ হয়েছে, জুনিয়ার বিভাগে বিজয়ী ও রানারআপ হয়েছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুরের ভেরোনিকা সেন ও ঘানার এলিস জেনসেন—ছবিতে ওদের হাসিমুখ দেখে ভালো লাগছিল। কিন্তু একই সঙ্গে একটু আফসোসও হলো। শুধু মনে হচ্ছিল, ইশ্, কোথাও যদি বাংলাদেশের নামটা থাকত!
সেই ১৮৮৩ সাল থেকে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশের জন্য এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে রয়্যাল কমনওয়েলথ সোসাইটি (আরসিএস)। বাংলাদেশে আরসিএসের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাজ হলো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এ প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানানো। অনেক শিক্ষার্থীর হাতের কাছে কম্পিউটার নেই, অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানে না, আমরা তাদের এ প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত করতে চাই।
গত বছর কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বেশ ভালোসংখ্যক প্রতিযোগী বৈশ্বিক এই রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশ থেকে মোট অংশগ্রহণকারী ছিল প্রায় ১১ হাজার ৪০০ জন, সেখানে বাংলাদেশির সংখ্যা ৫৬৭ জন। বাংলাদেশ থেকে সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জ পেয়েছে যথাক্রমে ২২, ৪৯ ও ৯১ জন। গোল্ড ফাইনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ৫ জন। অতএব শিগগিরই আমার দেশের কেউ একজন চূড়ান্ত বিজয়ীদের তালিকায় নাম লেখাবে, এমনটা তো আমি আশা করতেই পারি!

শুধু সনদ নয়, মেলে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ
শুধু সনদ নয়, মেলে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ

কেন এ প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ
১৮৬৮ সাল থেকে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য তরুণদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষাদান ও সহায়তায় কাজ করছে রয়্যাল কমনওয়েলথ সোসাইটি। রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজক তারাই। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্মানে ২০১৫ সাল থেকে এ প্রতিযোগিতার নামকরণ করা হয় কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা। রচনা লিখে যারা সোনা, রুপা বা ব্রোঞ্জ পুরস্কার পায়, তাদের কাছে ই–মেইলের মাধ্যমে পৌঁছে যায় সনদ। আর দুই বিভাগ (সিনিয়র ও জুনিয়র) থেকে একজন করে বিজয়ী ও রানার আপ এক সপ্তাহের জন্য লন্ডন ভ্রমণের সুযোগ পায়। তারা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, শিক্ষণীয় কার্যক্রমে অংশ নেয়।
তবে কমনওয়েলথের বিশাল ও শক্তিশালী নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিশ্চয়ই এই পুরস্কারের চেয়েও বড় প্রাপ্তি। কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা শিশু–কিশোরদের ইংরেজি লেখার দক্ষতা, সৃজনশীলতা, যুক্তি দিয়ে ভাবা এবং নিজের ভাবনা সঠিকভাবে প্রকাশ করার সক্ষমতাকে উৎসাহিত করে। তাই যারা এ প্রতিযোগিতায় ভালো ফল করবে, নিশ্চয়ই এটি তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের দিকনির্দেশনা পেতেও সহায়ক হবে। গণতন্ত্র, বৈচিত্র্য, বৈশ্বিক উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থাকে প্রতিযোগিতার থিম হিসেবে। তাই নিজের কণ্ঠস্বর বিশ্ববাসীকে শোনানোর একটা উপায়ও হতে পারে এ প্রতিযোগিতা।

কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা ২০২০
২০২০ সালের কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। তাই যারা রচনা জমা দিতে চাও, এখন থেকেই ভাবতে শুরু করো। ‘জলবায়ু আন্দোলন ও কমনওয়েলথ’ হলো এবারের থিম, আর রচনা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২০২০ সালের ৩০ জুন।
১ জুলাই, ২০০২ থেকে ৩০ জুন, ২০০৬ সালের মধ্যে যাদের জন্ম হয়েছে (১৪ থেকে ১৮ বছর), তারা সিনিয়র বিভাগে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারো। আর ১ জুলাই, ২০০৬-এর আগে যাদের জন্ম (১৪ বছরের কম বয়স), তারা অংশ নেবে জুনিয়র বিভাগে। দুই বিভাগে আলাদাভাবে চারটি করে বিষয় উল্লেখ করা আছে। যেকোনো একটি বিষয় বেছে নিয়ে রচনা লিখতে পারো। বিস্তারিত নিয়মকানুন ও তথ্য পাওয়া যাবে এই লিংকে: thercs.org/youth-and-education/the-queens-commonwealth-essay-competition/

লেখক: কুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ প্রতিনিধি