স্বীকৃতিতে সমাজ বদলাবে

নারীরা গৃহস্থালির কাজের স্বীকৃতি পান না।  ছবি: এহসান–উদ দৌলা
নারীরা গৃহস্থালির কাজের স্বীকৃতি পান না। ছবি: এহসান–উদ দৌলা

নারীর মজুরিবিহীন অস্বীকৃত কাজের স্বীকৃতি নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে পারে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, স্বীকৃতিটা হতে হবে জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন)। তাহলেই বোঝা যাবে নারীর কাজের মূল্য।

পরিবারের সবকিছুর দেখাশোনাসহ কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য জরুরি কাজ করেও নারী কোনো স্বীকৃতি পান না। নারী নিজে বা তাঁর পরিবারের সদস্যরাও এসবকে কাজ হিসেবে ভাবেন না। নারীর কাজকে উৎপাদনশীলতার দিক থেকে বিবেচনা করে তাঁকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি এখন জোরালো হচ্ছে।

গৃহিণী মোমেনা বেগম বললেন, সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে তাঁর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। ঘুমাতে যান সবার পরে। তবু শুনতে হয়, তিনি ‘কিছু করেন না, বাসায় থাকেন’।

২০১২ সাল থেকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নারীর গৃহস্থালির কাজসহ মজুরিবিহীন কাজের অবদানকে তুলে ধরার জন্য ‘মর্যাদায় গড়ি সমতা’ শীর্ষক এক প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জানায়, একজন নারী প্রতিদিন ৮ ঘণ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ১২টি মজুরিবিহীন কাজ করেন। যার কোনো স্বীকৃতি ও মর্যাদা নেই।

অক্সফামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে বছরে নারীদের মজুরিবিহীন সেবামূলক কাজের অর্থমূল্য ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোম্পানি অ্যাপলের বার্ষিক ব্যবসার ৪৩ গুণ বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপও বলছে, ২০১৭ সালের শেষে সারা দেশে ৭২ লাখ নারী-পুরুষ মজুরিবিহীন কাজ করতেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫৪ লাখ। আর ১৮ লাখ পুরুষ এমন কাজ করেন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বললেন, নারীরা মজুরিবিহীন সেবামূলক কাজের কোনো পারিশ্রমিক পান না, কিন্তু কাজটি উৎপাদনশীল। এই কাজ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করলে তা জাতীয়ভাবে স্বীকৃত হবে।

এখনো কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে নারীর কাজকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। শাহীন আনাম বলেন, ‘কাজটা কঠিন। এর সঙ্গে সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট জড়িত। যেটা ইউনিভার্সালি নির্ধারণ করা হয়। আমরা বলছি, একটা স্যাটেলাইট সিস্টেম অ্যাকাউন্ট করতে। তাহলে বোঝা যেত জিডিপিতে ঢুকলে এর মূল্য কত।’