ক্লাসের সময় শিক্ষা অফিসে আনাগোনা বন্ধ

গুলশান আক্তার।  ছবি: সংগৃহীত
গুলশান আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হয়েছেন গুলশান আক্তার। তিনি চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। গত ২৫ ডিসেম্বর জেলা শিক্ষাপদক-সম্পর্কিত বাছাই কমিটির সভায় তাঁকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়। ২০১২ সালেও তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষা কর্মকর্তা মনোনীত হয়েছিলেন।

গুলশান আক্তার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন ২০০৫ সালে। ২০১৭ সালে চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৮ সালে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে পড়তে যান। মাস্টার অব সায়েন্স ইন এডুকেশন (লিডারশিপ) ডিগ্রি অর্জনের পর গত বছর জানুয়ারিতে দেশে ফিরে কর্মস্থলে যোগ দেন। তাঁর স্বামী শামশুল আলমও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কর্মরত।

 চকরিয়া উপজেলায় ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গুলশান আক্তার ১১৪টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। উপজেলার ১৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে লাল-সবুজ রং লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন করেছেন। উপজেলার ৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করেন। ১৩২টি বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বর্ণমালা, ফুল, ফল, মনীষীদের ছবি এঁকে ও তাঁদের উক্তি দিয়ে শ্রেণিকক্ষ সাজিয়েছেন। রিংভং দ‌ক্ষিণ পাহাড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঢেমুশিয়া মুছারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারে ভূমিকা রাখেন এই কর্মকর্তা। এ ছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির মাসিক সভা বাধ্যতামূলক করেন। সভায় অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের তালিকা করে পরে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে বসে সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ উদ্দিন বললেন, গুলশান আক্তার ক্লাসের সময়ে শিক্ষা অফিসে প্রধান শিক্ষকদের আনাগোনা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিকেল চারটার পর প্রধান শিক্ষকেরা শিক্ষা অফিসে যেতে পারেন এবং যতক্ষণ সমস্যার সমাধান না হয়, ততক্ষণ, এমনকি রাত ১০টা পর্যন্তও সময় দেন এই কর্মকর্তা।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বললেন, গুলশান আক্তার যেভাবে কাজ করছেন, তা অন্য কর্মকর্তাদের জন্যও অনুপ্রেরণার বিষয়।

জেলা শিক্ষাপদক-সম্পর্কিত বাছাই কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বললেন, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন, ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত, বিদ্যালয় ভবনগুলোকে দৃষ্টিনন্দন, প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে নিয়মিত মা–সমাবেশ করে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অবদান রাখায় গুলশান আক্তারকে সেরা শিক্ষা কর্মকর্তার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

গুলশান আক্তার বলেন, ‘নিয়মিত তদারকি ও পরিদর্শন এবং নানামুখী তৎপরতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে চেষ্টা করছি। উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে নিয়মিত তাঁদের অভিযোগ ও অন্যান্য বিষয় জানার চেষ্টা করছি এবং তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া সম্ভব হলে তা দিচ্ছি।’