কঙ্গোতে বসন্তবরণ

আফ্রিকার ধূসর প্রান্তরে বসন্তবরণে বাংলাদেশের নারীরা।  ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
আফ্রিকার ধূসর প্রান্তরে বসন্তবরণে বাংলাদেশের নারীরা। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে বছরজুড়ে কেবল দুটি মৌসুম। অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত বর্ষা আর জুন থেকে সেপ্টেম্বর অবধি ছোট একটা শুষ্ক মৌসুম। কিন্তু এই দুই ঋতুর দেশে সুদূর বাংলাদেশ থেকে আসা নারীরা লাগিয়ে দিয়েছেন ফাল্গুনের পরশ, বৈশাখের লাল রং, বর্ষার মেঘ। ষড়্ঋতুর দেশ বাংলাদেশের মাসে মাসে রংবদলের হাওয়া আফ্রিকার দূরতম এই দেশের কিনসাসা শহরের লোকজনকেও একইভাবে স্পর্শ করছে। আর তা সম্ভব হয়েছে কিনসাসায় উপস্থিত বাংলাদেশ ফোর্স পুলিশ ইউনিটের (বিএনএফপিইউ-১, রোটেশন ১৩) একমাত্র আন্তর্জাতিক নারী কন্টিনজেন্ট দলটির নারী সদস্যদের সুবাদে। বসন্তের প্রথম দিনে বাসন্তী রং শাড়ি পরে, নাচ–গান–আবৃত্তি আর বসন্ত উদ্‌যাপনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে আবারও কিনসাসা ক্যাম্পটিকে মাতিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের নারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেসব ছবি শেয়ার করেছেন দলের সদস্যরা।

কিনসাসার এই ক্যাম্পে বাংলাদেশ ছাড়াও মিসর, ঘানা, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কটি দেশের ফোর্স রয়েছে। তবে বাংলাদেশের দলটি বিশেষত্বর দাবিদার। কেননা, এটিই দেশটির প্রথম অনলি লেডি কনটেন্ট। সিও বা কন্টিনজেন্ট কমান্ডার সালমা সৈয়দের নেতৃত্বে এ মুহূর্তে ৭৭ জন নারী পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৮০ জনের দল এটি। নারীরা এখানে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ডিউটি, সিম্পল প্যাট্রোল, সিকিউরিটি প্যাট্রোল, জয়েন্ট প্যাট্রোলসহ সব ধরনের কাজ করে থাকেন। এর বাইরে যখনই বাংলাদেশের কোনো উৎসবের সময় আসে, তখন এই নারী সদস্যরাই রঙে রঙে পুরো ক্যাম্প মাতিয়ে তোলেন। এমনকি এখানকার জাতিসংঘের মিশনপ্রধান যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে প্রথমেই নাকি বলে দেন, বাংলাদেশ ইউনিটকে দায়িত্ব দিয়ে দিলেই হবে, তাহলেই নিশ্চিন্ত। ওরা এক্সপার্ট!

এবারও পয়লা ফাল্গুনের আয়োজনে বর্ণিল বাসন্তী শাড়ি পরে কনস্টেবল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পদের কর্মকর্তা পর্যন্ত সবাই বসন্ত আহ্বানে মেতে উঠেছিলেন। কেউ গান গেয়েছেন, কেউ নাচ, কেউবা আবৃত্তি করেছেন। বাংলাদেশের এসব উৎসব উদ্‌যাপনে অংশ নিতে এসে ক্যাম্পের অন্যান্য আইপিও অফিসারসহ অন্য নারী কর্মকর্তারা রীতিমতো মুগ্ধ। ক্যাম্পের অন্য নারীরা শাড়ির ভক্ত হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ অনুরোধও করেছেন বাংলাদেশ থেকে তাঁদের যেন শাড়ি আনিয়ে দেওয়া হয়।

কিনসাসায় কর্মরত কমান্ডিং অফিসার (এডিশনাল এসপি) ফারজানা ইয়াসমীন বলেন, ছুটিতে দেশে গেলে সম্ভাব্য উৎসবগুলোর কথা মাথায় রেখে শাড়ি কেনা হয়। জানালেন, অক্টোবরে দেশে এসেছিলেন, তখন জুন পর্যন্ত কী কী উৎসব হতে পারে, সে চিন্তা করে শাড়ি এনে রেখেছেন। একজন দেশে গেলে অন্যদের জন্যও নিয়ে আসেন।