ব্যক্তি উদ্যোগেই তিনি স্যানিটাইজার বানাচ্ছেন

জান্নাতুন নাহার লিয়া দুই বছর ধরে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। নৃ বাংলাদেশ নামের একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমেই মূলত তিনি ভিন্নধর্মী কাঠের গয়না, বাটিক, ঢাকাইয়া জামদানিসহ বিভিন্ন পণ্যে নতুনত্ব যোগ করে বা নিজে বানিয়ে ক্রেতাদের সামনে হাজির হন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন জান্নাতুন নাহার। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তারে নিজের পড়াশোনার বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে নিজের বাসাতেই তৈরি করছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আর তাঁর বানানো হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো বিতরণ করছেন ছিন্নমূল পথশিশু বা যাদের কেনার সামর্থ্য নেই তাদের মধ্যে।

জান্নাতুন নাহার বললেন, ‘সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার হলো যখন পানি ও সাবানের ব্যবস্থা নেই, তখন ব্যবহারের জন্য। আমি যেহেতু ফার্মাসি বিভাগে পড়াশোনা করেছি, সেই বিষয়কে কাজে লাগিয়ে এটি বানানোর উদ্যোগ নিয়েছি এবং যাদের কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের কাছে বিতরণ করছি। স্যানিটাইজার বানানোর বিভিন্ন উপাদানের দাম বেড়ে গেছে, সব উপাদান পাওয়াও যাচ্ছে না। তাই ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকলেও বেশি পরিমাণে বানাতে পারছি না। শুক্রবার পর্যন্ত ২৯টি বিতরণ করেছি। উত্তরায় পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে একজন যোগাযোগ করে ৬৬ বোতল (৫০ এমএল) চেয়েছেন।’

জান্নাতুন নাহার বললেন, ‘অনেকেই আমার কাছ থেকে স্যানিটাইজার কিনতে চাইছেন, তবে আমি বিক্রির জন্য এগুলো বানাচ্ছি না। আমি শুধু হাত ধোয়া বা জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টিতে সচেতন করতে এবং যাদের হাত পরিষ্কার রাখার অন্য কোনো উপায় নেই, তাদের দিচ্ছি। আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মেনে এটি বানাচ্ছি। কেউ আগ্রহী হলে তাঁকে এটি বানানোর রেসিপি বলে দিচ্ছি। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে সম্পূর্ণ প্রটোকল মানা সম্ভব না হলে এটি না বানানোই ভালো।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক স্বামী সাদেক আল মাহমুদের সার্বিক সহায়তায় জান্নাতুন নাহার স্যানিটাইজার বানাচ্ছেন বলে জানালেন।

জান্নাতুন নাহার ব্যবসায়ী বাবাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই চাকরি না করে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। 

জান্নাতুন নাহার ফেসবুক পেজের নাম নিয়ে বললেন, ‘নৃ শব্দের অর্থ মানুষ। যেহেতু মানুষ নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে, আর মানুষের জন্যই কাজ করতে চাই, তাই এই নাম দিয়েছি। আর নৃর সঙ্গে বাংলাদেশ লাগিয়ে দিয়েছি, যাতে ব্যবসার স্বার্থেও কখনো দেশি পণ্যের বাইরে অন্য কোনো দেশের পণ্য নিয়ে যাতে কাজ না করি। আর বর্তমানে দেশ ও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই স্বল্প পরিমাণে হলেও স্যানিটাইজার বানানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শাখাওয়াৎ হোসেন ফিরোজের সঙ্গে জান্নাতুন নাহারের হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর উদ্যোগটি নিয়ে কথা হয়। মো. শাখাওয়াৎ হোসেন বললেন, বর্তমানে দেশে এক ধরনের দুর্যোগ চলছে। এ সময় যে যাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, এটাই স্বাভাবিক। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন আছে। এ গাইডলাইন ফলো করার পাশাপাশি স্যানিটাইজার তৈরিতে যে কেমিক্যালগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে।