দ্য শো মাস্ট গো অন : জেমস কর্ডন

>জেমস কর্ডন একজন ব্রিটিশ অভিনেতা, কমেডিয়ান ও উপস্থাপক। ‘দ্য লেট লেট শো উইথ জেমস কর্ডন’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার জন্য বিখ্যাত তিনি। সম্প্রতি টাইম সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে লিখেছেন করোনাকালীন ভাবনা।
জেমস কর্ডন
জেমস কর্ডন

এক বুধবার সন্ধ্যায়, স্টুডিওতে আমরা শেষবারের মতো অনুষ্ঠান করেছি। ভরপুর দর্শকের একটা ছবি তুলে আমাদের নির্বাহী প্রযোজক বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় আবার বহুদিন পর আমরা এখানে দর্শকের দেখা পাব।’ সেদিনের পর থেকে দ্রুত নতুন নতুন খবর আসতে লাগল। সীমান্ত বন্ধ। বন্ধ হলো রাস্তাঘাট, অফিস, কারখানা—সব। সঙ্গে ভয়াবহ সব পরিসংখ্যান তো আছেই।

প্রথমে ভাবছিলাম, দর্শক ছাড়া কীভাবে অনুষ্ঠান করব। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উপলব্ধি করলাম, দর্শক তো দূরের কথা, দ্য লেট লেট শোর সব কর্মীকে এক ঘরে আনাও আমাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। আমি জানি, শিল্প ও বিনোদন আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। টানা তিন রাত অ্যাজ গুড অ্যাজ ইট গেটস ছবিটা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা আমি বলতেই পারি!

অতএব আমরা এমন একটা কিছু করতে চেয়েছিলাম, যেন মানুষ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেও এক হতে পারে। এভাবেই শুরু হলো ‘হোমফেস্ট’, যেখানে একজন বিশেষ অতিথি তাঁর বাসায় বসেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন, আর একটা কিছু পরিবেশন করেন। আমি আমার ঘরে বসেই বিশ্বের নানা প্রান্তের তারকাদের বাড়ি ঘুরে বেড়াতে শুরু করলাম—ইতালির আন্দ্রেয়া বোচেলি থেকে কোরিয়ার বিটিএস কিংবা ব্রিটেনের ডুয়া লিপা।

অনুষ্ঠানের জন্য আমরা কী ধরনের কমেডি তৈরি করব, তা নিয়ে অনেক ভেবেছি। অবশেষে সিদ্ধান্তে এলাম, স্রেফ বলব, ‘আমার এমনটা অনুভূত হচ্ছে এবং এটা হওয়া খুব স্বাভাবিক।’ সবকিছুই যখন ভেঙে পড়ছে, তখন মনে হচ্ছে আমি শুধু ঘুম থেকে উঠছি আর ঘুমাতে যাচ্ছি। আমার এক ভালো বন্ধু সম্প্রতি তার স্বামীকে হারিয়েছে, আবার একই দিনে আরেক বন্ধু বাড়ি ফেরার অনুমতি পেয়েছে। আমাদের একমাত্র পথ হলো এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। যেন এই নতুন অনুভূতি আমাদের মনে এসেছে অতিথি হয়ে এবং শিগগিরই সে চলেও যাবে।

কী অদ্ভুতভাবেই না আমরা সবাই একটা সম্মিলিত অভিজ্ঞতার জন্য মুখিয়ে আছি! যেখানে বেশির ভাগ সময়ই আমরা একাকী থাকতে ভালোবাসি—একা একা ফোনে একটা কিছু দেখি। আর পরদিন কাজে গিয়েই বলি, ‘না না, আমাকে কিছু বোলো না। আমি মাত্র ৫ নম্বর পর্বে আছি!’ কিন্তু এই প্রথম, আমরা সবাই কোনো কিছুতে এক হয়েছি। আমার মনে হয় সামাজিক দূরত্ব (সোশ্যাল ডিসটেন্সিং) কথাটা একদমই ভুল। শারীরিকভাবে আমরা দূরে আছি, কিন্তু সামাজিকভাবে আমার বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে এতটা যুক্ত আগে কখনোই ছিলাম না। এমন সব মানুষকেও আমি ফোন করছি, যাঁদের সঙ্গে গত কয়েক বছরেও কথা হয়নি। হঠাৎ মনে হলো, দেখি তো ওরা কেমন আছে! ব্যস, ফোন করে বসলাম।

আমার মনে হয় কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের এক করতে পারে, এমনকি অনেক হারানোর পরও। এখন বুঝতে পারি, জীবনে এমন অনেক কিছু পেয়েছি, ধরেই নিয়েছিলাম এ তো আমার পাওয়ারই কথা। কখনো এসবের জন্য কৃতজ্ঞ বোধ করিনি। যখন আবার সব ঠিক হয়ে যাবে, আশা করি কৃতজ্ঞতাবোধের এই অনুভূতি আমি ভুলে যাব না।

এতটা অনুপ্রেরণার অভাব, সৃজনশীলতার অভাবে আগে কখনো ভুগিনি—কিন্তু ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’। এ কথা যেমন আমাদের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য আমাদের কাছের মানুষদের প্রতি ভালোবাসার ক্ষেত্রেও। যত বিপত্তিই আসুক, যাঁদের আপনি ভালোবাসেন, তাঁদের দেখভাল আপনাকে করতেই হবে। যখন অন্য সব ব্যর্থ হয়ে যাবে, তখনো একটা বুক ভরে নেওয়া দম, বন্ধুদের সঙ্গে একটু হাসাহাসি, কিংবা একসঙ্গে কিছু খাওয়ার আনন্দকে অবমূল্যায়ন করবেন না।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ