ছেলে মাসিকের কথাও জানে

মা ফেরদৌসী আবেদীন ও ছেলে স্বর্গ কল্পক ঋভু।  ছবি: সংগৃহীত
মা ফেরদৌসী আবেদীন ও ছেলে স্বর্গ কল্পক ঋভু। ছবি: সংগৃহীত

আমরা চার বোন। ফলে জানা ছিল না, ছেলেরা কী চায়, তাদের কেমন চাহিদা থাকে… ইত্যাদি ইত্যাদি। কাছ থেকে ছেলে বলতে আব্বাকে দেখেছি, যে কিনা সারা দিনে পাঁচ-ছয়টির বেশি বাক্য বলতেন না। অন্যদিকে আট ভাই দুই বোনের মধ্যে আমার স্বামী জাহিদ হোসেন সবার ছোট। স্বামীর বেশির ভাগ ভাইয়েরা মিলে একই বিল্ডিংয়ে থাকায় বাসায় বাচ্চাকাচ্চা অনেক ছিল। সাতটি মেয়ে ও দুইটি মাত্র ছেলে। আমার ছেলে স্বর্গ কল্পক ঋভু তার ভাইবোনদের নিয়ে হাঁড়ি-পাতিল খেলত, আবার ক্রিকেট-ফুটবলও খেলত। মিলাদের সময় বোনেরা মাথায় কাপড় দিলে আমার ছেলেও বোনদের দেখাদেখি মাথায় কাপড় দিত। আমার মনে হয়নি, বিষয়টি মানা করার প্রয়োজন আছে।

আমি এবং আমার স্বামী দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করছি। আমি ঘরে বসে কাপড় গোছাচ্ছি…আমার ছেলে হয়তো সামনে আছে...ওর বাবার আন্ডারওয়্যার গেঞ্জি এবং আমার ব্রা সব কাপড়ের সঙ্গে রয়েছে, ও সামনে আছে বলে আমার ব্রাটা লুকানোর চেষ্টা করতাম না। ছেলেরা যেমন মূল কাপড়ের নিচে স্যান্ডো গেঞ্জি পরে, মেয়েরা তেমন ব্রা পরে, এটাতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই।

আমার ভাশুরেরা সবাই কমবেশি রান্নাঘরে যান। ফলে রান্নাঘরের কাজটা মেয়েদের কাজ—এই ধারণা নিয়ে আমার ছেলে বড় হবে না, এটা আমি নিশ্চিত ছিলাম।

ছেলের স্বাস্থ্য ছোটবেলা থেকেই ভালো। শক্তিও বেশি। আমি বারবার মারামারি থেকে দূরে থাকতে বলেছি। নানা রকম পরিস্থিতিতে কীভাবে এর থেকে দূরে থাকতে হবে, সময়ে সময়ে তা ব্যাখ্যা করে বলেছি। এখন ও চাইলেও কারও গায়ে হাত তুলতে পারে না।

একদিন ছেলে খুব হাসতে হাসতে রাতে গল্প করছে ওর স্কুলের ঘটনা। ওর ক্লাসের এক বন্ধুর জামার পেছনে রক্ত দেখেছে। আমি ওর পুরো গল্পটা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। এরপর পিরিয়ড বা মাসিক নিয়ে যতটুকু ওর বয়স অনুযায়ী বুঝিয়ে বলা যায়, ওকে বলেছি। পিরিয়ড আমারও হয়, ওর বোনদেরও হয়, এবং সব মেয়েরই হয়। ছেলে এখন জানে, মাসিক হলে স্যানিটারি প্যাড কিনতে হয়, এ সময় মায়ের পেটে ব্যথা হয়, মাঝেমধ্যে বিছানার চাদরে রক্ত লেগে যায়। এটা অস্বাভাবিক কিছু না, জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ।

ছেলের কোনো আচরণ নিয়ে সমস্যায় পড়লে একটা কথা প্রায়ই শুনেছি এবং এখনো শুনি, ‘ও ছেলে তো তাই এমন করে… আমার কাছে তা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এখনো মনে হয় না।