কেরালার রকস্টার 'শৈলজা টিচার'

কে কে শৈলজা।
কে কে শৈলজা।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি। পত্রিকায় চীনের উহানে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের খবর পড়ছিলেন কে কে শৈলজা। মন্ত্রণালয়ের এক চিকিৎসক সহকর্মীকে মন্ত্রী শৈলজা ফোনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ ভাইরাস কি এখানেও আসতে পারে?’ সহকর্মীর উত্তর ছিল, ‘অবশ্যই, ম্যাডাম।’ ব্যস, আর দেরি করলেন না দক্ষিণ ভারতের ছোট রাজ্য কেরালার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী কে কে শৈলজা। শুরু হলো করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি। ৩১ জানুয়ারি এ রাজ্যে প্রথম কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। সর্বশেষ ২৫ জুনের হিসাব অনুযায়ী মোট শনাক্ত ৩ হাজার ৬০৪। মৃত্যু ৩২। প্রায় ৩৯ হাজার বর্গকিলোমিটারের রাজ্যে জনসংখ্যা ৩ কোটি ৩৩ লাখের বেশি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৬০।

শুধু ভারত না, সারা বিশ্বে কেরালা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একটি মডেল হয়ে উঠেছে। আর একটি নাম সেই সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে, কে কে শৈলজা। যিনি ‘শৈলজা টিচার’ নামে বেশি পরিচিত। শিক্ষকতা দিয়ে চাকরিজীবনের শুরু, তাই এটি লেপ্টে আছে এখনো। এই টিচারকে এবার সম্মানিত করল জাতিসংঘ। ২৩ জুন ছিল জাতিসংঘ জনপরিষেবা দিবস। সেখানে মূল প্যানেল আলোচনায় ডাক পেয়েছিলেন তিনি। পরে শৈলজা টুইট করেছেন, ‘এই প্যানেলে থাকতে পেরে গৌরব বোধ করছি। জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানসহ অনেকেই ছিলেন। করোনার বিরুদ্ধে বর্তমান প্রচেষ্টা নিয়ে আমাদের দারুণ আলোচনা হয়েছে।’

শৈলজার জন্ম ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে জড়িত এক পরিবারে। মাতামহী ছিলেন অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের যোদ্ধা। শৈলজা কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সিস্ট-সিপিএম) সঙ্গে জড়িত দীর্ঘকাল ধরে। বামপন্থী সরকারের কেরালা নানা দিক থেকেই মডেল। বিভিন্ন অর্জনের সঙ্গে এবার যুক্ত হচ্ছে শৈলজার নাম। ভারতের এনডিটিভিকে গত এপ্রিলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শৈলজা বলেন, ২৩ জানুয়ারিই করোনা নিয়ে বৈঠক করেন। পরদিন গঠিত হয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। রাজ্যের ১৪ জেলার সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে পৌঁছে গেলে জরুরি বার্তা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মেনেছেন অক্ষরে অক্ষরে। পরীক্ষা, চিহ্নিত করা, বিচ্ছিন্ন করা এবং সহায়তা—এ চারকেই মূল মন্ত্র হিসেবে নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিল রাজ্য সরকার। উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকা ব্যক্তির কোয়ারেন্টিন ২৪ দিন করা হয়, ১৪ দিনের জায়গায়। কেরালায় আটকে পড়া লক্ষাধিক শ্রমিককে ছয় সপ্তাহ ধরে তিন বেলা খাইয়েছে রাজ্য সরকার।

সূত্র: গার্ডিয়ান, এনডিটিভি, কোভিডইন্ডিয়া ডট ওআরজিকেরালার রকস্টার ‘শৈলজা টিচার’