সারাক্ষণই প্রমাণ করতে হয়...

সাদেকা হালিম, রাশেদা ইরশাদ নাসির, তাওহিদা জাহান, হাবিবা রহমান।  ছবি: সংগৃহীত
সাদেকা হালিম, রাশেদা ইরশাদ নাসির, তাওহিদা জাহান, হাবিবা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি বিভাগের মধ্যে মোট ৭টিতে চেয়ারপারসন হিসেবে প্রশাসনিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাতজন নারী শিক্ষক, যার অনুপাত ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। কলা অনুষদের ১৭টি বিভাগের মধ্যে ৬টিতে চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারী শিক্ষকেরা, যার অনুপাত ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। ১৩টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৪টিতে পরিচালক হিসেবে নেতৃত্বে রয়েছেন নারী শিক্ষক, যার অনুপাত ৩০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান অনুষদ, যেখানে একজন নারীও চেয়ারপারসনের দায়িত্বে নেই, অনুপাত শূন্য শতাংশ। চারুকলা, জীববিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে কয়েকজন নারী শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন।

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী ছিলেন শুধু একজন, লীলা নাগ। এরপর প্রায় এক শতাব্দী পেরিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীর হার ৩৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২ হাজার ২৫২, এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ৭১৫ (সূত্র: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড ভবন)।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ৭টি বিভাগের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ নাসির, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, নৃবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক ফারহানা বেগম, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক সানজিদা আখতার, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক তাওহিদা জাহান, ক্রিমিনোলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান এবং টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হাবিবা রহমান।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিভাগের কজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম নারী ডিন সাদেকা হালিম। তিনি দুই মেয়াদে শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে ডিন হিসেবে কর্মরত।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে কোনো নারী শিক্ষকের দেখা মেলেনি। এ প্রসঙ্গে সাদেকা হালিম বলেন, ‘উপাচার্য না হলেও আমাদের এখানে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদে অধ্যাপক নাসরীন আহমদ দুই মেয়াদে আট বছরের দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে শেষ করেছেন। নারীদের উত্তরণের জায়গাগুলো কণ্টকাকীর্ণ। পদে পদে হেনস্তার সম্মুখীন হতে হয়। অথচ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নকে গতিশীল করে। আশা করি, নীতিনির্ধারকেরা সেখানে দৃষ্টি দেবেন।’

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল অনুষদে ডে কেয়ার সেন্টার করব। প্রায় এক বছর হয়ে গেল ডে কেয়ার চালু হয়েছে। অনুষদ থেকে গবেষণাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। জার্নাল নিয়মিত করেছি এবং মানোন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নারী-পুরুষ সব সহকর্মীরই আমাকে সহায়তা করছেন। আমি মনে করি, নারীর জন্য স্পেস আরও বাড়ানো দরকার।’

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন রাশেদা ইরশাদ নাসির বলেন, ‘ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই এখানে মেয়েরা শিক্ষালাভের সুযোগ পায়। মেয়েরা লেখাপড়ায় ভালো করছে, ফলে তারা শিক্ষক হিসেবেও তুলনামূলক বিচারে আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়োগ পাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তারা প্রশাসনিক দায়িত্বেও চলে আসছে। প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন নতুন প্রজন্মের নারী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে।’

কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপারসন সহকারী অধ্যাপক তাওহিদা জাহান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ৩৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে, এটা অবশ্যই আশার কথা। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন বেশি জরুরি।’

টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারপারসন সহকারী অধ্যাপক হাবিবা রহমান বলেন, ‘নারী পারিবারিকভাবেই ভালো ব্যবস্থাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিভাগে চেয়ারপারসন হিসেবে নারীরা দায়িত্বে আছেন, সেসব বিভাগের ওয়াশরুমগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রশাসনিক পদে বসে আমাদের সারাক্ষণ প্রমাণ করতে হয়, আমি কাজটি ঠিকভাবে করছি। এ জন্য বাড়তি চাপ
নিতে হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা নারীরা বলছেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ বছরের পথচলায় কিছু ঐতিহ্য রেখে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রা। তাঁরা বলছেন, নারী শিক্ষকেরা ফল প্রকাশ ও একাডেমিক কাজে সঠিকভাবে নজর দেন। সময় মেনে ঠিকভাবে কাজ শেষ করেন। নারীকে মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিকে মূল্যায়নের সুযোগ এসেছে। সেই মূল্যায়নের পথ ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক ও ছাত্রীরা এগিয়ে যাচ্ছেন।