সাইবার সুরক্ষায় রেজওয়ানা

রেজওয়ানা খান।  ছবি: সংগৃহীত
রেজওয়ানা খান। ছবি: সংগৃহীত

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি দুনিয়া বদলে দিয়েছে। লকডাউনে অনেকেই ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করছেন। এ সুযোগটাই নিতে পারে সাইবার দুর্বৃত্তরা। তাদের প্রধান লক্ষ্য হতে পারেন নারীরা। প্রতিষ্ঠান পর্যায়েও হতে পারে বড় ধরনের সাইবার আক্রমণ। এ জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা ও সচেতনতা। এ দুটি বিষয় নিয়েই কাজ করছেন প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতের উদ্যোক্তা রেজওয়ানা খান।

সম্প্রতি কথা হয় নারী উদ্যোক্তা রেজওয়ানা খানের সঙ্গে। স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সাইবার খাতে সচেতনতার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়ে নিরাপত্তার জন্য ডিভাইস ও সেবা চালু করেছেন তিনি। বললেন, এখন মেয়ে ও নারীদের ডিভাইস ও অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অনলাইনে নিপীড়ন ও হ্যাকিংয়ের শিকারও হয় বেশি। অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা সচেতনতা না থাকা ও নিরাপত্তাকৌশলগুলো প্রয়োগের অভাবে নারীরা বিপদে পড়েন।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৭ বছরের পথচলা রেজওয়ানার। রাজধানীর পান্থপথে তাঁর অফিস। রেজওয়ানা বললেন, একজন নারী হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ করে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার খাতে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন। যাত্রাপথে পেয়েছেন বাবা, স্বামীসহ সবার সহযোগিতা। নারী হিসেবে এ খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে বাবার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি ই-গভর্ন্যান্স, এন্টারপ্রাইজ, এইচআর, ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছেন। মূলত বাবাকে দেখেই এ খাতে যুক্ত হন তিনি।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স (সিএসই) ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে সফটওয়্যার সিস্টেম ডিগ্রি নিয়েছেন রেজওয়ানা। দ্য ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড থেকে ইমপাওয়ার উইমেন থ্রট এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড বিজনেসে ফেলোশিপ অর্জন করেন। বাবা আলী আকবর খানের প্রতিষ্ঠানেই তিনি ২০০২ সাল থেকে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে স্টার কম্পিউটারে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। এরপর বিজনেস অ্যান্ড সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৮ সালে লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয় স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস।

রেজওয়ানা জানালেন, দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানেও সফটওয়্যারসহ সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক সেবা দেয় তাঁর প্রতিষ্ঠান। তাঁর প্রতিষ্ঠান পরামর্শের পাশাপাশি ডিভাইস ও সফটওয়্যার বিষয়ক সেবা দেয়। কনসাল্টিংয়ে এন্টারপ্রাইজ লেভের সলিউশন দেয়। একটি প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তায় কয়েক ধাপের নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রয়োজন হয়।

রেজওয়ানা বলেন, ‘আমাদের দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও নিরাপত্তা দুর্বল। এ ক্ষেত্রটিতে কাজ করছে স্টার কম্পিউটার। ইতিমধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সেবা দিচ্ছে আমার প্রতিষ্ঠান।’

রেজওয়ানা খান জানান, তিনি বেসিস, বিসিএস, ইক্যাব, বিডব্লিউআইটিসহ নানামুখী বাণিজ্যিক সামাজিক সংগঠন জড়িত। স্বামী ও এক মেয়ে নিয়ে ছোট্ট সংসার তাঁর।

বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অনলাইন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রেখেছে রেজওয়ানা খানের প্রতিষ্ঠান। হাই অ্যান্ড ডিজাইন, ক্যাড, প্রোগ্রামিংয়ের কোর্সের জন্য স্টার কম্পিউটার সিস্টেমসের ওয়েবপেজে আবেদন করা যায়। শিগগিরই চালু হবে ক্লাউড ও সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ। তবে শুধু নারীদের জন্য প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলে জানান রেজওয়ানা।