'শুভ জন্মদিন সুচিত্রা সেন'

সুচিত্রা সেন
সুচিত্রা সেন

শুভ জন্মদিন সুচিত্রা সেন।
৬ এপ্রিল ছিল এই কিংবদন্তি মোহময়ী নায়িকার জন্মদিন। ১৯৩১ সালে তাঁর জন্ম। সুচিত্রার নাম কৃষ্ণা দাশগুপ্ত; বাড়িতে যাঁকে রমা নামে ডাকত সবাই। ১৯৫৩ সালে চিত্রজগতে অভিষেকের সময় পরিচালক নীতেশ রায় ‘সুচিত্রা’ নামটি রেখেছেন, এর সঙ্গে সে সময় যুক্ত হয়েছিল রমার শ্বশুরবাড়ির পদবি ‘সেন’।
কৃষ্ণা দাশগুপ্ত তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ গ্রহণ করেছেন পাবনা শহরের কালীমাতা (বর্তমানে পাবনা টাউন গার্লস হাইস্কুল) পাঠশালায়। এরপর নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন পাবনা গার্লস হাইস্কুলে (বর্তমানে পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়)। পাবনা শহরে রমার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত তাঁর পরিবার নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতেন। সেটি গোপালপুর মৌজার, বর্তমানে শহরের ঢাকা রোডে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এবং কমার্শিয়াল কলেজের উল্টোপাশে অবস্থিত। সে বাড়িতেই কৈশোর অবধি বেড়ে উঠেছেন এই নায়িকা। নিজের চলাফেরা, কথাবার্তা, ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলেছেন এই বাড়িতেই। এই বাড়ির সামনের উঠানে বান্ধবীদের নিয়ে খেলেছেন হা-ডু-ডু ও ব্যাডমিন্টন। এই বাড়িতে ঠাকুরদার মুখে রমা বোনদের নিয়ে শুনতেন রামায়ণ, মহাভারত।
এই বাড়ির দেয়ালে হাত বুলিয়ে গেলে মনে শিহরণ বয়ে যায়; মনে হয়, এই বাড়ির মেয়ে যিনি পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী, যাঁর ভুবনভোলানো মধুময় হাসি, ডাগর চোখের চাহনি, তিনি একসময় এখানেই কাটিয়েছেন তাঁর শৈশব-কৈশোর। করুণাময় দাশগুপ্তর পৈতৃক বাড়ি পাবনার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি গ্রামে। সেখানে রয়েছে বিশাল মন্দির, মন্দিরের সামনে ও পেছনে বিশালাকৃতির দুটি দিঘি রয়েছে। মন্দির-সংলগ্ন বিশালাকার একটি আমগাছ আছে, এই গাছটি চল্লিশ দশকের সাক্ষ্য বহন করছে। এই মন্দিরের সামনের ভগ্ন স্তম্ভ বিভিন্ন রঙের চাকচিক্য মোজাইক পাথরের আবরণে বেষ্টিত, সেটি জানিয়ে দিচ্ছে—সেই মন্দির প্রাঙ্গণের পুরোনো ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে।
তাঁর তৃতীয় শ্রেণীর মহাখালী পাঠশালার সেই ভবন এখন নেই, সেই পাঠশালা এখন বিশালাকার হাইস্কুল। এই হাইস্কুলে যখন প্রবেশ করি, তখন স্কুলের সময় প্রায় শেষ। শীতকালে সেখানে তখন চলছিল ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার অনুশীলন। হারমোনিয়াম, তবলার মূর্ছনা সংস্কৃতিমনা রমার নতুন প্রজন্ম বয়ে নিয়ে চলেছে। সুরের মূর্ছনা মনে শিহরণ জাগিয়েছিল এই ভেবে যে এই সুর যেন উত্তরফাল্গুনীর অভিনেত্রী সুচিত্রার। মনে হলো, আজ যার সুর শুনছি এই স্কুলে, সে হয়তো ভবিষ্যৎ কোনো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীর।
পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে যখন প্রবেশ করি, বিশাল বিদ্যালয়, বিশাল মাঠ। মাঠের তিন দিক ঘিরে আছে বিদ্যালয়ের দালান। চলছিল তখন পরীক্ষা। বিদ্যালয়ের এককোণে রয়েছে সুন্দর বাগান। মনে হলো, এই বিদ্যালয়ে পড়েই রমা নিজেকে মনোযোগী করে রুচিশীল চলাফেরার অধিকারিণী হয়ে জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
প্রভাত দেখে বোঝা যায় দিন কেমন যাবে। চারা দেখে বোঝা যায় গাছটি কতখানি সতেজ-সবল হতে পারে। ঠিক তেমনি একটি মানুষ সফলভাবে গড়ে উঠতে চাইলে তার জন্য শৈশব ও কৈশোর সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সুচিত্রা সেনের যে খ্যাতি, সে খ্যাতি পাবনার কিশোরী রমা দাশগুপ্তরই সফলভাবে বেড়ে ওঠার ফল। টালিউডের সুচিত্রা সেন তো আমাদের পদ্মাপারের মেয়ে!
লেখক: উপাধ্যক্ষ, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর।

সেই স্কুল
সেই স্কুল