আমারও প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ

অদিতি মহসিন, সংগীতশিল্পী
অদিতি মহসিন, সংগীতশিল্পী

গান গাইতে যেমনি ভালোবাসি, বই পড়তেও তেমনই। সময়-অসময় কেটে যায় বইয়ের পাতায় ডুবে থেকে। কত ধরনের, কত বিষয়ের বই যে পড়ি, বলে শেষ করা যাবে না।
আমি যখন অনেক ছোট, তখন দেখেছি মা প্রচুর শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই পড়তেন। মায়ের দেখাদেখি আমিও শরৎচন্দ্র দিয়েই সাহিত্যপাঠ শরু করি। তারপর যখন সাহিত্য ভালোবাসতে শুরু করলাম, তখন দুনিয়ার বিখ্যাত-অখ্যাত অনেক লেখকের লেখার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। বিভিন্ন ধরনের লেখনী পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। তবে, শরৎচন্দ্র পড়েই আমার অপাঠ্য বই পড়া শুরু, কথাটা আংশিক সত্য। কারণ, একেবারে ছোটবেলায় আমি প্রচুর শিশুসাহিত্যও পড়েছি। পড়েছি ছড়া, গল্প, রূপকথাসহ আরও নানা কিছু। ওই বয়সে যা ভালো লাগে আর কি! মনে আছে, কলকাতা থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকা বাড়িতে রাখা হতো। সেটারও কিছু কিছু পড়তাম তখন।

‘হুমায়ূন আহমেদের গদ্যের মুগ্ধ পাঠক আমি’
‘হুমায়ূন আহমেদের গদ্যের মুগ্ধ পাঠক আমি’

অনেকের মতো আমারও প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর লেখা উপন্যাস প্রথম পড়া শুরু করি ১৫ কি ১৬ বছর বয়সে। প্রথম পড়েছি কুহক বইটি। খুব ভালো লেগেছিল। সেই বয়সে এমনিতেই সবকিছু ভালো লাগে। তার ওপর হুমায়ূন আহমেদের গদ্য... একেবারে মুগ্ধ পাঠক হয়ে গিয়েছিলাম! তাঁর লেখা এতটাই ভালো লাগত যে কোথাও বেড়াতে গেলে বা বন্ধুদের কাছে হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের খোঁজ করতাম! অপেক্ষা করে থাকতাম, কবে নতুন বইটা বেরোবে!
বই পড়ায় সবচেয়ে আশ্চর্য ঘটনা হচ্ছে, এই যে এত বই পড়েছি সে সময়, তখনো কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পড়া হয়নি। একেবারে না, তা নয়। কারণ পাঠ্যবইয়ের ছড়া, কবিতা, গল্প পড়তেই হয়েছে। কিন্তু তার বাইরে আর কিছু না। অথচ কী আশ্চর্য, এখন দিন কাটে রবীন্দ্রনাথের গানে, সাহিত্যে, কবিতায়।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য পড়ার শুরু গান গাইতে গাইতে। শান্তিনিকেতনে গিয়েছি রবীন্দ্রসংগীতের ওপর পড়াশোনা করতে। তখন সত্যিকার অর্থেই পরিচয় হলো রবীন্দ্রনাথের লেখার সঙ্গে। লেখা মানে গান। প্রথম পড়েছি সঞ্চয়িতার কবিতাগুলো। তারপর গীতাঞ্জলির বিভিন্ন পর্যায়ের গানগুলো। ধীরে ধীরে যেন রবীন্দ্রনাথে বুঁদ হয়ে গেলাম। তারপর তাঁর লেখা অসংখ্য বই পড়েছি। পড়েছি তাঁর সাহিত্য নিয়ে অন্যদের লেখা। তাঁকে বুঝতে সেই লেখাগুলোও খুব সাহায্য করেছে।
আরও অনেকের লেখাই আমার বেশ প্রিয়। যেমন এই মুহূর্তে বলতে পারি শঙ্করের চতুরঙ্গ বইটির কথা। অসাধারণ! এ ছাড়া প্রিয় লেখকের তালিকায় রয়েছেন বুদ্ধদেব গুহ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আর সমরেশ মজুমদারও।
কিছুদিন আগে পড়েছি শৈলজারঞ্জন মজুমদারের যাত্রাপথে আনন্দগান। দারুণ লেগেছে। কোথায় যেন আমার শান্তিনিকেতনের স্মৃতিগুলোর সঙ্গে মিল পেলাম। যেন আমারই স্মৃতি নিয়ে লেখা। শান্তিনিকেতনে সবার স্মৃতিই বোধ হয় কাছাকাছি।
আগের মতো পড়ার সুযোগ হয় না। আগের সেই পাঠক এখন আর আমি নই। ব্যস্ততার কারণে পড়ার সময় পাই না, ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু-আধটু পড়ার সুযোগ হয়। সময়ের স্রোতে পড়ার বিষয়ও পাল্টে গেছে। আগে গল্প-উপন্যাস পড়তাম বেশি। হুমায়ূন আহমেদ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বার্নাড শ পড়তাম। এখন নিরীক্ষাধর্মী জার্নালগুলো বেশি আকৃষ্ট করে! তবে, প্রতিদিন কিছু না-কিছু পড়া হয় নিয়মিতই।
অনুলিখন: সুচিত্রা সরকার