গাছের ডালে রেস্তোরাঁ

রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মার পাড়ে গাছের ডালে রোস্তোরাঁ। ছবি: অন্য আলো
রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মার পাড়ে গাছের ডালে রোস্তোরাঁ। ছবি: অন্য আলো

রাজশাহীতে পদ্মার সেই হাওয়া এখনো বয়। একদিন রবীন্দ্রনাথের বোটে লেগেছিল। এখনো লাগে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের বাংলোয়। জেলার বহু পদস্থ কর্মকর্তার বাসভবন রয়েছে তাই পদ্মার ধারেই। হাওয়া এসে তাঁদেরও প্রাণ জুড়িয়ে দিয়ে যায়। তবে এখন সবার আগে সেই প্রাণ–শীতল করা বাতাস এসে লাগছে একটি রেস্তোরাঁয়। কারণ রেস্তোরাঁটি শূন্যের ওপরে, একটি গাছের ডালে। ভক্তরা যেমন প্রসাদ পেতে হাত পেতে থাকে, তেমনি গাছের ডালটি দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়ে রয়েছে। যেন পদ্মার হাওয়ার জন্যই হাত পেতে রয়েছে। রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় একেবারে পদ্মার পাড়ের একটি পাকুড়গাছের ডালেই এখন চলছে একটি রেস্তোরাঁ।
গত বছরের ২৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেস্তোরাঁর উদ্বোধন করা হয়। এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন বিজিবির রাজশাহী সেক্টরের তৎকালীন অধিনায়ক কর্নেল সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন পিএসসি ও তাঁর স্টাফ অফিসার মেজর আব্দুল হান্নান খান। বিজিবির ৩৭ ব্যাটালিয়ন এখানে সীমান্তে অবকাশ নামে একটি পার্ক তৈরি করেছে। এর ভেতরেই এই রেস্তোরাঁটি চলছে।
এক বছরেই এই রেস্তোরাঁ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল থেকেই এই পার্কে তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা শুরু হয়। বিকেলের পর থেকে সব বয়সী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে গাছের ডালের এই রেস্তোরাঁয় বসার কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। নিয়মকানুনের তালিকাটি সিঁড়ির কাছে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ এই রেস্তোরাঁয় ২৫ মিনিটের বেশি সময় বসে থাকতে পারবেন না। একই সঙ্গে দেওয়া রয়েছে রেস্তোরাঁর খাবারের মূল্যতালিকা।
এক বিকেলে রেস্তোরাঁয় দেখা মেলে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী রিপন মাহমুদের সঙ্গে। রিপন মাহমুদ বলেন, ‘কখনো মন খারাপ হলে এখানে এসে বসলে মন ভালো হয়ে যায়। পদ্মার নদী থেকে জলে ভেজা শীতল বাতাস এসে গায়ে লাগে। রেস্তোরাঁটিই যেন একটি প্রশস্ত দক্ষিণের জানালা।’
কথা হয় স্কুলশিক্ষিকা দুলারী খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে এই দিকে এলে তারা গাছের ডালের এই রেস্তোরাঁয় না উঠে ছাড়ে না। এমন একটা জায়গা তৈরি করে রেখেছে, বাচ্চারা দেখলেই ওঠার জন্য বায়না ধরে। ওদের জন্য তখন বাড়তি খাবারের বরাদ্দ দিতে হয়।’
সেখানে পাওয়া যায় নগরের কালুমিস্ত্রির মোড়ের বাসিন্দা আরাফাত রুবেল ও তাঁর স্ত্রী আলিয়া রূপিকে। ছেলে রাফসান আরাফাত ও মেয়ে ইবশার আরাফাতকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন এই দম্পতি। আলিয়া রূপি বলেন, ‘এখানে এসে দাঁড়ালেই পদ্মার শীতল হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সারা দিনের ক্লান্তি মুছে যায়। কিন্তু ওপরে গাছের ডালের রেস্তোরাঁয় উঠে বসলেই অন্যরকম এক অনুভূতি জাগে। এখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত পদ্মা নদী দেখা যায়। নদীর ওপারে ভারতীয় সীমান্তের অস্পষ্ট গাছপালা চোখে পড়ে। এসব দেখতে দেখতে এক বাটি ফুসকা কখন হাওয়া হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না।’
বিজিবির ৩৭ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মাসুদুজ্জামান খান বলেন, ‘আসলে রাজশাহীর মানুষের বেড়ানোর তেমন কোনো জায়গা নেই। তাদের সুস্থ বিনোদনের পিপাসা মেটানোর জন্যই বিজিবি সীমান্তে অবকাশ ও সীমান্তে নোঙর নামে দুটি পার্কের ব্যবস্থা করেছে। এখানে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে, সে তুলনায় এখান থেকে খুব সামান্যই আয় হয়।’ তিনি বলেন, ‘গাছের ডালের রেস্তোরাঁ না বলে ট্রি হাউস বললেই ভালো হয়। সেখানে মানুষ গিয়ে বসে। নিচ থেকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়।’