শিশুদের নাগালের বাইরে...

পোকা মাকড় তো ক্ষতিকরই, তবে এসব দূর করার ওষুধগুলোও হতে পারে মারাত্মক। বাড়িতে শিশু থাকলে তাই সাবধানে এসব ব্যবহার করুন। মডেল: টিয়ারা। ছবি: নকশা
পোকা মাকড় তো ক্ষতিকরই, তবে এসব দূর করার ওষুধগুলোও হতে পারে মারাত্মক। বাড়িতে শিশু থাকলে তাই সাবধানে এসব ব্যবহার করুন। মডেল: টিয়ারা। ছবি: নকশা

আমাদের বাসাবাড়িতে মশা. তেলাপোকা— কীটপতঙ্গের উপদ্রব তো থাকেই। সে কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, স্প্রে, চক—এসব ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমাদের বাসায় যে ছোট্ট শিশু আছে, সে যদি কখনো হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে কিংবা মেঝেতে পড়ে থাকা এসব কীটনাশক মুখে দিয়ে ফেলে, তবেই তো ঘটবে বিপত্তি! এ কারণে যেসব সতর্কতা মেনে চলা উচিত, তা জানিয়েছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহ ব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া।
l বাজারে আমরা সাধারণত কীটপতঙ্গ মারার যেসব স্প্রে কিনে থাকি, সেসব স্প্রের কৌটার গায়ে লেখা থাকে ‘বাচ্চাদের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন’। নিয়মটা বড়দের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
l বাচ্চারা ঘরে থাকা অবস্থায় কখনোই কীটনাশক স্প্রে করা উচিত নয়। তাদের ঘর থেকে বাইরে সরিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের চার কোনায় ওপরের দিকে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার ৫-১০ মিনিট পর দরজা-জানালা খুলে দিয়ে বাচ্চাদের ঘরে প্রবেশ করাতে হবে।
l মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট ব্যবহার করলেও দরজা-জানালা বন্ধ করে বাচ্চাদের সরিয়ে তারপর করতে হবে। তারপর দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে।

l মশা মারার ব্যাট দিয়ে অনেক সময় বাচ্চারা দুষ্টুমি করে। তা থেকে বিপদ ঘটতে পারে। তাই অবশ্যই ব্যাটটি এমন স্থানে রাখতে হবে, যেন বাচ্চারা এটা দিয়ে খেলা না করতে পারে।

l মেঝেতে আমরা অনেক সময় ইঁদুর কিংবা তেলাপোকা মারার জন্য কীটনাশক বা গুটি দিয়ে থাকি; বাচ্চারা হামাগুড়ি দিয়ে এসব জায়গায় গিয়ে ওষুধ হাতে নিয়ে মুখে দিয়ে ফেলতে পারে। তাই অত্যন্ত সতর্কভাবে রাতে এসব কীটনাশক মেঝেতে দিয়ে সকালে বাচ্চারা ঘুম থেকে ওঠার আগেই তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলতে হবে এবং মেঝেটা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। কীটনাশক যদি শক্ত কাগজে করে দেওয়া হয়, তবে সেই কাগজও ফেলে দিন।

l অনেক সময় আমরা মেঝেতে চক ব্যবহার করে থাকি তেলাপোকা কিংবা ইঁদুর মারার জন্য। যে স্থানে চক দেওয়া হবে, ভোরে মেঝের সেসব স্থান ভালো করে ক্লিনার দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।

l অনেক সময় তরল কীটনাশক বাজার থেকে কিনে এনে বিভিন্ন ধরনের বোতলে, ঢেলে রাখা হয়। বাচ্চারা সেসব না বুঝে মুখে দিতে পারে। তাই বোতলগুলো শিশুর হাতের নাগালের বাইরে রাখতে হবে এবং অবশ্যই বোতলের ওপর ‘বিষ’ লেখা লেবেল দিতে হবে।

কীটপতঙ্গের সংক্রমণে

মডেল: টিয়ারা। ছবি: নকশা
মডেল: টিয়ারা। ছবি: নকশা

সাধারণত কীটপতঙ্গের সংক্রমণে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের অসুখ হতে পারে। আবার এসব কীটপতঙ্গ মারার জন্য যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তা থেকেও বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ হতে পারে—এমনটা বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক (শিশু বিভাগ) মাহবুব মোতানাব্বি। এ ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ হলো:
l ঘরের কোনায় মৃত কীটপতঙ্গের যে অঙ্গগুলো পড়ে থাকে, সেগুলো থেকে বাচ্চাদের পেটের পীড়া হতে পারে। তাই এসব পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

মডেল: টিয়ারা। ছবি: নকশা
মডেল: টিয়ারা। ছবি: নকশা

l খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে, যেন কীটপতঙ্গ খাবারের ওপর হাঁটতে না পারে।
l অনেক সময় পিঁপড়া দমনের জন্য যেসব গুঁড়া ব্যবহার করা হয়, তাতে ডিডিটি থাকে। বাচ্চারা না বুঝে যদি এসব গুঁড়া ওষুধ মুখে দিয়ে ফেলে, তাহলে ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে, ছোট বাচ্চাদের জন্য এটা অত্যন্ত মারাত্মক।
l মশা মারার জন্য পাউডার বা স্প্রে কোনোটাই ব্যবহার না করে নেট ব্যবহার করা ভালো। ঘরের যেসব জায়গা দিয়ে মশা ঢুকতে পারে, সেসব জায়গায় নেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
l ঘরদোর সব সময় পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, যেন পোকামাকড়ের জন্ম না হয়।
l বহুতল ভবনের সিঁড়ি বা বারান্দার কোনো জায়গায় অব্যবহূত জিনিস, উচ্ছিষ্ট ময়লা কিংবা পানি যেন জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
l মশা মারার জন্য ঘরে কয়েল ব্যবহার না করাই ভালো। যদিও করেন, তবে বাচ্চাদের জন্য আলাদা মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তা না হলে যেসব বাচ্চার হাঁপানির সমস্যা আছে, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
l যেকোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে তা ব্যবহারের পর পর পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
বিশেষ করে মেঝে পরিষ্কারের সময় মাঝেমধ্যে পানিতে তরল জীবাণুনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।