ফেসবুক ঘুম এবং

ঈদের ছুটি। অনেকেরই সময় কেটেছে ফেসবুকে। কখনো মুঠোফোনের আড্ডায়, কখনো বা ঘুমিয়েই দিন কাবার। মডেল: রবিন। ছবি: সৈকত ভদ্র
ঈদের ছুটি। অনেকেরই সময় কেটেছে ফেসবুকে। কখনো মুঠোফোনের আড্ডায়, কখনো বা ঘুমিয়েই দিন কাবার। মডেল: রবিন। ছবি: সৈকত ভদ্র

‘কী কী করলেন এবার ঈদের ছুটিতে?’—তরুণদের কাছে এই ছিল প্রশ্ন। একেকজনের একেক রকম গল্প। কেউ ‘টা টা গুডবাই’ জানিয়ে ঢাকা থেকে গ্রাম ঘুরে এসেছেন, কারও সময় কেটেছে দলে দলে হলে গিয়ে সিনেমা দেখে, কেউবা স্রেফ ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। তবে অন্য রকম উত্তর পাওয়া গেল মালিবাগের জাহিদুল ইসলামের কাছে। গম্ভীর মুখে বললেন, ‘পরিকল্পনা করলাম।’ আমাদের বিভ্রান্ত দৃষ্টি একনজর দেখে নিয়ে জাহিদুল ঝেড়ে কাশলেন, ‘আর বলবেন না, ঈদের তিন দিন ধরে আমরা শুধু পরিকল্পনাই করছি। ঈদের আগে ঠিক হলো এবার ছুটিতে বান্দরবান যাব। ঈদের দিন দেখি কারও তেমন গরজ নেই। তারপর আবার ঠিক করলাম সবাই মিলে সিনেমা দেখব। সেটাও হলো না। ছুটি শেষ, এখনো আমরা এলাকার চায়ের দোকানের গণ্ডিই পেরোতে পারিনি। সবাই অলস।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাদ বিন ইসলাম ও তাঁর বন্ধুদের কাণ্ডকীর্তি শুনলে বোধ হয় জাহিদুলের ‘অলস’ বন্ধুদের হিংসাই হবে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন মুঠোফোনে কথা হলো সাদের সঙ্গে। ফোনের এপ্রান্ত থেকেই শোনা যাচ্ছিল হই-হুল্লোড়। গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছেন তিনি। ‘ল্যাবরেটরি স্কুলে আমরা সাত বন্ধু একসঙ্গে ছিলাম। অনেক দিন পর সবাই মিলে বের হয়েছি’ তাঁর এই একটা কথাই পুরোটা বোঝা গেল, বাকিগুলো চাপা পড়ে গেল চিৎকার-চেঁচামেচির তোড়ে।
পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে তো কথাই নেই; জায়গাটা কক্সবাজার কিংবা কারওয়ান বাজার—যা-ই হোক, মজা জমবেই। অনেকে আবার পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়ির ঈদও দারুণ উপভোগ করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তাসনিম আক্তারের ভাষ্যমতে, ‘কাজিনদের সঙ্গে দারুণ সময় কেটেছে।’ পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর গিয়েছিলেন। বলেন, ‘গ্রামে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে আমার বয়সী কেউ নেই। চাচাতো ভাইবোনেরা সব হয় অনেক বড়, নয়তো একেবারে কোলের বাবু। তবু ভালো লেগেছে।’
অনেকের ঈদের ছুটির পুরোটা সময় কেটেছে বোকা বাক্সের সঙ্গে। টিভি চ্যানেলগুলোর ‘বিশেষ অনুষ্ঠান’ দেখতে বসে ‘অশেষ বিজ্ঞাপনে’ অতিষ্ঠ হলেও, সময়টা উপভোগ করেছেন তাঁরা।
ধানমন্ডির ইশরাত জাহান বলছিলেন, ‘আমি তো রুটিন করে বসেছি! এক চ্যানেলের নাটক শেষ হলেই আরেক চ্যানেলের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান। মাঝরাত পর্যন্ত সরাসরি গানের অনুষ্ঠানগুলোও দেখেছি। আব্বু কয়েকবার বকাঝকা করেছেন। আমার দলে আম্মু আছেন, তাই সাহস পাচ্ছি। হা হা হা!’
ফাঁকা রাস্তার সুযোগে আত্মীয়স্বজনের বাসায় ঢুঁ দিচ্ছেন অনেক তরুণ। মামা, চাচা, ভাইবোনদের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দ তো আছেই, সঙ্গে টুকটাক সালামি পাওয়ার আনন্দটাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না! শুধু সালামি পেয়েই নয়, সালামি দিয়েও আনন্দিত কেউ কেউ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত আহমেদ ফয়সালের ফেসবুক স্ট্যাটাস এমনটাই বলছে। হাসিমুখের ‘ইমোটিকন’ যুক্ত করে তিনি লিখেছেন, ‘দাদুবাড়ি গিয়েছিলাম। জীবনে এই প্রথম সালামি দিলাম। ফিলিং সো হ্যাপি!’ বোঝাই যাচ্ছে, তাঁর ছুটির অনেকটা অংশ কেটেছে ফেসবুকে। আর তরুণদের তো আছে মুঠোফোন। ছবি তোলা, গান শোনা—সবই চলেছে তাঁদের এই ছুটিতে।
অল্প কয়টা দিনের ছুটি। দেখতে দেখতেই কেটে গেল। আবার শুরু হলো ব্যস্ততা, কাজের চাপ, সকাল-সন্ধ্যা ছোটাছুটি—সে কথা ভেবে কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাস লুকাতে পারলেন না।