আজ আমাদের ছুটি

আবার আসছে ছুটি, আসছে ঈদ। ছুটিতে কী করেন মেধাবীরা? ছুটি কীভাবে প্রভাব ফেলে তাঁদের জীবনে? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ফলাফল করা আট মেধাবীর কথায় উঠে এসেছে ছুটি নিয়ে তাঁদের ভাবনা, তাঁদের অভিজ্ঞতা।
শার্লিন মনজুর
শার্লিন মনজুর

ছুটি পেলেই দে ছুট
বাঙালি ঘরকুনো বলে যে অপবাদ আছে আমার বেলায় তা খাটবে না। কারণ, পরিবারের লোকজন তো বটেই, বন্ধু-স্বজনেরাও জানে আমার পায়ের তলায় শর্ষে আছে। তাই একটু ছুটি-ছাটা পেলেই হলো‍-ওমনি দে ছুট! গত ঈদের ছুটিতে গিয়েছিলাম সিলেটের জাফলং আর লালাখালে। দেশের দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘুরতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই ঈদের ছুটি, পুজোর ছুটি, বা শীতকালীন ছুটি, গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ক্যাম্পাস বন্ধ হলেই বন্ধুদের সঙ্গে বেড়িয়ে পড়তাম; আবার কখনো মা-বাবার সঙ্গে। ছোটবেলায় অবশ্য ছুটির সময়গুলোতে নাচ-গানের চর্চা করতাম, বিতর্ক চর্চা করতাম।
শিক্ষাজীবনে লম্বা ছুটি তো সব সময় মেলে না। তখন স্বল্প সময়ের ছুটিগুলো বন্ধুদের সঙ্গে স্রেফ আড্ডা দিয়েই কাটাতে হয়। আড্ডা দিই মা-বাবার সঙ্গেও। তাঁরাই যে এ জগতে আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। ছুটির সময় মার সঙ্গে ব্যাডমিন্টন না খেললে মনে হয়, কী যেন করা হয়নি।
শার্লিন মনজুর

বিভাগে প্রথম। ফল: সিজিপিএ ৪, বিএসএস সম্মান ২০১৫

অর্থনীতি বিভাগ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

আবিদ হাসান
আবিদ হাসান

মনে প্রাণে ছুটির হাওয়া
আমার ক্যাম্পাস ময়মনসিংহে আর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জে আমার ছোটবেলার অনেক বন্ধু আছে। স্কুলে যাদের সঙ্গে পড়তাম, গ্রামে গেলে সেই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গ ভীষণ উপভোগ করি। আমার এক বন্ধু আছে, ছুটি পেলেই বড়শি নিয়ে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়ে। আরেক বন্ধু আছে, সে বনে-জঙ্গলে গাছ-ফুল আর পাখির ছবি তোলে। তাদের সঙ্গে সঙ্গ দিতে হবে তো। আমার একটা প্রিয় শখ মুভি দেখা। গ্রামে গেলে প্রিয় মুভি নিয়েও বন্ধুদের সঙ্গে বিরাট বাতচিত হবে। তাই ঈদের ছুটিতে অবধারিতভাবে আমাকে গ্রামে যেতেই হবে। সেখানে আমার মা-বাবা থাকেন। তাদের ছাড়া ঈদ কল্পনাই করতে পারি না।
আবিদ হাসান
বিভাগে প্রথম। ফল: সিজিপিএ ৪, এমএস ২০১৪
ডেইরি সায়েন্স বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় 

আহসানুজ্জামান
আহসানুজ্জামান

গ্রাম ডাকছে আমায়
আমার স্কুল-কলেজ যেহেতু ঢাকায়, তাই ছুটি পেলে সব সময় মুখিয়ে থাকি গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য। বেশির ভাগ সময় ঈদ কাটাই গ্রামের বাড়ি শেরপুরে। ছোটবেলায় ঈদের সময়টা ছিল দারুণ। এখন একটু বড় হয়ে গেছি, পড়াশোনার ব্যস্ততা বাড়লেও ঈদের আনন্দ রয়েছে একই রকম। সারা বছরের শহরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে গ্রামে তিন-চার দিন কাটিয়ে আসা নিজের মধ্যে দারুণ উদ্দীপনা আনে। এবারের ঈদের সময়টায় আমার মাস্টার্সের গবেষণাপত্রের কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ততা আছে। তবুও, ঈদে গ্রামের বাড়ি যাব, গ্রামের মায়ার মধ্যে ঈদের সময়টা দারুণ লাগে।
আহসানুজ্জামান
বিভাগে প্রথম। ফল: ৩.৯৭, বিএসসি সম্মান ২০১৪
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রুবাইয়া রুম্মান
রুবাইয়া রুম্মান

ছুটি মানেই আনন্দ
ছুটি! রোজার ঈদই তো শিক্ষার্থীদের কাছে বড় ছুটি হয়ে আসে। ছোটবেলায় বন্ধুদের মুখে শুনতাম ঈদের ছুটি নাকি তাদের বোরিং কাটে, ঈদ হচ্ছে ঘুমিয়ে কাটানোর একটি দিন! আর আমার জন্য সব সময়ই ঈদ ছিল একরাশ আনন্দের নাম। ঈদের ব্যাপারে এখনো আমি সেই ছোট্টটি-ই আছি, সেই একই উত্তেজনা কাজ করে এখনো! আমার বাসার পাশেই আমার তিন ফুফুর বাসা। ফুফাতো ভাইবোন ও পাড়ার অসংখ্য বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমি বড় হয়েছি জমজমাট পরিবেশে। ঈদের আগের দিন থেকে শুরু হতো ঈদ উদ্‌যাপন। দলবেঁধে আব্বুর সঙ্গে ছাদে উঠতাম ঈদের চাঁদ দেখতে। ভালো মেহেদি দিতে পারার সুবাদে পাড়ার এ মাথা থেকে ও মাথা সবার হাতে মেহেদি দিতে যেতাম। ঈদের দিন ভোরবেলা নতুন জামা (খুব সাবধানে যেটা এত দিন বন্ধুদের থেকে লুকিয়ে রাখতাম!) পরে ছোট ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে সবাই মিলে বের হতাম ঈদি সংগ্রহে। সবাইকে সালাম করে পেট ভর্তি করে খেয়ে ব্যাগ ভর্তি ঈদি নিয়ে বাসায় ফিরতাম। ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর ঘোরাঘুরিতে কেটে যেত ঈদ। এবার চাকরিজীবনের প্রথম ঈদ। আত্মীয়স্বজনদের জন্য টুকিটাকি গিফট কেনা দিয়ে ঈদের মাস খানেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে ঈদের খুশি! ঈদের দিনটি প্রতিবারের মতো এবারও খুবই মজার কাটবে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে।

রুবাইয়া রুম্মান,

বিভাগে প্রথম। ফল: সিজিপিএ ৩.৯৯, পুরকৌশল বিভাগ,

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

উর্মিতা দত্ত
উর্মিতা দত্ত

ডাক্তারের আবার ছুটি!
ছোটবেলায় স্কুল ছুটি হলেই আমরা দলবেঁধে গাইতাম ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি/ আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি।’ শেষ কবে যে গানটা গেয়েছি মনে নেই। কারণ, এ জীবনে ছুটি মেলা ভার! মেডিকেল কলেজের জীবন মানেই চৌপর দিনভর শুধু পড়ালেখা। তারপর আমার আবার সাধ জেগেছে সার্জারিতে ক্যারিয়ার গড়ার। ফলে পরিশ্রম ও সাধনা দুটোই করতে হচ্ছে বেশি। তাই বলে জীবনটাকে একেবারে যন্ত্র বানিয়ে ফেলার পক্ষপাতী আমি নই। তাই যখনই একটু-আধটু ছুটির ফুসরত পাই, উপভোগ করি সময়টাকে। আমার পছন্দের কাজের তালিকার প্রথমেই আছে বই পড়া। এরপর ছুটির সময় কাটাই মুভি দেখে। সর্বশেষ দেখেছি, গয়নার বাক্স। এ ছাড়া মাকে রান্নায় সাহায্য করি কোনো কোনো ছুটির দিনে। আর প্রতিটি ছুটির সময় যে কাজটি অবশ্যই করি সেটা হচ্ছে ‍ফুলের বাগানের যত্ন-আত্তি করা। আমার বারান্দায় ছোট্ট একটা বাগান আছে। সেখানে গোলাপ, বেলি, অপরাজিতাসহ নানা ধরনের ফুলের গাছ আছে। আমি নিজেই যত্ন করি এসব গাছের।
উর্মিতা দত্ত
তিনটি পেশাগত পরীক্ষাতেই প্রথম,
এমবিবিএস ২০১৫
ঢাকা মেডিকেল কলেজ

সাহরিয়ার রহমান
সাহরিয়ার রহমান

ছুটি মানেই শৈশবে ফিরে যাওয়া
ছুটির দিনগুলো তো কাটে গান শুনে আর ছবি দেখে। তবে বেশি দিনের ছুটি পেলে খণ্ডকালীন গল্প লেখক হয়ে ওঠা তো আমার ছোটবেলার অভ্যাস। আমার অবসরের সঙ্গী হ‌ুমায়ূন আহমেদের বই। তবে ঈদের ছুটিতে এই রুটিনের কিছুটা হেরফের হয়। আমার গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায়। বাড়িতে গেলে ঈদের সময়ই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়, আড্ডা হয়। ঈদের ছুটিতে শৈশবের আনন্দ ফিরে আসে। নিজেরা কয়েকজন উদ্যোগী হয়ে গ্রামের অসহায়দের মানুষদের সাধ্যমতো কাপড় ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করি। দরিদ্র মানুষদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। এবারও সে কাজে ব্যত্যয় হবে না।
সাহরিয়ার রহমান
বিভাগে প্রথম। ফল: স্নাতক ৩.৭৩, স্নাতকোত্তর ৩.৭৩ (এমএসএস ২০১৪)
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

জুয়েল মিয়া
জুয়েল মিয়া

অন্য রকম ছুটি
আপনজনদের সঙ্গে একান্তে কিছুদিন কাটানোর সময় হচ্ছে ঈদের ছুটি। ছোটবেলায় তো আঙুল গুনে গুনে হিসাব করতাম কবে রোজা শেষ হবে, কবে ঈদ আসবে। সারা বিকেল বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে মজা করে তারপর বাসায় ফিরতাম। এখন ঈদের আগের রাতে চলে বন্ধুদের সঙ্গে ফেসবুকে, মুঠোফোনে খুদে বার্তা দেওয়া। এবারের ঈদটি আমার কাছে একটু বেশি আনন্দের। এর কারণ হলো অন্য ঈদে আমি সবার কাছ থেকে জামা-কাপড় পেতাম অথবা গিফট প্রত্যাশা করতাম কিন্তু এবার আমি সবার প্রত্যাশার পাত্র। দুই মাস হলো আমি ছাত্রজীবন শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছি। পরিবারের সবার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে পেরে আমারও অনেক আনন্দ লাগছে।
জুয়েল মিয়া
বিভাগে প্রথম। বিবিএ ৩.৯৪, এমবিএ (২০১৪) ৩.৯৮
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মাহমুদা আখতার
মাহমুদা আখতার

বই পড়তে নেই মানা
ছুটি পেলে মানুষ ঘর থেকে বের হয় আর আমি ঢুকে পড়ি ঘরে। ঘুরে বেড়ানো আমার একদম ধাতে নেই। এর চেয়ে ঘরে বসে বই পড়া আর গান শোনাতেই আমার আনন্দ। আমার আশৈশব স্বপ্ন শিক্ষক হওয়ার, তাই আমি প্রচুর বই পড়ি। সব ধরনের বই। আগে গল্প-উপন্যাস বেশি পড়া হতো। এখন অবশ্য পাঠ্যবইয়ে সময় বেশি যায়। সমরেশ আমার প্রিয় লেখক। সেই কবে কোন কৈশোরে পড়েছিলাম সাতকাহন, তখনই মাথায় ঢুতে গেছে দীপাবলি। আজও নামেনি। কী ছুটি কী অবসর, সাতকাহন আমার সঙ্গী। আজও আমি স্বপ্ন দেখি দীপাবলি হওয়ার। আমি তার মতো স্বাধীনচেতা হতে চাই।
পড়ার পাশাপাশি আমার ছুটি আর অবসর কাটে গান শুনে। প্রধানত রবীন্দ্রসংগীত। আমার আনন্দের উপলক্ষ যেমন রবীন্দ্রনাথ, দুঃখ পেলেও ডুব দিই রবীন্দ্রসংগীতে।
মাহমুদা আখতার
বিভাগে প্রথম। ফল: ৩.৪৩ (বিএসএস সম্মান ২০১৪)
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়