হলুদ হিমু নীল রুপা

হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

১৩ নভেম্বর মধ্যরাতের প্রথম প্রহর। গোটা নুহাশপল্লী তখন মোমবাতির আলোয় আলোকিত। আর জোছনা ছড়ানো কার্তিকের চাঁদ যেন স্থির সে রাতে। হিমু-রুপারা ধীর পায়ে হাজির প্রিয় লেখকের সমাধির সামনে, জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের এক হাতে প্রজ্বলিত মোমবাতি আর অন্য হাতে ফুল।

কিন্তু জন্মদিনের উৎসব ক্ষণিকেই ঢাকা পড়ে শোকের চাদরে। একটু আগেই যে প্রিয় লেখকের জন্মদিনের কেক কেটে উল্লাস করা হলো—সমাধিতে এসে তা যেন হারিয়ে গেল শোকের আস্তরণে। হিমুদের আবেগ থাকতে নেই, তবু আজ হিমুদের চোখে জল।

সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর বৃষ্টিবিলাসে রাতভর চলে গানের জলসা। শীতের কুয়াশায় মোড়া সে রাত যেন জীবন্ত করেছিল হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি সব চরিত্রকে। এভাবেই সারা রাত কেটে যায় হিমু-রুপাদের দলটির। সকালে লীলাবতী দিঘির ছোট দ্বীপটায় রোপণ করা হয় লেখকের প্রিয় কদমগাছ। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে এমনই আয়োজন ছিল হিমু পরিবহনের।

হিমু পরিবহন ফেসবুকভিত্তিক হুমায়ূন-ভক্ত তরুণদের দল। হিমু পরিবহনের যাত্রা শুরুর কথা বলেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হুর-এ-জান্নাত, ‘গত ১৯ জুলাই লেখকের প্রথম মৃত্যুবর্ষিকীতে আমরা গিয়েছিলাম নুহাশপল্লীতে, সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে। আর সে যাত্রাপথেই বাসটির নাম দেওয়া হয় হিমু পরিবহন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এবার পালন করছি তাঁর জন্মদিন। এখন আমাদের সংগঠনের নামই হয়ে উঠেছে হিমু পরিবহন।’

শুধু ঢাকা নয়, হিমু পরিবহনের বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে হিমু পরিবহনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
১২ নভেম্বর ৫০ জন সদস্য নিয়ে হিমু পরিবহন যায় নুহাশপল্লীতে। হিমু পরিবহনের যাত্রীদের প্রাণোচ্ছল এই যাত্রায় সঙ্গী হয় কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মীরা।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে নুহাশপল্লীতে হিমুভক্তদের সংগঠন ‘হিমু পরিবহন’-এর সদস্যরা। ছবি: ওমর ফারুক
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে নুহাশপল্লীতে হিমুভক্তদের সংগঠন ‘হিমু পরিবহন’-এর সদস্যরা। ছবি: ওমর ফারুক

এই ৫০ জনের দলে ঢাকা ছাড়াও সারা দেশ থেকে যোগ দিয়েছে অনেকে। তাদের একজন এইচএসসি পড়ুয়া বরিশালের মাহ্জাবিন মুনিয়া। বইয়ের পাতা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল, ‘আগে থেকেই শঙ্কা ছিল হরতালের, তাই আমি চার দিন আগেই ঢাকায় এসেছি।’ তার সঙ্গে যোগ করে বাগেরহাটের শুভ হাসান হায়দার, ‘ছোটবেলা থেকে নুহাশপল্লীর কথা শুনেছি। আর সেখানে স্যারের জন্মদিনে আসতে পারব এমন সুযোগ কি কেউ হাতছাড়া করে!’ শুধু মুনিয়া কিংবা শুভ নয়, এই দলে আছে রংপুরের শিউলি সোমা, বগুড়ার আশেকুর রহমান। এমন আয়োজন মিস করতে চায়নি খুলনার তাপস হাওলাদার। সবিস্তারে সে শোনাল তার কাঠ-খড় পুড়িয়ে খুলনা থেকে ঢাকা পৌঁছানোর ইতিহাস। কিন্তু প্রিয় লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পেরে সেই কষ্ট ম্লান হয়ে গেছে তার।
হিমু পরিবহনের মুখপাত্র জুবায়ের কবির বলেন, ‘এখন থেকে হিমু পরিবহন হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালন ছাড়াও তাঁর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আর আমাদের দাবি হচ্ছে, হুমায়ূন আহমেদের নামে দেশের জাতীয় কোনো স্থাপনার নামকরণ করা হাক।’
হিমু পরিবহনের অন্যতম সংগঠক আসলাম হোসেন ও রুহুল আমিন যোগ করেন, ‘আমরা চাই রাষ্ট্রীয়ভাবে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ও মৃতুদিন পালন করা হোক। এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠকে সরকারি করার দাবিও আছে আমাদের।’
নুহাশপল্লীর পর হিমু পরিবহনের ১২০ জন সদস্য লেখকের জন্মস্থান নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ঘুরে আসে ১৫ নভেম্বর। হুমায়ূন আহমেদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে গানে-উৎসবে কাটায় সারাবেলা।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে হিমু পরিবহন একটি স্মরণিকা প্রকাশ করেছে। হিমু পরিবহনের ফেসবুক ফ্যান পেজে যোগ দেওয়া যাবে facebook.com/HimuParibahan এই ঠিকানায়।