বাংলাদেশি আমেরিকান কারাতে কন্যা

ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতেন অনিতা। পরের বছর ২০১২ সালেও চ্যাম্পিয়ন হন অনিতা। এদিকে ২০১২ সালে ডেনভারে ক্যাপিটাল সাবাকি চ্যাম্পিয়নশিপ নামের আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন অনিতা। অ্যাডাল্ট উইমেন বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন এই তরুণী। এরপর গত মে মাসে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের প্রতিযোগিতা পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর শিরোপা হাতছাড়া হয়নি অনিতার।
অনিতা শাম্মী। ছবি: কবির হোেসন
অনিতা শাম্মী। ছবি: কবির হোেসন

বয়স যখন মাত্র সাত বছর, রেহানা বেগম মেয়ে অনিতা শাম্মীকে ভর্তি করিয়ে দেন কারাতে শেখার স্কুলে। মা চেয়েছিলেন নিজের মেয়েকে গড়ে তুলবেন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, শক্ত একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। মেয়েরও আগ্রহের কমতি ছিল না। পড়াশোনার চাপ থাকলেও নিয়মিত চলত কারাতের চর্চা। যুক্তরাষ্ট্রের টমাস জেফারসন হাইস্কুল ফর সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ল্যাংলি হাইস্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত চলত কারাতে চর্চা।

কারাতের নিয়মিত সেই চর্চাই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অনিতা শাম্মীকে এনে দিয়েছে সাফল্য, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেকগুলো শিরোপা। মা রেহানা বেগম যুক্তরাষ্ট্রের অরোরা সেন্ট লুকস মেডিকেল সেন্টারের স্ট্রান্সপ্ল্যান্ট হেপাটোলজিস্ট। মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন অনিতা শাম্মী। ঢাকায় নিকেতনে এক আত্মীয়ের বাসায় ২৭ জুন কথা হয় অনিতার সঙ্গে। এ সময় সেখানে তাঁর মা-ও ছিলেন।
রেহানা বেগম জানালেন, স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে অনিতা ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ায়। পড়ার বিষয় বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং। স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। এখন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির অপেক্ষা। অনিতা ভর্তি হবেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ায়, বিষয় থাকছে আগেরটাই।

কথায় কথায় জানা হলো অনিতার কারাতে চর্চার নানা কিছু। তিনি মূলত যেটা চর্চা করেন সেটা ‘এনশিন কারাতে’। জাপান থেকেই কারাতে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা পৃথিবীতে। সব দেশেই এ খেলা পরিচিত। অনিতা মাত্র ১১ বছর বয়সে কারাতের ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করেন। ব্ল্যাক বেল্ট অর্জনের পরও ১২টি ডিগ্রি থাকে কারাতে খেলায়। এগুলোতে কৌশল খাটাতে হয় আরও বেশি। অনিতা ‘থার্ড ডিগ্রি’ অর্জন করেছেন। এখন ফোর্থ ডিগ্রি অর্জনের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

অনিতার ধ্যান–জ্ঞান কারাতে ঘিরেই।  ছবি: সংগৃহীত
অনিতার ধ্যান–জ্ঞান কারাতে ঘিরেই।  ছবি: সংগৃহীত

কারাতে অনিতার প্রথম বড় মাপের সাফল্য আসে ২০১১ সালে। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতেন অনিতা। পরের বছর ২০১২ সালেও চ্যাম্পিয়ন হন অনিতা। এদিকে ২০১২ সালে ডেনভারে ক্যাপিটাল সাবাকি চ্যাম্পিয়নশিপ নামের আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন অনিতা। অ্যাডাল্ট উইমেন বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন এই তরুণী। চমকে দেন সবাইকে। এরপর গত মে মাসে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের প্রতিযোগিতা পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর শিরোপা হাতছাড়া হয়নি অনিতার। কারাতের জাপান চ্যাম্পিয়নশিপে অনিতা শাম্মীও চ্যাম্পিয়ন হন ২০১৩ ও ২০১৪ সালে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কারাতে খেলায় এই মেয়েটির সাফল্যের ঝুলি বেশ ভারীই।

বাংলাদেশি কোনো মেয়ের কারাতে এমন সাফল্য নজিরবিহীন ঘটনাই বলা যায়। অনিতা জানান, ছোটবেলায় মায়ের ইচ্ছায় শুরু করলেও ধীরে ধীরে কারাতের প্রতি ভালো লাগা বাড়তে থাকে। এরপর একসময় কারাতের নানা নিয়ম মানতে গিয়ে জীবনের প্রতিটি সময়ই কারাতের জন্য উৎসর্গ করা হয়ে গেছে। অনিতা বললেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এ রকম সাফল্য অর্জন করা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমার খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, ব্যায়াম এমনকি অবসরও কাটে কারাতের নিয়ম মেনে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা, রাতে ঘুমাতে যাওয়া—সবকিছুই একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হয়েছে। পড়াশোনাতেও প্রচুর সময় যায় আমার। তবে আমি কারাতেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি।’
পড়াশোনা আর কারাতের পাশাপাশি ঘুরতে পছন্দ করেন অনিতা। ছুটি পেলেই মা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন দেশে। এখন যেমন ঘুরছেন। অনিতা জানালেন, একেক দেশে গিয়ে সেই দেশের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি দেখতে-বুঝতে ভালো লাগে তাঁর। আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশ ঘুরেছেন অনিতা। সবচেয়ে বেশি পছন্দ তাঁর প্রিয় কারাতের জন্মভূমি জাপান।
অনিতার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। তবে বাংলাদেশে এর আগেও কয়েকবার এসেছেন। অনিতা বলেন, ‘বাংলাদেশে এলে ভালো লাগে যখন দেখি আমাদের আত্মীয়স্বজন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। সবার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ হই।’

স্নাতকোত্তর শেষে পুরোদমে কারাতের সঙ্গে যুক্ত হতে চান তিনি। একটি জিমনেশিয়াম প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা আছে তাঁর। অনিতা বাংলাদেশের নারীদের কারাতে খেলায় উদ্বুদ্ধ করে তুলতে চান। জানালেন, এ জন্য কাজ করে যাবেন তিনি।