আইকন, সমঝোতাকারী যোদ্ধা ও জাদুকর

জোহানেসবার্গে গতকাল নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণে আয়োজিত প্রার্থনা সভায় (বাঁ থেকে) তাঁর সাবেক স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ও নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা । ছবি: এএফপি
জোহানেসবার্গে গতকাল নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণে আয়োজিত প্রার্থনা সভায় (বাঁ থেকে) তাঁর সাবেক স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ও নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা । ছবি: এএফপি

নেলসন ম্যান্ডেলার জীবন ও কর্মের ব্যাপ্তি এতটাই বিশাল যে তাঁকে সংক্ষেপে মূল্যায়ন করা কঠিন। তিনি ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব বা আইকন, সমঝোতাকারী, যোদ্ধা ও জাদুকর। পরস্পরবিরোধী ও বৈচিত্র্যময় এসব বিশেষণ তাঁর জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়।
একটি দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল জীবনে ম্যান্ডেলা অনেক চমকপ্রদ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এটা ছিল নেতৃত্বের সেই ক্ষমতা, যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে রূপান্তর ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন গত শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতাদের একজন। তাঁর অজস্র গুণের মধ্য থেকে চারটি বিশেষ ভূমিকা তুলে ধরা হচ্ছে—
আইকন
নেলসন ম্যান্ডেলার হাসি, আনত ভঙ্গিমা, কাঁকুরে কণ্ঠস্বর ও ধূসর চুল বিশ্ববাসীর কাছে অতি পরিচিত। কিন্তু ২৭ বছরের কারাজীবনে তাঁর ব্যক্তিত্বের রহস্যময় ও বিমূর্ত দিকটিই প্রকাশিত হয়। বর্ণবাদ বৈষম্যের সেই যুগে তাঁর ছবি বা নাম পর্যন্ত প্রকাশের সুযোগ ছিল না। সেই মানুষই এখন একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব বা আইকনে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন বিশ্বজুড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরে সংগ্রামকে গতিশীল করার পাশাপাশি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অবরোধ আরোপের পক্ষেও জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
সমঝোতাকারী
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপ্লবে সব বিবাদ দূর করে প্রধান মীমাংসাকারীর ভূমিকায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বর্ণবাদী সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টায় তিনি দৃঢ় চিত্তে ঝুঁকিপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যান। তখনো তিনি কারাগারেই ছিলেন। পরে তিনি সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের স্নায়ুচাপ ও ভীতি দূর করতে স্মরণীয় ভূমিকা নেন। ফলে, শ্বেতাঙ্গদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা পায় এবং তাদের প্রতি সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষোভও ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে। এ ছাড়া ১৯৯৩ সালে সংগ্রামী বীরযোদ্ধা ক্রিস হ্যানি আততায়ীর হামলায় নিহত হওয়ার পর ম্যান্ডেলার ভূমিকার কারণেই দেশে তাৎক্ষণিক গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েনি।
একজন যোদ্ধা
শান্তিবাদী নেতা হলেও অধিকার আদায়ের প্রশ্নে ম্যান্ডেলাকে একজন বিদ্রোহী যোদ্ধা হিসেবে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) একটি নমনীয় বিরোধী অবস্থান থেকে সরে বর্ণবাদ বৈষম্যের সেই যুগে শ্বেতাঙ্গদের শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের পথে চলে যায়। ম্যান্ডেলাই সেই সশস্ত্র বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। তবে তখন তাঁর কোনো ধরনের সামরিক অভিজ্ঞতা ছিল না।
জাদুকর
জনসমক্ষে একজন ভালো বক্তা হিসেবে খ্যাতি ছিল ম্যান্ডেলার। কারামুক্তির পর তিনি জনতার সামনে রাজকীয় ভঙ্গিমায় হাজির হতেন। জীবনের সর্বস্তরে তিনি মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিপর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ রেখেছেন। ব্যক্তিগত আন্তরিকতা দেখানোর সহজাত গুণ তাঁর মধ্যে ছিল। জাদুকরি ক্ষমতার বলেই যেন তিনি সবার সঙ্গে খুব সহজে মিশতে পারতেন। তাঁর বন্ধুবান্ধবের তালিকায় সব ধরনের মানুষের বৈচিত্র্যময় উপস্থিতি ছিল। বিবিসি।