আগাম ফুটছে চেরি ফুল, গবেষকেরা বলছেন জলবায়ুর প্রভাব

বসন্তের চেরি ফুল জাপানের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উৎসব
এএফপি ফাইল ছবি

জাপানের চেরি ফুলের (চেরি ব্লোসম) খ্যাতি দুনিয়াজোড়া। প্রতি বসন্তেই জাপানের চেরি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমান মানুষ। হাজার বছর ধরে এই উজ্জ্বল গোলাপি ও সাদা কুঁড়ি সমাদৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এখন স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই ফুলে ফুলে ভরে যাচ্ছে চেরিগাছে (শুকারা)। নতুন গবেষণা বলছে, মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটছে, সে কারণেই চেরির এই ‘আগাম আগমন’।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে জাপানের মধ্যাঞ্চলের ঐতিহাসিক শহর কিয়োটোতে চেরি ফুল ধরে ২৬ মার্চে, যা গত ১ হাজার ২০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে আগে। চলতি বছরের পয়লা এপ্রিলেই চেরি ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে প্রাঙ্গণ। এ নিয়ে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্নাল এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ লেটার্স-এ বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ-চেরি ফুলের মৌসুম এগিয়ে আসার কারণ উঠে আসে।

চেরি ফুলের এ প্রবণতার সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ার সম্পর্ক খুঁজে পান গবেষকেরা। মার্চে কিয়োটো শহরের গড় তাপমাত্রা প্রাক্‌-শিল্পযুগ থেকে কয়েক ডিগ্রি বেড়েছে। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ এটার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর উষ্ণায়নকে দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া আছে নগরায়ণের প্রভাব। গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহর বেশি উষ্ণ। কারণ, নগরের ভবন ও সড়ক প্রাকৃতিক পরিবেশের চেয়ে বেশি তাপ শুষে নেয়, যা সাধারণত ‘হিট আইল্যান্ড’ প্রভাব হিসেবে পরিচিত।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বাড়ার বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বিশ্বজুড়েই তাপমাত্রা বেড়েছে।

গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন যদি এখনকার মতোই চলতে থাকে, তাহলে এই শতকের শেষ দিকে কিয়োটোর চেরি ফুল আরও আগে ফুটতে শুরু হতে পারে।

গত বছর জাপানে ১ হাজার ২০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে আগে চেরি ফুল ধরে
রয়টার্স ফাইল ছবি।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ও জলবায়ুবিজ্ঞানী নিকোস ক্রিসটিডিস বলেন, ‘আমাদের গবেষণা বলছে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর উষ্ণায়নই কেবল কিয়োটোর চেরি ফুলের মৌসুমে প্রভাব ফেলছে না, ফুল ফোটার শুরুর তারিখও অনেক এগিয়ে আনছে।’ এই বিজ্ঞানী আরও বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা ২১০০ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই ঘটবে।’

আগাম চেরি ফুল জাপানের অর্থনীতি ও বাস্তুসংস্থানে ব্যাপক ফেলবে। জলবায়ু সংকট আরও ঘনীভূত হবে, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

ইয়াসুয়ুকি অনো জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক। আগাম চেরি ফুল নিয়ে করা গবেষণায় যুক্ত এই গবেষক বলেন, ‘বসন্তের চেরি ফুল জাপানের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।’

পূর্ণ চেরি মৌসুম মোটে কয়েক দিন স্থায়ী হয়। ওই সময়ে হানামি (জাপানি ভাষায় ফুল দেখো) একটি জনপ্রিয় চর্চা। তখন চেরিগাছের নিচে বনভোজন হয়, নানা ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন অনেকে।

আগাম চেরি মৌসুম কেন গুরুত্বপূর্ণ

আগাম চেরি মৌসুম বাস্তুতন্ত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রাখতে পারে। এমনকি অনেক প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলতে পারে। গবেষণা বলছে, এটা গাছপালা, কীটপতঙ্গ ও প্রাণিকুলের ওপর প্রভাব ফলতে পারে, যারা নিজেদের জীবনচক্র পরিচালনার জন্য একে অন্যের ওপর খুব বেশি নির্ভর করে। এই চক্রের বদল পুরো বাস্তুতন্ত্রকেই ধ্বংস করে দিতে পারে।

গাছের তাপমাত্রা যদি বাড়তে থাকে, তবে দ্রুত ফুল ফুটবে এবং পাতাও বের হবে। একইভাবে উচ্চ তাপমাত্রায় বিভিন্ন পতঙ্গ ও অন্য প্রাণীরা দ্রুত বেড়ে উঠবে।