মুম্বাইয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর মাসে সন্ত্রাসী হামলার এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই আবারও দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর একটি আদালতে উপস্থাপিত মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তদন্তের নথিপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জঙ্গি সংগঠনটি এবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং উত্তরাখন্ডের মুসৌরিতে অবস্থিত উডস্টক স্কুল ও দেরাদুনে অবস্থিত দ্য দুন স্কুলে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।আদালতে বুধবার এফবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে নথিপত্র উপস্থাপন করেন। সেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি ও কানাডীয় নাগরিক তাহাওউর হুসাইন রানার টেলিফোনে কথোকথন প্রকাশ করা হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর তাঁদের মধ্যে ওই কথোপকথন হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা। তাহাওউর হুসাইন রানাও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত।কথোপকথন থেকে জানা যায়, ভারতে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে লস্কর-ই-তাইয়েবার হামলা চালানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন হেডলি। গত মাসে তাঁর ওই লক্ষ্যবস্তুগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এফবিআই গত ৩ অক্টোবর তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, হেডলি ও রানার কথপোকথনে দুইবার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের নাম এসেছে। মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের কথপোকথন থেকে উডস্টক স্কুল ও দুন স্কুলের নামও জানা গেছে। এ ছাড়া দিল্লি, গোয়া ও কেরালার পাঁচ তারকা হোটেলগুলোও জঙ্গি গোষ্ঠীটির হামালার পরিকল্পনার লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় ছিল।এদিকে এই তথ্য জানার পর ওই দুটো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উত্তরাখন্ড রাজ্য সরকার। দেরাদুনের পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা অভিনয় কুমার বিশেষ নিরাপত্তা উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে এফবিআইয়ের কাছ থেকে সতর্কবার্তা পাওয়ার পর উচ্চপর্যায়ের একটি ভারতীয় প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। তারা এফবিআইয়ের তদন্তে সহযোগিতা করবে।এ ধরনের স্থাপনাগুলো কেন হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হলো, এর জবাবে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এসব স্থানে অভিজাত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যাওয়া-আসা করেন এবং এসব স্থাপনার নিরাপত্তাব্যবস্থা শিথিল থাকে। উডস্টক ও দুন স্কুলে বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রয়েছে। আর লস্কর-ই-তাইয়েবা বিশেষভাবে পশ্চিমা নাগরিকদের হামলার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়। মুম্বাই হামলার ক্ষেত্রেও পশ্চিমাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। আর এর মাধ্যমে বেশি করে আন্তর্জাতিক প্রচার পাওয়া সম্ভব হয়।ওদিকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে বলেছে, লস্কর-ই-তাইয়েবা এবার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক ভাড়া করেছে, যাতে এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা না যায়। সম্ভবত তাদের ইচ্ছা ছিল এটাই প্রমাণ করা, হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।