এক বছর পরও ফুসফুসে ক্ষত

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার এক বছর পরও ফুসফুসে ক্ষত থেকে যাচ্ছে। তীব্র করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সুস্থ হওয়া কিছু রোগীকে নিয়ে গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষকেরা বলছেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগী পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না।

চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ফুসফুসে করোনার প্রভাব নিয়ে এই গবেষণা করেছেন। তাঁদের গবেষণাটি ৫ মে ‘দ্য ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন’ সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানেই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি শনাক্ত হন।  

উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনমিন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এঁদের গড় বয়স ছিল ৬০ বছর। এরা ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার বা ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত বা ধূমপায়ীদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। করোনা থেকে সুস্থ করতে যেসব রোগীর জন্য ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়েছিল, তাঁদেরও এই গবেষণায় রাখা হয়নি। গবেষণার জন্য উপযুক্ত ১৩৫ জন রোগী ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৮৩ জনের ওপর গবেষণাটি করা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার ১২ মাস পর তাঁদের ফুসফুসের পরিস্থিতি গবেষকেরা যাচাই করে দেখেছেন।

গবেষকেরা এসব ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়ার পাশাপাশি শারীরিক পরীক্ষা, নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা (কার্বন মনোক্সাইড নিঃসরণক্ষমতা—ডিএলসিও), ফুসফুসের সার্বিক ক্ষমতা, সিটি স্ক্যানসহ আরও বেশ কিছু পরীক্ষা করেছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নিয়মিত বিরতিতে এসব পরীক্ষা করা হয়। ৩, ৬, ৯ ও ১২ মাস পর অর্থাৎ হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর মোট চারবার এসব পরীক্ষা হয়েছে।

গবেষকেরা বলছেন, ১২ মাস পর অধিকাংশ রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন বলে মনে হলেও ৫০ শতাংশ রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা গেছে। এক বছর পরও এক-তৃতীয়াংশ ব্যক্তির ফুসফুসের কার্যকারিতায় কমতি দেখা গেছে। অর্থাৎ ফুসফুসের মাধ্যমে পর্যাপ্ত অক্সিজেন তাঁদের রক্তে পৌঁছাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি পুরুষের চেয়ে নারীর ক্ষেত্রে বেশি দেখা যাচ্ছে। সিটি স্ক্যানে এক-চতুর্থাংশ রোগীর ফুসফুসের কিছু এলাকায় পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। যেসব রোগী অধিক তীব্র উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে বেশি দিন ছিলেন, তাঁদের ফুসফুসের পরিবর্তন বেশি ছিল।
গবেষকেরা বলছেন, পুরুষের তুলনায় নারীর ক্ষেত্রে প্রভাব কেন বেশি, তা এখনো পরিষ্কার না। অন্যদিকে দীর্ঘ সময়ে এই প্রভাব কতটা থাকে, সে ব্যাপারে আরও গবেষণা হওয়া দরকার।