কড়া নিরাপত্তায় ফেলানী হত্যার বিচার শুরু

কড়া নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরোনোর সময় বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষের বিচার গতকাল মঙ্গলবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে শুরু হয়েছে। প্রায় আড়াই বছর পর ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হলো।
গতকাল সকালে কোচবিহারের সোনারীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ১৮১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে ওই বিচারকাজ শুরু হয়। যে আদালতে বিচার চলছে, তা সেনা কোর্ট মার্শালের সমতুল্য জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট (জিএসএফসি)। বিচার-প্রক্রিয়া পরিচালনা করছেন বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (কমিউনিকেশনস) সি পি ত্রিবেদী।
প্রথম দিন বিচারকাজ পরিচালনার জন্য পাঁচজন বিচারককে নিয়োগ দেওয়া হয়। আজ বুধবার থেকে শুনানি শুরু হবে। গতকাল স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সোনারীতে বিএসএফের
১৮১ ব্যাটালিয়নের দপ্তরে উপস্থিত হলেও তাঁদের বিচারকাজ দেখার অনুমতি দেওয়া হয়নি বিএসএফ সূত্র জানায়, প্রথমে অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হবে। ১৯ আগস্ট ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আবদুল হানিফের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালত তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ওই দুই সাক্ষীসহ বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তাও (লেফটেন্যান্ট কর্নেল) যান কোচবিহারে।
প্রথম দিনে অভিযুক্ত কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো পড়ে শোনানো হয়। অমিয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা (অনিচ্ছাকৃত খুন) এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএসএফের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, বিচারের শুরুতেই অমিয়কে বিচারকেরা জিজ্ঞাসা করেন, তিনি দোষ স্বীকার করছেন কি না। অমিয় দোষ স্বীকার না করে আইনি ভাষায় বলেন, ‘নট গিল্টি’।
এ মামলার সুষ্ঠু বিচার ও স্বচ্ছতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিচার চলছে ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে। আর ওই ব্যাটালিয়নেরই একজন সদস্য অভিযুক্ত অমিয় ঘোষ। আর এর বিচারও হচ্ছে বিএসএফ আইনে। তবে বিএসএফের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দাবি, বিএসএফের কর্মীদের শাস্তিদানের ক্ষেত্রে বিএসএফের আইন অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির থেকেও কড়া। আর শাস্তির বিধানও সাধারণ আদালতের থেকে অনেক কঠোর।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ১৫ বছরের ফেলানী বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। কাঁটাতারের ওপর দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকা ফেলানীর মৃতদেহ নিয়ে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার বিচার দাবি করা হয়। এর পরই বিএসএফ ফেলানী হত্যার ঘটনায় একটি মামলা করে। গঠন করে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট।
যে কারণে বিচার শুরুতে বিলম্ব
প্রায় আড়াই বছর পর ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হলো। কেন এই বিলম্ব? এ প্রসঙ্গে বিএসএফের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, তাঁদের দিক থেকে কিছুটা দেরি হয়েছে। বিচার-প্রক্রিয়া, অর্থাৎ এই জিএসএফসি তৈরির নির্দেশ দিতে ২০১২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত লেগে যায়। তার পরও প্রায় ১০ মাস লেগেছে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায়।
বিএসএফের কর্মকর্তারা জানান, মামলার বিচারের জন্য প্রয়োজনীয় তিনজন বাংলাদেশি সাক্ষীকে হাজির করানো যায়নি বলেই গত অক্টোবর মাসে নির্দেশ জারি হওয়া সত্ত্বেও বিচার শুরু হয়নি। তা ছাড়া বাংলাদেশ একটি চিঠি দিয়ে ওই সাক্ষীদের কী জিজ্ঞাসা করা হবে, সেটা জানতে চেয়েছিল। কিন্তু বিচারের সময়ে কী প্রশ্ন করা হতে পারে, সেটা আগে থেকে জানানো সম্ভব নয়।
ওই তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে হাজির করানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই সরকারের মধ্যে চিঠি আদান-প্রদান চলেছে। আর সে জন্যই এই বিলম্ব। কলকাতা প্রতিনিধি ও বিবিসি বাংলা।