কানাডায় বর্ণবাদের বিস্মৃত অধ্যায় আফ্রিকভিল

আফ্রিকাভিল জাদুঘর
আফ্রিকাভিল জাদুঘর

বিশ্ব ইতিহাসের নানা উত্থান-পতনের আবর্তে এক স্বল্প আলোচিত নাম হলো কানাডার পূর্ব প্রান্তের হ্যালিফ্যাক্সের আফ্রিকভিল। কানাডার ঐতিহাসিক পটভূমিকায় আফ্রিকভিল যুক্ত করেছে বিস্মৃতপ্রায় এক অধ্যায়ের। বর্ণবাদের বিয়োগান্ত এই অধ্যায় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর পরিশ্রমী এক জনগোষ্ঠীর হতাশা, হাহাকার তাড়িত মানুষের সংগ্রামের ইতিহাসকেই জানান দেয়।
ইংরেজি আফ্রিকান ভিলেজের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো আফ্রিকভিল। ১৭৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হ্যালিফ্যাক্স শহর থেকে উত্তরে কয়েক কিলোমিটার দূরে সমুদ্র তীরবর্তী বেডফোর্ড অঞ্চলের সাগরের এক অববাহিকায় বিস্তার ঘটেছিল কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এই জনবসতির। কানাডার সে সময়ের বিরাজমান বর্ণ বিভাজিত ও বৈষম্যময় সামাজিক কাঠামোয় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের মূল শহর থেকে দূরে রাখার অভিপ্রায়ে তীরবর্তী এই আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
হ্যালিফ্যাক্স গঠিত হওয়ার আগেই সপ্তদশ শতকের সূচনালগ্ন অথবা এর কিছুকাল আগে থেকেই কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতিনিধিদের দাস বা শরণার্থী রূপে কানাডায় আসতে থাকে। ১৮১২ সালের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যুদ্ধ শেষ হয়। এ সময় অনেক আফ্রিকান-আমেরিকান দাসত্বের নির্মম শৃঙ্খল থেকে মুক্তির আশায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন। এই আনুগত্য স্বীকারকারীরা ব্ল্যাক লয়ালিস্ট রূপে পরিচিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এদের অধিকাংশরাই ছিলেন আমেরিকার জ্যামাইকা ও কানসাস অঞ্চলের বাসিন্দা। তাদের প্রতি নির্ধারিত প্রতিশ্রুত মুক্তভূমির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে ছিল আগের মেরিটাইম প্রদেশের হ্যালিফ্যাক্স ও নোভাস্কোশিয়া অঞ্চল।
১৭৬১ সালের কানাডার সরকারি ভূমি বণ্টন সংক্রান্ত নথিতে আফ্রিকভিলের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। ১৮৪৮ সালে উইলিয়াম আর্নল্ড ও উইলিয়াম ব্রাউন—এ দুই কৃষ্ণাঙ্গ সর্বপ্রথম আফ্রিকভিল অঞ্চলে ভূমি ক্রয় করেন। পরবর্তী এক শ বছরের দীর্ঘ সময় ধরে বহুমাত্রিক বিভাজনের মধ্যেও গড়ে উঠেছিল এই স্পন্দনমুখর কর্মঠ জনবসতি। সেই সময়ের কানাডার বিভাজিত সমাজে কৃষ্ণাঙ্গ ও বর্ণের মানুষেরা সব বিচারে নিগৃহীত হতেন। ১৮৪৯ সালে আফ্রিকভিলে একটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চ স্থাপন করা হয়। সিভিউ চার্চরূপে খ্যাত গির্জার এলাকায় খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীদের পাশাপাশি অন্য মতধারার নাগরিকেরাও চার্চের বৈচিত্র্যময় নানা পরিবেশনায় প্রাণিত হতেন। এটি ছিল আফ্রিকভিলের সব সামাজিক যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র। অধিবাসীদের উদ্যোগে আফ্রিকভিলে একটি মুদি দোকান ও পোস্ট অফিস চালু করা হয়। স্থানীয় জনগণের প্রবল দাবি ও উদ্যোগে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ১৮৮৩ সালে হ্যালিফ্যাক্সের কাউন্সিলের অনুমোদনে আফ্রিকভিল একটি স্কুল স্থাপন করা হয়। তবে কানাডার শিক্ষাব্যবস্থায় ১৯৫৩ সালে বর্ণভিত্তিক পৃথককরণ আইন বন্ধ করার অজুহাত দেখিয়ে স্কুলটি বন্ধ করা হয়। পরোক্ষভাবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকটা বাধ্য করা হয় দূরের শ্বেতাঙ্গ শিক্ষক পরিচালিত বৈষম্যময় পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে।
সর্ব মাত্রিক বিভাজন ও দারিদ্র্য ছিল আফ্রিকভিলের জনগোষ্ঠীর নিত্যসঙ্গী। স্থানীয় অধিবাসীরা ঠিক মাত্রায় পৌর কর দেওয়া সত্ত্বেও সাধারণ ও মৌলিক নাগরিক অধিকার সুবিধা থেকে নিয়মিতভাবে বঞ্চিত হতেন। এই সব নাগরিক সেবাগুলো ছিল পয়োনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ পানি প্রবাহের ব্যবস্থা, আবর্জনা বহনকারী ট্রাক, চিত্তবিনোদন ও খেলার মাঠ, নিরাপত্তা ইত্যাদি। বারবার আবেদন করেও এসব সেবার ঘাটতি নিয়ে কোনো সাড়াশব্দ করত না পৌরসভা বা সিটি কাউন্সিল। ১৯৪৮ সালে কাউন্সিল আফ্রিকভিলের পয়োনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ পানি সংযোগের বিষয়টিতে অনুমোদন দিলেও তার সফল বাস্তবায়ন কখনোই হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিস্তারিত প্রাসঙ্গিক কোনো আলোচনা ব্যতিরেকে আফ্রিকভিলের পশ্চিম অংশ ও এর পার্শ্ববর্তী ভূমিতে ১৮৫০ থেকে ১৯৫০ সময়কালে পর্যায়ক্রমে একটি বর্জ্য ক্ষেত্র, আবর্জনার ভাগাড়, সংক্রামক ব্যাধির হাসপাতাল, রোকহেড কারাগার, সার কারখানা স্থাপন করা হয়। ফলে সার্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি এক শোচনীয় আকার নেয়। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে আফ্রিকভিলের বাসিন্দাদের ন্যূনতম কর্মসংস্থানের সুযোগ মেলেনি। ১৯১২ ও ১৯৪০ সালে আফ্রিকভিলের বুকের ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সম্প্রসারিত রেললাইন।
কানাডার নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী (প্রকৃত অধিবাসী) ও বর্ণের মানুষদের প্রতি নেতিবাচক সংস্কার ও রীতি নাগরিক চেতনায় বদ্ধমূল ছিল। তাই আফ্রিকভিলের স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা হ্যালিফ্যাক্সের মূলধারায় শুধুমাত্র গৃহপরিচারিকার কাজ পেতেন। সাধারণ অধিবাসীরা কৃষিকাজ, মাছ ধরা, ফলের বাগান থেকে সবজি উৎপাদন করে সামান্য জীবিকা নির্বাহ করতেন। অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের কর্মক্ষেত্র হ্যালিফ্যাক্স বন্দর ও রেলস্টেশনের মাল বহনকারী কুলির পেশা ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ছোট শিশুরা নিজস্ব লোকালয়ের টিবিসি পণ্ডে সাঁতার কাটা, কিল্ডার্স ফিল্ডে বাস্কেটবল, শীতকালে তুষার আচ্ছাদিত দৃঢ় প্রস্তরখণ্ডে ওপর হকি খেলার সামান্য সুযোগ লাভ করত।
১৯১৭ সালে হ্যালিফ্যাক্স স্মরণকালের এক ভয়াবহ বিস্ফোরণের ফলে শহরের উত্তর প্রান্তের আবাসন ভস্মীভূত হয়ে নিহত হন অনেক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিস্ফোরক ও গোলাবারুদবাহী একটি জাহাজে এ বিস্ফোরণ ঘটে। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক নানা সাহায্য ও অনুদানের অর্থ হ্যালিফ্যাক্সের উত্তরের বিভিন্ন অংশের নানা পুনর্বাসনে ব্যবহৃত হয়। তবে বিস্ফোরণে আফ্রিকভিলের নিহত ও আহত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের বিষয়টি সরকারি জরিপের মাধ্যমের খতিয়ে দেখা হয়নি।
হ্যালিফ্যাক্সের সাধারণ শ্বেতাঙ্গ জনগণ আফ্রিকভিল এলাকাকে আবর্জনা ও ভাগাড় হিসেবে বিবেচনা করত। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর প্রতি বৈষম্যময় মানসিকতাই পরবর্তী সময়ে আফ্রিকভিলের ভাঙনের প্রভাব রাখে। তবে বহুমাত্রিক নিগ্রহ ও প্রতিবন্ধকতার মাঝেও প্রতিধ্বনিত হতো প্রাণের স্পন্দন। কানাডার ক্রীড়া, কৃষ্টি ও শিল্পকলা চর্চার ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মানুষ রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। শত বঞ্চনার মাঝেও বাসিন্দারা নিজেদের মনোবল ধরে রেখে নিজ ঐতিহ্যের আবহে চার্চকেন্দ্রিক নানা আয়োজন করতেন। শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকত এই জনপদ। কানাডার বর্ণের মানুষদের জনপ্রিয় হকি লীগ ব্রাউন বোমাবারস টিম এই অঞ্চল থেকেই তাদের অগ্রযাত্রা শুরু করে। মুষ্টিযোদ্ধা লুইস এবং প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ও সুরকার ডিউক এলিংটন আফ্রিকভিল পরিদর্শনের আসেন। এলিংটনের শ্বশুর আফ্রিকভিলের অধিবাসী ছিলেন। এ ছাড়া কানাডার প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী পোর্টিয়া হোয়াট (১৯১১-১৯৬৮), বিশ্বের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মুষ্টিযুদ্ধ চ্যাম্পিয়ন জর্জ ডিস্কন (১৮৭০-১৯০৮) এই আফ্রিকভিলের বাসিন্দা ছিলেন।
হ্যালিফ্যাক্স সিটি কাউন্সিল ১৯৪৭ সালের পরিকল্পনা অনুসারে শিল্প নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণকরে হয়। সে লক্ষ্যে নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত গৃহ পুনর্বাসন ও স্থানীয়দের স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই আফ্রিকভিলের অধিবাসীরা তাঁদের ভূমি থেকে স্থানচ্যুত করার বিষয়টির প্রবল বিরোধিতা করেন। সেই সময়ের কানাডার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি আলোচনা করা হয়। অধিবাসীরা তাদের আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, বাসভূমি থেকে তাদের হ্যালিফ্যাক্স শহরে মূলধারায় স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করা হলে বর্ণ বিভাজিত সমাজে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৬২ সালের একটি নাগরিক সমাবেশে আফ্রিকভিলের এক শ জনের বেশি বাসিন্দা বিষয়টির বিপক্ষে মতামত দেন।
১৯৬৪ সাল আফ্রিকভিলের ইতিহাসে সূচিত হয় নিগ্রহের সর্বোচ্চ অধ্যায়টি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সকল অভিযোগ, বাধা প্রতিবাদ উপেক্ষা করে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর পরবর্তী প্রায় পাঁচ বছর গৃহের কাঠামোর জীর্ণ দশা ইত্যাদি নানা অজুহাতে প্রাথমিকভাবে ভাড়া করা আবাসনে বাসিন্দারা স্থানান্তরিত হন। দুঃখজনক হলেও সত্য, অধিবাসী স্থানান্তর ও তাদের মাল বহন করার এই প্রক্রিয়ায় আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলার ট্রাক ব্যবহার করা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় অধিকাংশেরই কোনো অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয় আর বাকিরা মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে অবহিত হন। ঘটনার আকস্মিকতায় ভীতসন্ত্রস্ত এই নিরীহ জনগোষ্ঠী খুবই ভেঙে পড়ে। ১৯৬৯ সালের মধ্যে বুলডোজারের আঘাতে মুছে ফেলা হয় সর্বশেষ গৃহটিকে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ‘পুরোনো আবাসের পরিবর্তে এক নতুন আবাস লাভ করবেন। তবে বাস্তব চিত্র ছিল করুণ। বাসিন্দাদের ভূমি ও গৃহের স্থানান্তর বাবদ যে অর্থ প্রদান করা হয় তা স্বল্পকালীন ঘর ভাড়া ও আর নতুন গৃহ ক্রয়ের প্রাথমিক কিস্তি পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। অনেকেই নিরুপায় হয়ে মন্ট্রিয়েল আর টরন্টো শহরে চলে যান। এভাবে ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন সকল অধিবাসী। আর কালের ও বৈষম্যের এক অতলে গহ্বরে তলিয়ে যায় আফ্রিকভিল।
পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত আফ্রিকভিল হেরিটেজ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সানডে মিলার তার ব্যক্তিগত এক স্মৃতিচারণে জানান, ‘তিনি প্রতি মুহূর্তে স্মরণ করেন এক ক্রন্দনরত হতবিহ্বল দুর্বল বয়স্ক নারীকে, যিনি গৃহ থেকে উঠে যেতে অপারগতা জানিয়েছিলেন আর পরবর্তী গন্তব্য কোথায় সেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। একটি বর্জ্য বহনকারী ট্রাকের মাধ্যমে তাকে জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করা হয়।’
তবে বাসভূমি থেকে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক উচ্ছেদকৃত এই নিরীহ অধিবাসীরা বিচ্ছিন্ন হলেও একসময় ঘুরে দাঁড়ান। ১৯৬৯ সালেই এক জোট হয়ে তাঁদের হারানো ঐতিহ্য ও ভূমির অধিকার ইত্যাদি পুনরুদ্ধারের দাবিতে বিভিন্ন বিষয়ে এক ‘নাগরিক অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা পরে বারবার সমধর্মী আদর্শের চেতনায় বলীয়ান হয়ে একত্র হতেন। সেই সূত্র ধরে তাদের বংশধরেরা ১৯৮৩ সালে আফ্রিকভিল বংশতালিকা গঠনকারী ‘Geneology Society’ গঠন করেন। এই সোসাইটি রাষ্ট্র ও সমাজের আফ্রিকভিলে বর্ণবাদের ফলে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদের প্রতিকার, ক্ষতিপূরণ পূর্ণগঠন ইত্যাদি বিষয়ে অবিরত তাদের দাবির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন।
বর্ণবাদের রোষে ভূমিচ্যুত এই জনগোষ্ঠীর দীর্ঘকালীন ঐক্যবদ্ধ প্রচারণায় ক্রমান্বয়ে কানাডায় অনেকগুলো ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়। বর্ণ বিভাজন রোধে এই প্রচেষ্টার প্রতি বিশেষ সম্মানার্থে কানাডার হেরিটেজ বিভাগ ১৯৯৬ সালে আফ্রিকভিলকে জাতীয় ঐতিহ্যের ঐতিহাসিক কেন্দ্রের স্বীকৃতি প্রদান করে।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যালিফ্যাক্সে রিজওনাল মিউনিসিপ্যালটির তৎকালীন মেয়র পিটার কেলি এই অন্যায় আচরণ ও বর্ণ বিভাজিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আফ্রিকভিলের অধিবাসী ও তাদের বংশধরদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান এবং তাঁর সিদ্ধান্ত অনুসারে আফ্রিকভিলের পুরোনো চার্চটির আদলে সেই স্থানে নির্মাণ করা হয় আফ্রিকাভিল সিভিউ চার্চ, হেরিটেজ ট্রাস্ট সোসাইটি ও জাদুঘর। ২০১২ সাল থেকে তারা নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করে। প্রাথমিকভাবে আফ্রিকভিল কেন্দ্রীয় ভূমির একটি অংশ সিভিউ পার্ক ও আরেকটি অংশ মাল বহনকারী টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার হতো। ২০১২ সালে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ এই পার্কটি আফ্রিকভিল পার্ক হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। কানাডা ডাক বিভাগ ২০১৪ সালে আফ্রিকভিলের প্রতি বিশেষ সম্মানার্থে অঞ্চলের বাসিন্দা সাতজন বালিকার মুখাবয়বের ছবি সংবলিত একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট চালু করে। বর্তমানে হ্যালিফ্যাক্সসহ কানাডার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আফ্রিকভিলের প্রবীণ ও নতুন প্রজন্মের অনেকেই বছরের বিভিন্ন সময় ঐক্যের আদর্শে একত্রিত হয়ে এই পার্কে মিলিত হন। প্রতিটি মুহূর্তে তারা তাদের হৃদয়ে তাদের হারানো ঐতিহ্যকে রক্ষা করার উদ্দীপনাকে ধারণ করে আয়োজন করেন নানা আলোচনা ও অনুষ্ঠানের। তারা জানেন হারানো অধিকার পুনঃস্থাপনের প্রশ্নে আগামীতেও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।

ফারজানা নাজ শম্পা: হ্যালিফ্যাক্স, কানাডা