করোনাকালে তাঁর মহানুভবতা

চিকিৎসক ওমর আতিক
ছবি: ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাস ফর মেডিকেল সায়েন্সেসের ওয়েবসাইট

করোনাভাইরাসের মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। এর প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনেও। কর্মসংস্থান হারানোসহ নানা কারণে অর্থকষ্টে পড়েছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশেই সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ও সামর্থ্যবান মানুষেরা এগিয়ে এসেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্যানসার চিকিৎসক যা করেছেন, তা অনন্যই বলা চলে। তিনি ২০০ জন ক্যানসার রোগীর বিল মাফ করে দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রোগীদের বিল মাফ করে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ওই চিকিৎসকের নাম ওমর আতিক। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আতিক ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাস ফর মেডিকেল সায়েন্সেসের (ইউএএমএস) অধ্যাপক। তিনি তাঁর ২০০ রোগীর প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মার্কিন ডলারের বকেয়া মাফ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি (৮৪ দশমিক ৯১ টাকায় ১ ডলার ধরে)।

ক্যানসার চিকিৎসায় আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের পাইন ব্লাফ শহরে ১৯৯১ সালে ওমর আতিক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আরকানসাস ক্যানসার ক্লিনিক। এই চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে ক্যানসার রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিসহ অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর গত বছর চিকিৎসাকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেন তিনি। তবে অনেক ক্যানসার রোগীর কাছে বকেয়া রয়ে যায়। এ কারণে ওমর আতিক ওই বকেয়া সংগ্রহে আরএমসি অব আমেরিকা নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করেন।

একপর্যায়ে ওমর আতিক উপলব্ধি করেন, করোনা মহামারির কারণে অনেক পরিবার ব্যাপক আর্থিক সংকটে পড়েছে। অনেক ভেবেচিন্তে বড়দিনের আগমুহূর্তে তিনি রোগীদের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। এতে তিনি জানান, তাঁর কাছে ওই রোগীদের বকেয়া আর পরিশোধ করা লাগবে না।

ওমর আতিক আমার দেখা চৌকসতম চিকিৎসক। এর পাশাপাশি আমার জানামতে তিনি সবচেয়ে সহানুভূতিশীল চিকিৎসকও।
ডেভিড রোটেন, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, আরকানসাস মেডিকেল সোসাইটি

এ ব্যাপারে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসির গুড মর্নিং আমেরিকা অনুষ্ঠানে ওমর আতিক বলেন, ‘আমি উপলব্ধি করলাম যে বেশ কিছু মানুষ বকেয়া পরিশোধ করার পর্যায়ে নেই। আমি আর আমার স্ত্রী বিষয়টি নিয়ে ভাবলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, ওই রোগীদের কাছে আমাদের যে পাওনা রয়েছে, সেগুলো মাফ করে দেব।’

আরকানসাস থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র আরকানসাস ডেমোক্র্যাট-গেজেটকে চিকিৎসক আতিক বলেন, ‘আমরা ভেবে দেখলাম, এই কাজটা আমরা আসলেই করতে পারি এবং তা করার উপযুক্ত সময় এই মহামারিকালই। এই মহামারি মানুষের আয়সহ জীবনের সব ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে এনেছে।’ তিনি জানান, ২০০ রোগীর কাছে তাঁর প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মার্কিন ডলার পাওনা ছিল। তার সবই তিনি মাফ করে দিয়েছেন।

বড়দিন উপলক্ষে রোগীদের কাছে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তায় চিকিৎসক আতিক লিখেছেন, ‘আপনাদের মতো রোগীদের সেবা দিতে পেরে আরকানসাস ক্যানসার ক্লিনিক গর্বিত। স্বাস্থ্যবিমার মাধ্যমে রোগীদের কাছে থাকা বকেয়ার বড় অংশ পরিশোধ হয়ে যাবে। তারপরও আপনাদের কাছে যে বকেয়া রয়ে গেছে, তাও অনেক বড় অঙ্ক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বর্তমানে এভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। তবে আরকানসাস ক্যানসার ক্লিনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই ক্লিনিকে রোগীদের বকেয়া আর পরিশোধ করতে হবে না। আপনাদের বড়দিনের শুভেচ্ছা।’

এ ব্যাপারে বকেয়া সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান আরএমসি অব আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বি চিজম্যান বলেন, চিকিৎসক আতিক একজন যত্নবান মানুষ। রোগীদের বকেয়া মাফ করে দিয়ে তিনি ও তাঁর পরিবার অসাধারণ একটি কাজ করেছেন। কারণ, অন্যান্য মানুষের তুলনায় ওই রোগীদের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি, বিশেষ করে এই মহামারিকালে।

আরকানসাস মেডিকেল সোসাইটি নামের একটি সংগঠনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেভিড রোটেন বলেছেন, ‘ওমর আতিক আমার দেখা চৌকসতম চিকিৎসক। এর পাশাপাশি আমার জানামতে তিনি সবচেয়ে সহানুভূতিশীল চিকিৎসকও।’