গণভোট ব্রিটেনের 'অস্তিত্বের প্রশ্ন': ক্যামেরন

ডেভিড ক্যামেরন
ডেভিড ক্যামেরন

ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা না-থাকা নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় গণভোটকে যুক্তরাজ্যের ‘অস্তিত্বের প্রশ্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বলেন, ‘এই গণভোটে আমাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে যুক্তরাজ্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পশ্চাৎপদ, বিভাজন ও অসহিষ্ণুতার দিকে পা বাড়াবে; নাকি ঐক্যবদ্ধ থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে উদার, সহনশীল এবং একটি আত্মবিশ্বাসী রাষ্ট্রের সম্মান নিয়ে এগিয়ে যাবে।’
আজ রোববার টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ক্যামেরন এসব কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার খুন হওয়া লেবার পার্টির এমপি জো কক্সের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিন দিন বন্ধ থাকে গণভোটের প্রচার। রোববার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিবন্ধ লিখে আর সাক্ষাৎকার প্রদান করে পুনরায় প্রচারে নামে উভয় পক্ষ। জো কক্স নিহত হওয়ার ঘটনা ইইউ বিরোধীদের অভিবাসন নিয়ে আপত্তিকর মনোভাব এবং অসহিষ্ণুতার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান এবং মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন জো। তাঁর অবস্থান ছিল ইইউতে থাকার পক্ষে।

গণভোটে দেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না বলে সতর্ক করে দিয়ে ক্যামেরন বলেন, ‘ইইউ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত হবে একটি ‘মস্ত বড় ভুল’। এটা যুক্তরাজ্যকে দীর্ঘ অনিশ্চয়তায় ফেলবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজীবনের জন্য দুর্বল করে দেবে।’

তবে একই দিন প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ইইউ বিরোধী নেতা বরিস জনসন বলেন, এই গণভোট হচ্ছে ব্রিটেনের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনতে ‘জীবনে একবার’ পাওয়া সুযোগ। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ ছেড়ে আসার পক্ষে রায় দিলে তাঁর প্রাথমিক কাজগুলোর অন্যতম হবে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের সঙ্গে সম্পর্ক বাদ দেওয়া এবং অভিবাসীর অবাধ প্রবেশ বন্ধ করা। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ইইউ বিরোধীরা জয়ী হলে ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রীর পদ হারাবেন এবং সে ক্ষেত্রে সাবেক লন্ডন মেয়র এবং বর্তমান মন্ত্রী বরিস জনসনই প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বরিসসহ সাতজন মন্ত্রী ক্যামেরনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইইউ ছেড়ে আসার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন।

অবশ্য ইইউ বিরোধীদের ‘নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার’ এই যুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে অন্যরা বলছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে বিচ্ছিন্নতা, পশ্চাদগামিতাকে বেছে নিয়ে কিসের নিয়ন্ত্রণ চান তাঁরা? দেশে দেশে একক রাষ্ট্রগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্ব আর ক্ষমতাসীন দলের আগ্রাসী আচরণের কারণে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার মতো বিষয়গুলো যখন দৃশ্যমান, তখন ইইউর মতো রাষ্ট্র জোটের আরও বেশি টিকে থাকা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। কেননা, ইইউর সদস্য হিসেবে থাকার জন্য দেশগুলোকে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুশাসনের কিছু মানদণ্ড মেনে চলতে হয়, যা শান্তি ও মানবতার জন্য মঙ্গলজনক।

এদিকে শেষ মুহূর্তে এসে ইইউতে থাকার পক্ষে জনমত জোরালো হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ইইউ বিরোধীরা। কিন্তু গতকাল প্রকাশিত জরিপের ফল বলছে, ব্যবধান গুছিয়ে উভয় পক্ষের অবস্থান এখন ৪৪ শতাংশ করে। ১০ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন।