চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের কলমযোদ্ধা তরুণ সান্যাল

চলে গেলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক কলমযোদ্ধা কবি তরুণ সান্যাল। গতকাল সোমবার সকালে কলকাতার বিধাননগরে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

তরুণ সান্যাল ১৯৩২ সালের ২৯ অক্টোবর জন্মেছিলেন বাংলাদেশের বৃহত্তম পাবনা জেলার পোবজনা গ্রামে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে তাঁর এ গ্রামেই। প্রথম জীবনে পড়াশোনা করেছেন নওগাঁতে। দেশভাগের পর চলে আসেন কলকাতায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ছিলেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের ভাষণ তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। মার্চের মাঝামাঝি কলকাতার ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট হলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ার জন্য একটি সভার আয়োজন করে। সেই সভায় তিনি এবং অন্য নেতারা প্রথম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর তিনি যুক্ত হয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। লেখনী চালান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। ছুটে যান কলকাতার বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পেও।
মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় তরুণ সান্যাল ছিলেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা পরিচয়-এর সম্পাদক। তিনি শান্তি পরিষদের রাজ্য সম্পাদক ও ভারত-সোভিয়েত সংস্কৃতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ সহায়ক কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধজীবী সমিতির সম্পাদক। ১২টি কাব্যগ্রন্থ, সাতটি প্রবন্ধগ্রন্থ, তিনটি কবিতার অনুবাদগ্রন্থ। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো ‘মাটির বেহালা’, ‘অন্ধকার উদ্যানে যে নদী’, ‘রণক্ষেত্রে দীর্ঘবেলা একা’, ‘তোমার জন্যই বাংলাদেশ’।
তরুণ সান্যাল রবীন্দ্র পুরস্কার, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা পেয়েছেন। তিনিই একাত্তরে কলকাতায় চলে আসা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্রাবাসে থাকার ব্যবস্থা করেন। আর ছাত্রদের রাখেন কলেজের কমনরুমে।
গতকাল তাঁর মরদেহ রাখা হয় কলকাতার পিস ওয়ার্ল্ডে। সেখান থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাগুইহাটির বাসভবনে। এরপর লেবুতলা পার্কে সপ্তাহ পত্রিকা অফিসে। সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধার জন্য দুপুর একটায় তাঁর মরদেহ রাখা হয় কলকাতার কলেজ স্কয়ারে। এরপর এখান থেকে শেষকৃত্যের জন্য তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কলকাতার কাশী মিত্র ঘাট মহাশ্মশানে।
তরুণ সান্যালের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোক প্রকাশ করেছেন কবি শঙ্খ ঘোষসহ কলকাতার কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা। শোক প্রকাশ করে তাঁর মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছে কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন, বাংলাদেশ চারণ সাংস্কৃতিক সংস্থাসহ কলকাতার বিভিন্ন সংগঠন।