টিকার বুস্টার ডোজ কেন জরুরি
কোভিড–১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বেশ কয়েকটি নতুন ধরন বেরিয়েছে। বারবার রূপান্তর ঘটছে ভাইরাসটির। করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কিছুদিন আগেও বিভিন্ন দেশে বয়স্ক মানুষের ওপর টিকার বুস্টার ডোজের প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। কিন্তু এখন সেই বিতর্ক ছাপিয়ে সবাই বুস্টার ডোজের পেছনেই ছুটছে।
করোনা টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের পর বুস্টার ডোজ কীভাবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে সহায়তা করে, সেটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে—
বিশ্বব্যাপী করোনার সর্বশেষ ধরন অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আগেই মনে হয়েছিল, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বুস্টার ডোজ প্রয়োজন হতে পারে। টিকা নিলে গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে সেরে ওঠা সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল।
নতুন গবেষণা বলছে, ‘আমাদের শরীর যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয়, অ্যান্টিবডির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করে টিকা। তবে টিকা নিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা কমতে থাকে।
বিশ্বের যেসব দেশ আগেভাগেই জনগণকে ব্যাপকভাবে টিকার আওতায় এনেছে, ইসরায়েল সেসব দেশের অন্যতম। দেশটি বলছে, গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন মাস পর ভাইরাসটির বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা কমতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় ডোজের কয়েক সপ্তাহ পর টিকার যে কার্যকারিতা ছিল, ছয় মাস পর তা অনেকটাই কমে গেছে। কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে ছয় মাস পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে আগের চেয়ে ১৫ গুণ।
এক বা দুই ডোজ টিকা অধিকাংশ ব্যক্তিকে গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা দিলেও ধীরে ধীরে করোনার বিরুদ্ধে টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যখন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের একটি অংশ টিকার আওতার বাইরে থাকেন বা তাঁদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এমন অবস্থায় থাকে যে তাঁরা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অমিক্রনের কারণে বুস্টার ডোজ জরুরি হয়ে পড়েছে। অমিক্রনের মিউটেশন (রূপান্তর) দেখে মনে হচ্ছে, এটি চীনের উহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ধরনের বৈশিষ্ট্য থেকে আলাদা। বাজারে প্রচলিত টিকাগুলো উহান থেকে ছড়ানো ধরন অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছিল। আর এ কারণে এক বা দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর যাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, অমিক্রমনের বিরুদ্ধে তা তেমন কাজে দেবে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর শরীরে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, বুস্টার ডোজ নিলে তৈরি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে গবেষকেরা আশাবাদী যে তৃতীয় ডোজ নিলে ধীরে ধীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়বে। তবে এ বিষয়ে জোর দিয়ে বলার মতো সময় এখনো আসেনি বলে মনে করছেন তাঁরা।
এর আগে প্রাথমিক গবেষণাতেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, বুস্টার ডোজ নেওয়া হলে শরীরে অ্যান্টিবডির গুণগত মান বেড়ে যায়, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বেশি সক্রিয় হয়।
করোনার নতুন নতুন ধরনে কার্যকর হবে এমন টিকা নিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। আগামী বছরের মার্চ নাগাদ নতুন টিকা বাজারে আসতে পারে। কিন্তু বর্তমান টিকাগুলোর মান বাড়ানো হলেও কিছু দুর্বলতা থেকে যেতে পারে। কারণ, ভবিষ্যতে অমিক্রন অন্যভাবে দ্রুত সংক্রমণশীল ভাইরাসে পরিণত হতে পারে।