যুক্তরাজ্যে আইএসের সীমিত তৎপরতারই ইঙ্গিত?

লন্ডনের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে বুধবারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি গতকাল শ্রদ্ধা জানান এক নারী l এএফপি
লন্ডনের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে বুধবারের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি গতকাল শ্রদ্ধা জানান এক নারী l এএফপি

চলন্ত গাড়ি পথচারীদের ওপর তুলে দিয়ে সন্ত্রাসী নৃশংসতা বিশ্ববাসী আগেও দেখেছে। লন্ডনের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে হামলাটি এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই কৌশল সক্রিয়ভাবে তুলে ধরেছিল।
জার্মানির বার্লিনে এক শরণার্থী গত বছরের ডিসেম্বরে বড়দিনের সামগ্রীর বাজারের ভেতরে ট্রাক চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করেন। তার আগে সে বছরেরই জুলাইয়ে ফ্রান্সের নিস সৈকতে বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানে এক ব্যক্তি ট্রাক চালিয়ে দিয়ে ৮৬ জনকে মেরে ফেলেন। ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় আইএস এসব হামলায় অনুপ্রেরণা দিয়েছিল বলে ইঙ্গিত মেলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ছাত্র গাড়ি চালিয়ে ও ছুরি মেরে ১৩ জনকে জখম করেছিলেন। তবে
তাঁর উদ্দেশ্য এবং যোগসাজশ অনেকটা অস্পষ্ট।
এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন নয়, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন হামলার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৪ সালে আইএসের প্রধান মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-আদনানি বিশেষত পুলিশ বা সেনাসদস্যদের ওপর হামলা চালাতে পশ্চিমা বিশ্বে সমমনা লোকজনের প্রতি আহ্বান জানান। মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে যুদ্ধ করার পরিবর্তে তাঁরা যেন ইউরোপ-আমেরিকায়ই এ ধরনের আক্রমণ চালান—আইএস নেতা আল-আদনানি সেরকমই অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। গাড়ি চালিয়ে তাড়া করাসহ হত্যার কয়েকটি বিকল্প কায়দাও বাতলে দিয়েছিলেন তিনি। আল-আদনানি ২০১৬ সালে নিহত হন।
আদনানি তাঁর ২০১৪ সালের ওই আহ্বানে ফ্রান্সের প্রতিও ইঙ্গিত করেছিলেন। দেশটিতে সে বছরই দুটি গাড়ি-হামলা হয়। তিনি আর যেসব দেশে হামলার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, তার মধ্যে যুক্তরাজ্যও ছিল।
২০১৪ সালে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু হলে আইএস জরুরি ভিত্তিতে আবার হামলার ডাক দেয়। দৃশ্যত তাদের আশা ছিল, প্রচলিত কয়েকটি কৌশলেই যুক্তরাজ্যে হামলা চালাবে—যেমনটা ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিস এবং এক বছর আগে ব্রাসেলসে চালিয়েছিল।
উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্রিটিশ নাগরিক ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিলেও যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটিতে সংগঠনটি ঠিক ফ্রান্স বা বেলজিয়ামের মতো কার্যকর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারেনি। তারা বলছেন, যুক্তরাজ্যের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন খুব কঠোর। পাশাপাশি দেশটিতে বেলজিয়ামের মতো অবৈধ অস্ত্রের বাজার নেই। এটাই যুক্তরাজ্যে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করার অন্যতম চাবিকাঠি। গত ১৫ বছরে ইরাক, আফগানিস্তান বা পশ্চিমা দেশে যত হামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করা তুলনামূলক সহজ ছিল।
গবেষণায় দেখা যায়, একক হামলাকারীদের অর্ধেক থেকে দুই-তৃতীয়াংশ তাঁদের পরিকল্পনার বিষয়ে আত্মীয়-পরিজনদের কাছে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অধিকাংশেরই সীমান্ত নেটওয়ার্ক বা সক্রিয় ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। নিস এবং বার্লিনে হামলাকারীদের সহযোগীদের আটক করা হয়েছে।
ইসরায়েল এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডেও গাড়ি চালিয়ে প্রাণঘাতী হামলার দৃষ্টান্ত রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা ইহুদি লক্ষ্যবস্তুর ওপর এ ধরনের হামলা করেছে। এই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে চীনেও। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম উইঘুর জঙ্গিরা একাধিক হামলায় গাড়ি এবং ছুরি ব্যবহার করেছে। যুক্তরাজ্যে কখন এ ধরনের হামলা হয়, নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অনেক দিন ধরেই তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁদের বিবেচনায় যুক্তরাজ্যের প্রতি হুমকির মাত্রাটা ছিল গুরুতর।
বড় ধরনের হামলা করাটা যখন কৌশলগত কারণে কঠিন হয়ে পড়ে, জঙ্গিরা তখন ছোট ছোট হামলার ওপর গুরুত্ব বাড়াতে শুরু করে। আল-কায়েদাও একই কৌশল নিয়েছিল।