‘সাংবাদিককে ধরতে’ বিমান ঘুরিয়ে নিল বেলারুশ

সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচ
ছবি: রয়টার্স

সরকার সমালোচক একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের জন্য বেলারুশ কর্তৃপক্ষ গ্রিস থেকে লিথুয়ানিয়াগামী একটি ফ্লাইট ঘুরিয়ে নিয়েছে তাদের দেশে। বিমানে বোমা থাকার কথা বলে তারা ফ্লাইটটি ঘুরিয়ে নেয় বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বেলারুশের নেক্সটা মিডিয়া নেটওয়ার্ক বলেছে, ওই ফ্লাইটে তাদের সাবেক সম্পাদক রোমান প্রোতাসেভিচ ছিলেন, তাঁকে আটক করা হয়েছে।

বেলারুশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে, বোমা আতঙ্কে বিমানটি বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ঘুরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে তাতে কোনো বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। বেলারুশের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুলে শাস্তি দাবি করেছে তারা। ইউরোপজুড়ে রাজনৈতিক নেতারা এরই মধ্যে এ ঘটনায় ইইউ ও ন্যাটোর হস্তক্ষেপ চেয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বেলারুশ সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘নজিরবিহীন’ এই পদক্ষেপের ‘গুরুতর পরিণতি’ হবে।

বেলারুশের বিরোধী নেতা স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়াও সাংবাদিক প্রোতাসেভিচের মুক্তি দাবি করেছেন। গত বছর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর কাছে পরাজিত হন স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া। ওই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জালিয়াতি হয় বলে অভিযোগ করে আসছেন তিনি।

১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশ শাসন করে আসা ৬৬ বছর বয়সী লুকাশেঙ্কো গত বছর আগস্টের ওই নির্বাচনের পর থেকে ভিন্নমতাবলম্বী ও সমালোচকদের ওপর ব্যাপক দমন–পীড়ন চালাচ্ছেন। অনেক বিরোধী নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন অথবা স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়ার মতো কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

ওই নির্বাচন এবং তার পরবর্তী সময়ে বেলারুশের বিরোধীদের পক্ষে বড় ভূমিকা রেখেছিল নেক্সটা মিডিয়া। টেলিগ্রাম চ্যানেলের পাশাপাশি টুইটার ও ইউটিউবে তাদের খবর প্রকাশিত হয়।

স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া জানান, লুকাশেঙ্কো সরকার ২৬ বছর বয়সী রোমান প্রোতাসেভিচের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনার পর ২০১৯ সালে দেশ ছাড়েন তিনি। এরপর নেক্সটা মিডিয়ার মাধ্যমে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর প্রকাশ করেন তিনি।

বেলারুশ কর্তৃপক্ষ প্রোতাসেভিচকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করায় দেশে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্ভেতলানা টিকানোভস্কিয়া।
ফ্লাইট ঘোরানো হলো যেভাবে

রায়ান এয়ারের এফআর ৪৯৭৮ ফ্লাইটটি রোববার গ্রিসের এথেন্স থেকে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে যাচ্ছিল। লিথুয়ানিয়া সীমান্তে প্রবেশের অল্প কিছুক্ষণ আগে ফ্লাইটি পূর্ব দিকে মিনস্কে ডাইভার্ট করা হয়। বিমানে ১৭১ জন যাত্রী ছিলেন বলে গ্রিস ও লিথুয়ানিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে রায়ান এয়ার বলেছে, বেলারুশ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বিমানের নাবিকদের বার্তা পাঠানো হয় যে উড়োজাহাজে নিরাপত্তা হুমকিমূলক কিছু রয়েছে এবং তারা ফ্লাইটটি নিকটবর্তী মিনস্ক বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে নিতে বলে।

ফ্লাইটরাডার২৪ এর ওয়েবসাইটে ফ্লাইটটির পথপরিক্রমা দেখে জানা যায়, যখন সেটি ঘোরানো হয় তখন মিনস্কের চেয়ে ভিলনিয়াসের কাছে ছিল।

রায়ান এয়ার বলেছে, বিমানে তল্লাশি চালিয়ে কিছুই পাওয়া যায়নি। পাঁচ ঘণ্টা পর বিমানবন্দর ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।