সিঙ্গাপুরে ৮ বাংলাদেশি আটক, দেশে গ্রেপ্তার ৫

ইসলাম শরিফুল (২৭), মামুন লিয়াকত আলী (২৯), মো. জাবেদ কায়সার হাজী নুরূ​ল ইসলাম সওদাগর (৩০), মিয়া রুবেল (২৬), জামান দৌলত (৩৪), সোহেল হাওলাদার ইসমাইল হাওলাদার (২৯),সোহাগ ইব্রাহিম (২৭) ও রহমান মিজানুর (৩১) (ওপরে বাম থেকে)। ছবি: সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ইসলাম শরিফুল (২৭), মামুন লিয়াকত আলী (২৯), মো. জাবেদ কায়সার হাজী নুরূ​ল ইসলাম সওদাগর (৩০), মিয়া রুবেল (২৬), জামান দৌলত (৩৪), সোহেল হাওলাদার ইসমাইল হাওলাদার (২৯),সোহাগ ইব্রাহিম (২৭) ও রহমান মিজানুর (৩১) (ওপরে বাম থেকে)। ছবি: সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দেশে ফিরে গিয়ে গুপ্তহত্যাসহ সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে আট বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। গত এপ্রিলে তাঁদের আটক করা হয় বলে আজ মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এদিকে একই কারণে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরত পাঠানো পাঁচ বাংলাদেশিকে আজ রাজধানীর বনশ্রীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব ব্যক্তি একটি গোপন দলের সদস্য। গত মার্চে সিঙ্গাপুরে রহমান মিজানুর নামের এক বাংলাদেশি একটি গোপন সংগঠন গড়ে তোলেন। নাম দেন ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ (আইএসবি)। আটক হওয়া ব্যক্তিরা এই সংগঠনের সদস্য। গত এপ্রিলে সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিজ দেশে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ষড়যন্ত্র করা হয়। সন্দেহভাজন এসব ব্যক্তির মূল পরিকল্পনা ছিল সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া। তাঁদের কাছ থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং সরকারি ও সেনা কর্মকর্তাদের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। এসব কর্মকর্তাকে হামলার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এমনকি তাঁদের কাছে যেসব অস্ত্র পাওয়া গেছে, সেসবের সঙ্গে আইএস ও আল-কায়েদা সদস্যদের ব্যবহৃত অস্ত্রের মিল রয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ৩১ বছর বয়সী মিজানুর একজন দক্ষ কর্মীর পাসধারী। আর অন্য সাতজন নিচ পর্যায়ের কর্মী ছিলেন। তাঁরা নির্মাণ ও জাহাজশিল্প কারখানায় কাজ করতেন। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, আটক হওয়া একজন বলেছেন, আইএসবির আরও দুই সদস্য বাংলাদেশে রয়েছে। এই সংগঠনটি বাংলাদেশ ​থেকে আরও অনেককে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিল। পাশাপাশি দেশে ফিরে হামলা চালানোর লক্ষ্যে অস্ত্র কেনার জন্য তাঁরা অর্থ জোগাড় করছিলেন। মন্ত্রণালয় সেই অর্থ জব্দ করেছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ​মিজানুর বলেছেন, আইএসের নির্দেশ পেলে তিনি দেশের যেকোনো জায়গায় হামলা চালাতেন। তবে সিঙ্গাপুরও হামলার লক্ষ্য ছিল কি না, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

আইএস ও আল-কায়েদার মতো উগ্র জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সমর্থন করার অভিযোগে গত জানুয়া​রিতে সিঙ্গাপুর সরকার ২৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে। এঁদের মধ্যে ২৬ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এই ২৬ জনের মধ্যে ১৪ জন এখন কারাগারে। তবে তাঁরা আইএস বা আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন। এ​এফপি ও রয়টার্স

বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ৫

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, হত্যাসহ সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৯ এপ্রিল পাঁচ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠায় সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। আজ অভিযান চালিয়ে মিজানুর রহমান, রানা, আলমগীর, তানজিমুল ইসলাম ও সন্তু খান নামের ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা আনসারুউল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তাঁদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ডে নেওয়ার পর পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

হাইকমিশনারের বক্তব্য
সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১৩ জনকে আটক করে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে পাঁচজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর আটজনকে সিঙ্গাপুরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। এ ব্যাপারে সিঙ্গাপুরকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, এর আগে সন্দেহভাজন ২৭ বাংলাদেশি জঙ্গিকে আটক করেছিল সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। এবারের ১৩ জনকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত মোট ৪০ জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশি জঙ্গিকে আটক করা হয়।