কাতারের উপহারের উড়োজাহাজ গ্রহণের ঘোষণা পেন্টাগনের, সংস্কারের পর চড়বেন ট্রাম্প

কাতারের মালিকানাধীন একটি ব্যক্তিগত বোয়িং উড়োজাহাজ। ওয়েস্ট পাম বিচ, ফ্লোরিডা, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ছবি: এপি

কাতারের কাছ থেকে একটি বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ গ্রহণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এখন পেন্টাগন এটির উন্নয়ন করবে।

উড়োজাহাজটিতে উপযুক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ও প্রেসিডেন্ট যাতে এতে নির্বাহী কাজ পরিচালনা করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় উন্নয়নকাজের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এটি ব্যবহার করবেন, এমনটাই বলেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক মুখপাত্র।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিমানবাহিনীকে উড়োজাহাজটি সংস্কারের পরিকল্পনা শুরু করতে বলেছেন। আমরা সেটি করতে প্রস্তুত।
ট্রয় মিঙ্ক, মার্কিন বিমানবাহিনীর সেক্রেটারি

গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র শন পারনেল বলেন, ‘সব সরকারি নিয়মকানুন অনুসরণ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাতারের কাছ থেকে একটি বোয়িং ৭৪৭ গ্রহণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পরিবহনে ব্যবহৃত উড়োজাহাজে যে ধরনের যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা থাকা দরকার, সেটি নিশ্চিত করতে প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর কাজ করবে।’

যদিও এ আলোচনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একজন দাবি করেছেন, এ উড়োজাহাজ–সংক্রান্ত চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, আইনি দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।

ট্রাম্প প্রশাসন কাতারের কাছ থেকে উড়োজাহাজটি কিনেছে কি না, সে বিষয়ে শন পারনেল কোনো তথ্য দেননি। তিনি এ বিষয়ে আর কিছু জানার থাকলে মার্কিন বিমানবাহিনীর কাছে প্রশ্ন করতে বলেন।

সিএনএন এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ওয়াশিংটনে কাতারের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

পেন্টাগন কাতারের কাছ থেকে উড়োজাহাজ গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীকে কাতার একটি উড়োজাহাজ দিচ্ছে। এটি একটি দারুণ বিষয়।’

যদিও এ আলোচনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একজন দাবি করেছেন, চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, আইনি দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।

এ বিষয়ে গত সোমবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানি ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘উড়োজাহাজ–সংক্রান্ত বিষয়টি দুই দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া লেনদেনের অংশ, যা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও আইন মেনে করা হয়েছে। এটি সেই সহযোগিতার অংশ, যা আমরা দশক ধরে একসঙ্গে করে আসছি।’

পরদিন গত মঙ্গলবার মার্কিন বিমানবাহিনীর সেক্রেটারি ট্রয় মিঙ্ক ও চিফ অব স্টাফ ডেভিড আলভিন আইনপ্রণেতাদের বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বিমানবাহিনীকে উড়োজাহাজটি সংস্কারের পরিকল্পনা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। মিঙ্ক বলেন, ‘আমরা সেটি করতে প্রস্তুত।’

আরও পড়ুন

বিমানবাহিনীর এক মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, একটি বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজকে প্রেসিডেন্টকে বহনের উপযোগী করে গড়ে তুলতে বিমানবাহিনী একটি চুক্তি অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ চুক্তিসংক্রান্ত বিস্তারিত রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য।’

চলতি মাসের শুরুতে প্রথম কাতারের কাছ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি উড়োজাহাজ পাওয়ার খবর প্রকাশ পায়, যা তুমুল রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়। নীতিগত কারণে ডেমোক্রেটিক ও কয়েকজন প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতা এ বিষয়ে সম্ভাব্য চুক্তির বিরোধিতা করেছেন।

উড়োজাহাজ–সংক্রান্ত বিষয়টি দুই দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া একটি লেনদেনের অংশ, যা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও আইনগতভাবে করা হয়েছে। এটি সেই সহযোগিতার অংশ, যা আমরা দশক ধরে একসঙ্গে করে আসছি।
মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানি, কাতারের প্রধানমন্ত্রী

ট্রাম্প বারবার উড়োজাহাজটিকে ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’–এর সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি একে কাতারের দেওয়া ‘উপহার, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তবে সোমবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ পাওয়ার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ট্রাম্প প্রশাসনই প্রথম কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।

ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রেসিডেন্টকে পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত সরকারি উড়োজাহাজটি বদলে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেটি পুরোনো হয়ে গেছে। এ জন্য বিমানবাহিনী মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু নতুন একটি উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে বোয়িং দুই বছর সময় চায় বলে জানান কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুতই বিকল্প উড়োজাহাজ পেতে চাইছিল, যে কারণে বিমানবাহিনী থেকে সম্ভাব্য বিকল্পের খোঁজ চলছিল। সেই সময় ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে সম্ভাব্য যথাযথ উড়োজাহাজের একটি তালিকা খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন।

চলতি মাসের শুরুতে প্রথম কাতারের কাছ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি উড়োজাহাজ পাওয়ার খবর প্রকাশ পায়, যা তুমুল রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নীতিগত কারণে ডেমোক্রেটিক ও কয়েকজন প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতা সম্ভাব্য ওই চুক্তির বিরোধিতা করেছেন।

সিএনএনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিমানবাহিনী যোগাযোগ করার পর বোয়িং কর্তৃপক্ষ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের তাদের এমন কয়েকটি গ্রাহক দেশের তালিকা দেয়, যাদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী উড়োজাহাজ পাওয়া ও অন্তর্বর্তী সময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। বোয়িংয়ের দেওয়া তালিকায় কাতারও ছিল।

হোয়াইট হাউসের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরও বলেন, হোয়াইট হাউস এ প্রস্তাবের পক্ষে আছে জানার পর পেন্টাগন কাতারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। শুরুর দিকের এই কথাবার্তা এগিয়ে নিতে সহায়তা করেন স্টিভ উইটকফ।

আরও পড়ুন

তবে শুরুতে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল, কাতারের সঙ্গে যেকোনো লেনদেন হবে উড়োজাহাজ বিক্রির মাধ্যমে, উপহার হিসেবে নয়, এমনটাই বলেছেন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।

ট্রাম্প প্রশাসনকে কাতারের এ উড়োজাহাজ হস্তান্তর কতটা নৈতিক ও আইনগতভাবে বৈধ, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এর বাইরে আরেকটি দেশের কাছ থেকে, তা সে যত মিত্রদেশই হোক না কেন, তাদের পুরোনো উড়োজাহাজে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও যোগাযোগ সরঞ্জাম স্থাপন এবং সেটির উন্নয়ন করা বিরাট ঝক্কির কাজ বটে।

এ নিয়ে বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ করতে দুই বছর সময় লেগে যেতে পারে এবং এতে উড়োজাহাজটির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি খরচ হতে পারে।

এ নিয়ে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ করতে দুই বছর লেগে যেতে পারে এবং এতে উড়োজাহাজটির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি খরচ হতে পারে।

উড়োজাহাজটির উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে সেটির মূল কাঠামো পর্যন্ত খুলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে নতুনভাবে তৈরি করতে হতে পারে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন