পৃথিবী থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে চিরহরিৎ বন। ব্রাজিলের আমাজন জঙ্গল উজাড়ও থামছে না। গত বছর সুইজারল্যান্ডের আয়তনের সমপরিমাণ চিরহরিৎ বন ধ্বংস করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে বনভূমির ওপর নজরদারি ব্যবস্থা গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ আজ মঙ্গলবার এ তথ্য তুলে ধরেছে।
গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ পরিচালনা করা হয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের (ডব্লিউআরআই) অধীনে। স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ বলছে, ২০২২ সালে প্রায় ৪১ হাজার বর্গকিলোমিটার চিরহরিৎ বনভূমি হারিয়েছে পৃথিবী। এর মধ্যে ব্রাজিল ৪৩ শতাংশ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ১৩ শতাংশ ও বলিভিয়া ৯ শতাংশ চিরহরিৎ বন ধ্বংসের জন্য দায়ী। অন্যদিকে গত বছর ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ কম বন ধ্বংস করা হয়েছে।
ব্রাজিলের বনভূমি ধ্বংস বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয় দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে। গত বছর নির্বাচনে হেরে পদ ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বনভূমি উজাড় ১৫ শতাংশ বেড়েছে দেশটিতে। অন্যদিকে কৃষি খাতের সম্প্রসারণ বলিভিয়ায় বনভূমি উজাড়ের বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্য বলছে, গত বছর চিরহরিৎ বন ধ্বংসের কারণে ২৭০ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়েছে। এটি এক বছরে ভারতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে নির্গত কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্যাসের সমান। বর্তমানের বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। কার্বন ডাই–অক্সাইড জলবায়ু সংকট বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে।
২০৩০ সাল নাগাদ বনভূমি উজাড় শূন্যের কোঠায় আনতে সম্প্রতি একমত হয়েছিল বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। এরপরও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বেশি চিরহরিৎ বন ধ্বংস হয়েছে। ডব্লিউআরআইয়ের কর্মকর্তা ফ্রান্সিস সেইমর বলেন, ‘২০২২ সালে যে বন উজাড় হয়েছে, তা কষ্ট দেওয়ার মতো। আমরা বন উজাড় অনেক কমিয়ে এনেছি—এমন আশা করেছিলাম।’
তবে সামগ্রিকভাবে বিশ্বে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বন উজাড় ১০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ। এরপরও এটা ২০৩০ সাল নাগাদ বনভূমি উজাড় বন্ধে যে পরিমাণ বন ধ্বংস কমানো প্রয়োজন, তার চেয়ে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার বেশি। এ নিয়ে ডব্লিউআরআইয়ের পরিচালক রড টেইলর বলেন, ‘আমরা পথ থেকে দূরে সরে গেছি এবং ভুল পথে চলছি।’