যুদ্ধ–সংঘাত আর জেন–জিদের বিক্ষোভে উত্তাল ছিল বিশ্ব

কাঠমান্ডু থেকে লিমা—২০২৫ সালে বৈষম্য, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এসেছিল ‘জেনারেশন জেড’ বা জেন-জি। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এসব স্থানীয় আন্দোলনকে এক সুতোয় গেঁথে এক বিশাল গণজাগরণে রূপ দিয়েছে তরুণ প্রজন্ম।

নেপালে তরুণদের বিক্ষোভছবি: রয়টার্স

বিদায় নিতে চলেছে ২০২৫। এ বছরটি যুদ্ধ উত্তাল, বিপ্লব আর বিক্ষোভের বছর। একই সঙ্গে এ বছর বাণিজ্য প্রতিযোগিতা, অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে সংশয় আর উদ্বেগ ছড়িয়েছে দেশে দেশে। কাঠমান্ডু থেকে লিমা—২০২৫ সালে বৈষম্য, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এসেছিল ‘জেনারেশন জেড’ বা জেন-জি। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এসব স্থানীয় আন্দোলনকে এক সুতোয় গেঁথে এক বিশাল গণজাগরণে রূপ দিয়েছে তরুণ প্রজন্ম। ফিরে দেখা যাক ২০২৫ সালের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা—

পথে নেমেছে তরুণ প্রজন্ম

ভিন্ন মহাদেশ, ভিন্ন সংস্কৃতি। লিমার নিরাপত্তাহীনতা থেকে আন্তানানারিভোর লোডশেডিং—তরুণদের প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতায় ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তবে ২০২৫ সালে একটি অভিন্ন অভিজ্ঞতা তাদের এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়েছে। আর তা হলো ‘প্রতিবাদ’।

নব্বইয়ের দশকের শেষভাগ থেকে ২০১০-এর দশকের শুরুর দিকে জন্ম নেওয়া এই জেন-জি প্রজন্মের সবার মনেই ছিল জনবিচ্ছিন্ন অভিজাত শ্রেণির প্রতি তীব্র ক্ষোভ আর নিজেদের দাবি আদায়ের দৃঢ় সংকল্প।

হাজার মাইলের ব্যবধানে থাকা দেশগুলোয়ও দেখা গেছে একই দৃশ্য। তরুণদের মিছিল, হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড আর টিকটক বা ডিসকর্ড থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাল সব স্লোগান যেন এক সুতোয় গেঁথেছিল দেশগুলোকে। তাদের দাবিগুলো ছিল অত্যন্ত সাধারণ ও স্পষ্ট।

ফ্রান্সের স্কুল ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ ইন দ্য সোশ্যাল সায়েন্সেসের সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষণা পরিচালক মিশেল উইভিওরকা বলেন, ‘এই প্রজন্ম কেবল নিজেদের জন্যই লড়ছে না; বরং সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন নিশ্চিত করা এবং ক্ষমতার দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। এটি মূলত বিশ্বজনীন মানবিক মূল্যবোধ দ্বারা তাড়িত একটি আন্দোলন।’

আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল গ্রীষ্মের শেষে ইন্দোনেশিয়ায়। জাকার্তায় সংসদ সদস্যদের জন্য ন্যূনতম মজুরির চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি আবাসন ভাতার ঘোষণা আসতেই ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। মুহূর্তেই রাজপথ দখল করে নেন তাঁরা। এই মিছিলগুলো থেকে দ্রুতই একটি প্রতীক সামনে চলে আসে—বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাঙ্গা সিরিজ ‘ওয়ান পিস’-এর জলদস্যু পতাকা। এটিই হয়ে ওঠে জেন-জি বিদ্রোহের প্রধান প্রতীক।

সেপ্টেম্বরে নেপালে এই আন্দোলন এক নাটকীয় মোড় নেয়। ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের ভাইরাল ভিডিওগুলোয় রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের (নেপো-কিডস) বিলাসিতা প্রকাশ পেতে থাকে। এর প্রতিবাদ ঠেকাতে সরকার প্রায় ২০টি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়।

ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে কাঠমান্ডুতে, যেখানে পার্লামেন্ট ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। টানা দুই দিন ভয়াবহ দাঙ্গায় অচল হয়ে পড়ে পুরো দেশ। আন্দোলনের এই ঢেউ আছড়ে পড়ে আফ্রিকায়। মাদাগাস্কারের রাজধানী আন্তানানারিভোতে তরুণদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে কেবল পানি ও বিদ্যুৎ–সংকটের প্রতিবাদই নয়, বরং খোদ প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠে তখন স্লোগান ছিল—‘আমরা বিলাসিতা চাই না, আমরা শুধু মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার চাই।’ এই মিছিলে শামিল হওয়া তরুণদের বড় অংশই ছিলেন শিক্ষার্থী এবং নিম্ন আয়ের কর্মী।

মরক্কোতে এই গণজাগরণ ভিন্ন রূপ নেয়। দেশটির কান্ট্রি কোড অনুসারে গঠিত ‘জেন-জি ২১২’ নামক একটি গ্রুপ ডিসকর্ডের মাধ্যমে সুসংগঠিত হয়। তারা শিক্ষা সংস্কার, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলোকে সামনে এনে বিক্ষোভের ডাক দেয়।

অন্যদিকে, আমেরিকা মহাদেশে লিমো থেকে কুসকো পর্যন্ত রাজপথে নামে পেরুর তরুণেরা। তাদের লড়াই ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি এবং ইতিহাসের চরম নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে।

কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড যুদ্ধ

২০২৪ সালের অলিম্পিকের সেই সম্প্রীতির আবহ ফিকে হয়ে এসেছিল ২০২৫-এ। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথে বছরটি ছিল চরম অগ্নিপরীক্ষার। বিশেষ করে জুলাই মাসে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বিশ্ববাসীকে হতাশ করেছে। থাইল্যান্ডের তুলনায় কম্বোডিয়া আয়তন ও সামরিক শক্তিতে অনেক ছোট হলেও দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এবার চরম আকার ধারণ করে।

ডাঙ্গরেক পর্বতমালায় অবস্থিত প্রাচীন হিন্দু মন্দির ‘প্রাসাদ তা মুয়েন থম’-এর মালিকানা নিয়ে শুরু হওয়া এই লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারায় এবং বাস্তুচ্যুত হয় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক।

কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড সীমান্তে গোলাগুলি
ছবি: রয়টার্স

উত্তপ্ত এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যস্থতা করেন এবং দুই দেশকে হুঁশিয়ারি দেন, যুদ্ধ না থামলে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরে কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু নভেম্বরে স্থলমাইন বিস্ফোরণে চার থাই সেনার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আবারও ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

চলতি মাসের শুরুতে থাই যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ায় বোমা হামলা চালালে সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। অবশ্য এখন আবার দুই দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।

প্রথম আমেরিকান পোপ লিও চতুর্দশ

ক্যাথলিক গির্জার দুই হাজার বছরের ইতিহাসে যা আগে কখনো ঘটেনি, ২০২৫ সালে বিশ্ববাসী তারই সাক্ষী হলো। গত মে মাসে প্রথমবারের মতো কোনো উত্তর আমেরিকান, বিশেষ করে মার্কিন নাগরিক হিসেবে পোপ নির্বাচিত হলেন পোপ লিও চতুর্দশ (পূর্বনাম রবার্ট প্রিভোস্ট)।

লিও শিকাগোতে বড় হয়েছেন এবং ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। কর্মজীবনের বড় একটা সময় তিনি পেরুতে মিশনারি হিসেবে কাটিয়েছেন এবং পরবর্তী সময়ে চিকলায়োর বিশপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পোপ লিও চতুর্দশ
ছবি: রয়টার্স

২০২৩ সালে পোপ লিও রোমে ফিরে ‘ডিকাস্টারি ফর বিশপস’-এর প্রধান হন এবং কার্ডিনাল পদমর্যাদা পান। ১২৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত অগাস্টিনীয় ধর্মীয় সংঘ থেকে তিনিই প্রথম পোপ হলেন।

ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ

২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন কাশ্মীরকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। দীর্ঘদিনের সেই পুরোনো সংঘাত ২০২৫ সালের মে মাসে এসে আবারও এক ভয়াবহ রূপ নেয়। জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর এই উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছায়।

নয়াদিল্লির অভিযোগ, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার মূল হোতা পাকিস্তানি সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘লস্কর-ই-তাইয়েবা’ এই হামলার নেপথ্যে ছিল। ২০০৮ সালে ভারত সামরিকভাবে কোনো পাল্টা জবাব না দিলেও, এবার তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তথাকথিত ‘জঙ্গি অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়।

জবাবে পাকিস্তানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করে এবং ভারতের দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি জানায়। ভারতও পাল্টা লাহোরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র এই লড়াই স্থায়ী হয়েছিল তিন দিন।

ভারত–পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে
ছবি: রয়টার্স

শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও সামরিকভাবে কেউ বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তাঁর মধ্যস্থতাতেই এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এই দাবি সমর্থন করলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এই সংঘাতের পর ওয়াশিংটন ও দিল্লির মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। বিশেষ করে মোদি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার বিষয়টি স্বীকার না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।

এআই প্রতিযোগিতায় নতুন মোড়

২০১৭ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন—এই খাতে যে নেতৃত্ব দেবে, সে-ই হবে আগামীর বিশ্বশাসক। ইতিহাস তাঁর এই দাবিকে কতটা সত্য প্রমাণ করবে, তা তোলা থাক সময়ের হাতে। তবে বর্তমানে পরাশক্তিগুলোর কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা পুতিনের কথাকেই ধ্রুব সত্য ধরে নিয়েছে।

বর্তমানে এআই দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন; বাকি বিশ্ব তাদের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে। বছরের শুরুতেই জানুয়ারি মাসে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘ডিপসিক’বিশ্বকে চমকে দেয়। তারা এমন একটি এআই মডেল উন্মোচন করে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সেরা মডেলগুলোর সমকক্ষ। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এই মডেল তৈরিতে তারা এনভিডিয়ার সেই অত্যাধুনিক চিপগুলো ব্যবহার করেনি, যেগুলোকে এআই প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য মনে করা হতো।

বিশেষজ্ঞরা ডিপসিকের এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টিকে সতর্কবার্তা হিসেবে নিয়েছে এবং এআই খাতে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করেছে। এআই প্রযুক্তির মূল চাবিকাঠি হলো সেমিকন্ডাক্টর চিপ। এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর বাইডেন আমলের বিধিনিষেধগুলো বজায় রাখার পাশাপাশি আরও কঠোর করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা উন্নত চিপের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এআই প্রতিযোগিতা বাড়ছে
ছবি: রয়টার্স

তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্প তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তিনি এনভিডিয়াকে তাদের শক্তিশালী ‘এইচ-২০০’ চিপ চীনের কাছে বিক্রির অনুমতি দেন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

সমালোচকদের মতে, চীনের কাছে এই প্রযুক্তি বিক্রি করার অর্থ হলো মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া। তবে এই বিতর্কের আড়ালে একটি মৌলিক প্রশ্ন হারিয়ে যাচ্ছে—এআই যুদ্ধে শুধু শক্তিশালী মডেল তৈরি করলেই হবে না, বরং কে দৈনন্দিন কাজে এই প্রযুক্তিকে বেশি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারছে, সেটাই হবে আসল মানদণ্ড। আর এই জায়গায় চীন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। এআই কি শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক বিশাল বুদ্‌বুদ হয়ে দেখা দেবে, যা ফাটলে ধসে পড়বে বাজার? নাকি এটি এমন এক অভাবনীয় সাফল্য আনবে, যার ফলে কোটি কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে?

সুদানে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ

সুদানে প্রায় তিন বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধকে বর্ণনা করার জন্য সম্ভবত ‘মর্ত্যের নরক’ শব্দগুচ্ছই সবচেয়ে উপযুক্ত। জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সুদানি সশস্ত্র বাহিনী এবং মোহাম্মদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের মধ্যে এই লড়াই চলছে।

২০২১ সালের অক্টোবরে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই দুই নেতা ক্ষমতা দখল করলেও পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধ তৈরি হয়। বর্তমানে কোনো পক্ষই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি এবং দেশের একাধিক ফ্রন্টে লড়াই চলছে। এসএএফ লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত পোর্ট সুদান থেকে সরকার পরিচালনা করছে এবং উত্তর ও পূর্বের প্রধান শহরগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারাই বর্তমানে সুদানের বৈধ সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।

সুদানে গৃহযুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে
ছবি: রয়টার্স

অন্যদিকে, আরএসএফ দারফুরসহ মধ্য ও পশ্চিম সুদানের বেশির ভাগ এলাকা নিজেদের কবজায় রেখেছে। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দুই পক্ষই বিদেশি শক্তির সমর্থন পাচ্ছে। এসএএফকে সমর্থন দিচ্ছে মিসর, রাশিয়া ও তুরস্ক; অন্যদিকে আরএসএফের পেছনে রয়েছে চাদ, ইথিওপিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো।

যুদ্ধের মানবিক বিপর্যয় এখন বর্ণনাতীত। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দেশের বড় একটি অংশ এখন দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি, অথচ প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার জোগান অত্যন্ত নগণ্য। গত অক্টোবরে দীর্ঘ ১৮ মাসের অবরোধের পর দারফুরে এসএএফের সর্বশেষ ঘাঁটি ‘এল ফাশের’ দখল করে নেয় আরএসএফ।

এল ফাশের শহরে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। সেখানে মহাকাশ থেকে রক্তের দাগ আর মরদেহের স্তূপ দেখা যাচ্ছিল। আপাতত এই গৃহযুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, সুদান শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যেতে পারে।

গাজায় শান্তি পরিকল্পনা

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত অক্টোবর মাসে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। চলতি বছর এটি ছিল দ্বিতীয় দফার যুদ্ধবিরতি। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, যার ফলে গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি পায় এবং জিম্মি ও বন্দিবিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়।

তবে মার্চের মাঝামাঝিতে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধে আবারও শুরু হয় লড়াই। অক্টোবরের এই নতুন চুক্তিতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতার, তুরস্ক ও মিসরও এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ছিল। এই শান্তি পরিকল্পনার তিনটি প্রধান ধাপ নির্ধারণ করা হয়েছে।

গাজার যুদ্ধবিরতি এখনো নাজুক
ছবি: রয়টার্স

অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা এবং ইসরায়েলি বাহিনীর নির্দিষ্ট সীমারেখায় পিছু হটা; হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজায় একটি ‘আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী’ মোতায়েন এবং ফিলিস্তিনি শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন ও গাজার পুনর্নির্মাণ।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী প্রথম ধাপটি সম্পন্ন হয়েছে। তবে ইসরায়েলের অনড় অবস্থান—সর্বশেষ জিম্মি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তারা দ্বিতীয় ধাপে যাবে না। গত নভেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন দিয়ে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের অনুমোদন দেয় এবং গাজার প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার জন্য একটি ‘ফিলিস্তিনি কমিটি’ গঠনের আহ্বান জানায়।

তবে এত কিছুর পরও স্থায়ী শান্তি এখনো এক অলীক স্বপ্ন। হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণের কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না। অন্যদিকে ইসরায়েল আবারও গাজায় বিমান হামলা শুরু করেছে। এমনকি এখন পর্যন্ত কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনীতে সৈন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

চার বছরে ইউক্রেন যুদ্ধ

ইউক্রেন যুদ্ধ এখন চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে, কিন্তু ২০২৫ সালেও রণক্ষেত্রে শান্তির কোনো সুবাতাস মেলেনি। বরং বছরজুড়ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা আরও তীব্র হয়েছে। ইউক্রেনের শহরগুলোয় একের পর এক রুশ হামলায় বিপুল প্রাণহানির পাশাপাশি ধ্বংস হয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো।

গত মার্চ মাসে রাশিয়া তাদের কুরস্ক প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে, যা ২০২৪ সালের আগস্টে ইউক্রেন এক অতর্কিত অভিযানের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছিল। তবে ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি ছিল যৎসামান্য—পুরো বছরে তারা দেশটির মাত্র ১ শতাংশের কম এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে।

২০২৫ সালের জুনে ইউক্রেন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েবের’ মাধ্যমে। রাশিয়ার অভ্যন্তরে গভীরে পাঁচটি বিমানঘাঁটিতে এই গোপন ড্রোন হামলা চালানো হয়। এই হামলা ক্রেমলিনকে স্তব্ধ করে দিলেও যুদ্ধের সামগ্রিক সমীকরণে বড় কোনো বদল আনতে পারেনি।

ইউক্রেনের শহরগুলোয় একের পর এক রুশ হামলায় বিপুল প্রাণহানির পাশাপাশি ধ্বংস হয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো
ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক মহলে এখন বড় প্রশ্ন—এই যুদ্ধ আর কত দিন চলবে? বিশেষ করে ইউক্রেনের অবস্থান এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নড়বড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করেই বলেছেন, কিয়েভের হাতে জয়ের মতো ‘পর্যাপ্ত তাস’ নেই এবং তিনি দেশটিতে মার্কিন সহায়তা বাড়ানোর ঘোর বিরোধী।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিয়েভের পাশে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের শেষ ভাগে তারা ইউক্রেনকে ১০ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বিশাল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ট্রাম্প ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এমন এক যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে চাপ দিচ্ছেন, যা মূলত রাশিয়ার পক্ষেই যায়। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেন আরও বেশি কিছু পাওয়ার আশায় এই সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

২০২৫ সালের জুনে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাতটি ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। তবে এই সংঘাতের বীজ বপন করা হয়েছিল বহু বছর আগেই। ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অজুহাত তুলে ইসরায়েল দীর্ঘকাল ধরেই ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে উসকানি দিয়ে আসছিল। ইরান বরাবরই বলে আসছে, তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে ব্যবহারের জন্য পরমাণু কর্মসূচি চালাচ্ছে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা এবং আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০২৫ সালের জুনে ইরান অল্প সময়ের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে পারে ইসরায়েল ভুয়া অভিযোগ তুলে তথাকথিত ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়ে ইরানে হামলা চালায়।

ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি এবং কমান্ড সেন্টারগুলোয় ভয়াবহ বিমান হামলা চালানো হয়
ছবি: রয়টার্স

ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি এবং কমান্ড সেন্টারগুলোয় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল হয়। একই সঙ্গে দেশটির শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটে। ইরান পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েলে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে।

এরপর ২২ জুন মার্কিন বাহিনী সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর অংশ হিসেবে বি-২ বোমারু বিমান এবং টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলা চালানো হয়। ২৪ জুন উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে লড়াই থামে। তবে দুই দেশের মধ্যকার মূল রাজনৈতিক বিরোধগুলো এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে তাই যুদ্ধের মেঘ এখনো কাটেনি।

শুল্ক যুদ্ধ

২০২৪ সালের শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য এক নতুন অস্থিরতার মুখে পড়ে। ২০২৫ সালের শুরুতেই তিনি মেক্সিকো, কানাডা এবং চীনের ওপর চড়া শুল্কা আরোপের ঘোষণা দিয়ে এক বিশাল ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ উসকে দেন।

ট্রাম্পের যুক্তি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ‘চুরি যাওয়া’ সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং বাণিজ্যঘাটতি কমাতেই এই কঠোর পদক্ষেপ। ১ ফেব্রুয়ারি তিনি তিনটি পৃথক নির্বাহী আদেশে সই করেন, যা আন্তর্জাতিক বাজারে এক প্রলয়ংকরী সুনামির মতো আছড়ে পড়ে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হয়।

জবাবে কানাডা ও মেক্সিকোও মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তবে আলোচনার টেবিলে কিছুটা নমনীয় হয়ে কানাডা ও মেক্সিকো পরে সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিলে সেই উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যিক সংঘাত। এপ্রিল মাসে ট্রাম্প ‘লিবারেশন ডে’ শুল্কনীতি ঘোষণা করলে চীনের ওপর মার্কিন শুল্কের হার দাঁড়ায় রেকর্ড ১২৫ শতাংশে।

আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে শুল্ক বাড়িয়েছেন ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে বেইজিংও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে এবং গুগলসহ বেশ কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনা। ২০২৫ সাল শেষে তিনি বলতেই পারেন—‘কথা দিয়েছিলাম, কথা রেখেছি’।

তবে ট্রাম্পের এই পরিবর্তনের জোয়ার আছড়ে পড়েছে বিশ্বের প্রতিটি কোণায়। দায়িত্ব নেওয়ার আগেই গ্রিনল্যান্ড কেনা, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানো কিংবা পানামা খালের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মতো বিতর্কিত দাবি তুলে তিনি বিশ্ব মঞ্চে অস্থিরতা তৈরি করেছিলেন। অভিষেক দিনেই ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। একই সঙ্গে শরণার্থী প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ এবং মাদক কার্টেলগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেন।

ক্ষমতার প্রথম মাসেই ট্রাম্প ইউএসএআইডি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং সরকারি খরচ কমাতে কয়েক হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেন। ২ এপ্রিল দিনটিকে ট্রাম্প ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ এবং নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। তাঁর দাবি, ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোকে তাদের জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করতে রাজি করানো এবং বিদেশের আটটি যুদ্ধ বন্ধ করা তাঁর বড় সাফল্য।

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ব্যর্থ বলা চলে। উল্টো ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের হুমকি দিয়ে নিজের যুদ্ধবিরোধী সমর্থকদের অবাক করেছেন তিনি।

তথ্যসূত্র: ফ্রান্স ২৪, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন