বিপর্যয়কর উষ্ণায়নের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

রয়টার্স ফাইল ছবি

মানুষের কর্মকাণ্ড পৃথিবীকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে যা ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি। এতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বাস্তুসংস্থানে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এসব কথা উঠে এসেছে  জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিজ্ঞানীদের প্যানেল-আইপিসিসির এক প্রতিবেদনে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। বিপর্যয়কর উষ্ণায়ন এড়াতে আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে যে হারে কার্বন নিঃসরণ ঘটছে তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের যে সীমা রয়েছে, তা অতিক্রম করবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নাগালের বাইরে চলে যাবে। এই সীমার মধ্যে উষ্ণায়ন রাখা গেলে তা বিশ্বের প্রবালপ্রাচীর ও আর্কটিক সুরক্ষার বরফের স্তর টিকে থাকবে। অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলা ঠেকিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিও তাতে এড়ানো যাবে।

নতুন এই প্রতিবেদনকে ‘মানবজাতির টিকে থাকার নির্দেশিকা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এই প্রতিবেদনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সরকারগুলোকে এতে উঠে আসা বিষয়গুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপর্যয়ের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ ঝুঁকি এড়াতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সব৴শেষ এই বড় পরিসরের প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য সুইজারল্যান্ডে এক বৈঠকে বসেছিলেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হচ্ছে, যত দ্রুত আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে পারব তত দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে পারব।  

প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, সব দেশকেই এক দশকের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে আরও তৎপর হতে হবে। এসব লক্ষ্যমাত্রা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ দ্রুত কমিয়ে আনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সবার জন্য একটি বাসযোগ্য ও টেকসই ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার সুযোগ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আমাদের এ সুযোগ এখন কাজে লাগাতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় আরও আট বছর আগে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল দেশগুলো। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে এই ঐকমত্যে পৌঁছায় তারা। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যাতে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয় সে ব্যাপারেও সরকারগুলো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্ত পৃথিবীর উষ্ণতা ইতিমধ্যে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে।    

নতুন এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)। বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে এ প্যানেল গঠন করা হয়। আইপসিসি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে জাতিসংঘকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। আইপিসিসির নতুন এই প্রতিবেদনের বিষয়েও একমত হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব দেশ।

২০১৮ সালে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণ, প্রভাব ও সমাধান নিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছিল। নতুন এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল এসব বিষয়কে এক করে এক জায়গায় নিয়ে আসা। এতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যেসব প্রভাব ইতিমধ্যেই বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে এবং এসব প্রভাব দিন দিন আরও কতটা বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে, তার বিস্তারিত উঠে এসেছে। এ জন্য প্রতিবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার কথা বলছে জাতিসংঘ।

আরও পড়ুন