মার্চে রেকর্ড গরমের পর আশঙ্কা আরও বাড়ছে

গত মাসে রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম মার্চ মাস ছিলছবি: রয়টার্স

চলতি বছরের শেষ নাগাদ তাপমাত্রা না কমলে জলবায়ু পরিবর্তন নতুন কোনো পর্যায়ে প্রবেশের আশঙ্কা আছে। একজন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী বিবিসিকে এ তথ্য দিয়েছেন।
তথ্যে দেখানো হয়েছে, গত মাসে রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম মার্চ মাস ছিল। এই রেকর্ডের পরই এবার নতুন আরেকটি সতর্কতা দেখানো হলো।

নতুন এই সতর্কতা মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তাঁদের ধারণা, বিশ্ব আরও দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারে।

এল নিনো প্রাকৃতিকভাবে তৈরি একটি জলবায়ুর ধরন, যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য, সুপেয় পানি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’।

টানা তিন বছর ‘লা নিনা’র দাপটের পর গত বছর এল নিনোর আবির্ভাবের কথা নিশ্চিত করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এল নিনো থাকার আশঙ্কা ৯৫ শতাংশ।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে এল নিনো বের হয়ে যাওয়ার পর তাপমাত্রা সাময়িকভাবে কমতে থাকবে। তাই খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

নাসার গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজের পরিচালক গ্যাভিন স্মিথ বিবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘গ্রীষ্মের শেষেও যদি আমরা উত্তর আটলান্টিক বা অন্য কোথাও রেকর্ড ভঙ্গকারী তাপমাত্রা দেখি, তাহলে আমরা সত্যিই একধরনের অজানা অঞ্চলে পৌঁছে গেছি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস জলবায়ু পরিবর্তন পরিষেবা অনুসারে, মানুষ বিপুলসংখ্যক জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো শুরু করার আগে প্রাক্‌-শিল্প সময়ের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ মাস ১ দশমিক ৬৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ ছিল।

তবে বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি উষ্ণায়নের প্রবণতা এখনো বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে জলবায়ু একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, তা বিশ্বাস করেন না অনেক বিজ্ঞানী। তবে ২০২৩ সালের শেষটা কেন এত উষ্ণ ছিল, তার ব্যাখ্যা দিতে এখনো হিমশিম খাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

বলা হচ্ছে, গত জুনে এল নিনো শুরু হয়েছিল। তা শীর্ষে পৌঁছায় ডিসেম্বরে। উচ্চ তাপমাত্রার প্রধান চালক জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে থাকা উষ্ণতায় তাপ যোগ করছে। এ কারণে মার্চের রেকর্ড প্রত্যাশিত ছিল।

গত সেপ্টেম্বরের দিকে তাপমাত্রা বিশেষ করে বড় ব্যবধানে রেকর্ড ভাঙতে শুরু করে। তখন এল নিনোর শীর্ষে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। এ কারণে সব সময় অতিরিক্ত উষ্ণতার ব্যাখ্যা করা যায় না।

গ্যাভিন স্মিথ বলেছেন, ‘আমাদের পূর্বাভাস ২০২৩ সালে বেশ নাটকীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। যদি পূর্ববর্তী পরিসংখ্যান কাজ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে, তা বলা আরও কঠিন হয়ে যাবে।’

এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে কোপার্নিকাসের বিজ্ঞানী সামান্থা বার্গেস বলেছেন, ‘গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি এত নাটকীয়ভাবে কেন পরিবর্তিত হয়েছিল, তা এখনো বোঝার চেষ্টা করছি। এই পরিস্থিতি কত দিন চলতে থাকবে, এটি একটি ফেজ শিফট কি না বা এটি দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ুপ্রবণতা কি না, তা–ও বোঝার চেষ্টা করছি।’

বর্তমানে এল নিনো হ্রাস পাচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সম্ভবত তা শেষ হয়ে যাবে। এতে উষ্ণতা কমবে কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও বিজ্ঞানীরা একটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে বিশ্ব উষ্ণায়ন বন্ধ করতে হলে গ্রহ উষ্ণায়ন গ্যাসের নির্গমন দ্রুত হ্রাস করতে হবে।