ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের ঝুঁকিতে

ম্যানগ্রোভ বনছবি: রয়টার্স

মানুষের কর্মকাণ্ড, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি ও চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি ম্যানগ্রোভ (লবণাক্ত জলাশয়ময় বন) বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ বিষয় উঠে এসেছে।

গত বুধবার আইইউসিএনের এই মূল্যায়ন প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের মোট ম্যানগ্রোভ এলাকার এক–চতুর্থাংশ পুরোপুরি তলিয়ে যাবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্র।

আইইউসিএনের বাস্তুতন্ত্রের হুমকি মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করা মার্কোস ভালদেরাবানো বলেন, ‘ম্যানগ্রোভ নিয়ে বৈশ্বিক মূল্যায়ন করে দেখা গেছে যে বিশ্বজুড়ে ৫০ শতাংশের বেশি ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের ধারণার চেয়ে এটি বেশি।’

বিশ্বের উপকূলরেখার প্রায় ১৫ শতাংশজুড়ে ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। পানি ছাঁকন, মাছের প্রজননক্ষেত্র ও অন্যান্য সামুদ্রিক জীবনের জন্য এই বন পরিবেশগত ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া এই বন ১১ বিলিয়ন টন কার্বন সংরক্ষণ করে রাখে। উপকূল এলাকার মানুষদের ঝড় ও বন্যা থেকে রক্ষায় এ বন ভূমিকা রাখে। সিঙ্গাপুর তাদের বাসস্থান ও ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্প করতে গিয়ে প্রায় সব উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ হারিয়েছে। তারা এখন আবার ম্যানগ্রোভ সৃষ্টির জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

সুইজারল্যান্ড–ভিত্তিক আইইউসিএন তাদের এই সমীক্ষা চালাতে বিশ্বের ২৫০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞকে কাজে লাগিয়েছে। তাতে দেখা গেছে যে ম্যানগ্রোভ বন নষ্টে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া সেচের উদ্দেশ্যে মিঠাপানির ব্যাপক দিক পরিবর্তনে বাস্তুসংস্থানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

মার্কোস ভালদেরাবানো বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং আরও টেকসই হয়ে উঠতে ম্যানগ্রোভ বনের সাহায্য প্রয়োজন। কিছু ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রকে পুরোপুরি বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।’

আইইউসিএনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ‘আইইউসিএনের প্রতিবেদনটিতে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের ঝুঁকিপূর্ণ যেসব দেশের কথা এসেছে, সে তুলনায় আমাদের সুন্দরবন ভালো অবস্থায় আছে। আমাদের উপকূলে যে সবুজ বেষ্টনী করা হয়েছিল, সেটি একটি রোল মডেল। সেটি উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় ভালো কাজ করছে। তবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের সুন্দরবনের আশপাশে অনেক শিল্পায়ন হচ্ছে। আমাদের সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’