নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার দ্বিতীয় দিনেও ব্যাপক দর্শনার্থী

জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টার প্রাঙ্গণে চার দিনব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: তোফাজ্জল হোসেন

নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর ছিল। এদিন বন্ধের দিন হলেও ভালোই বিক্রি হয়েছে বই। মেলায় বাংলাদেশ থেকে ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয়। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত চার দিনব্যাপী বইমেলা শেষ হবে ১৭ জুলাই।

বইমেলার দ্বিতীয় দিন এসেছিলেন তসলিমা নাসরিন। নির্বাসিত এই কবি ও লেখক ২ ঘণ্টার বেশি সময় মেলায় ছিলেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে ও কথা বলতে ভিড় জমে যায়। তিনি হাসিমুখে সবার সঙ্গে ছবি তোলেন, উত্তর দেন নানা প্রশ্নের।

তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘আমি ঢাকার বইমেলা, কলকাতা বইমেলায় যেতে পারি না ৩০ বছর ধরে। অথচ আমি বাংলায় লিখি। কিন্তু আমার বাংলা বইমেলায় যাওয়ার অধিকার নেই। অন্য ভাষাভাষীর বইমেলায় আমি যাই। অনেক সময় উদ্বোধনও করেছি।

নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। পুরোনো প্রকাশকদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অনেক নতুন বই দেখছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, এই যে বলা হয় আমাকে মেরে ফেলবে, আমার বিরুদ্ধে প্রচুর মানুষ, কই আমি এসে দেখলাম কত মানুষ এল আমাকে ভালোবেসে। কত মেয়েরা এল, তারা বলে আমার বই পড়ে, আমাকে ভালোবাসে।’

বইমেলার দ্বিতীয় দিন এসেছিলেন তসলিমা নাসরিন। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: তোফাজ্জল হোসেন

মেলা উপলক্ষে আদনান সৈয়দের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে একটি বিশেষ সংকলন। মেলা প্রাঙ্গণের সমরেশ মজুমদার মঞ্চে প্রদান করা হয় আজীবন সম্মাননা। এবার পেয়েছেন সুবীর চৌধুরী ও নূরজাহান বোস। বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা ৫০ জন থট লিডারের একজন সুবীর চৌধুরী। স্মারক সম্মাননা দেওয়া হয়েছে কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান ও বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগমকে।

রাতে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অণিমা রায়ের গান দিয়ে শেষ হয় মেলার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান। রোববার বিকেলে তসলিমা নাসরিন বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত সাহা।
জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টার প্রাঙ্গণে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সাহিত্য–সংস্কৃতিপ্রেমীরা জড়ো হয়েছিলেন এই মেলায়।

১৪ জুলাই মেলার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে তৃতীয় বাংলা তৈরি হয়েছে, যেখানে বাংলা ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নিয়মিত চর্চা হয়। নিউইয়র্ক বাংলা বই মেলা তৃতীয় বাংলার বড় একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।

উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, বীর প্রতীক পাওয়া আমার সার্থক হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে বাঙালিরা এসেছেন। বইমেলা করছেন, বাংলা ভাষা, সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চা করছেন। এ যেন আরেকটি বাংলাদেশ।’