ইসলামি বিপ্লবের ৪৪ বছরে কী পেল ইরান

ইসলামি বিপ্লবের পর দীর্ঘ ৪৪ বছর কেটেছে। কিন্তু এই গণবিপ্লব ইরানের মানুষকে কী দিয়েছে—এই প্রশ্ন নতুন করে দেখা দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় এই প্রশ্ন সামনে এসেছে।

  • আয়াতুল্লাহ খোমেনির জারি করা কঠোর নির্দেশনার উদ্দেশ্য ছিল, ইরানের রাষ্ট্রীয় নীতিকে ধর্মীয় ধারায় প্রবাহিত করা।

  • খোমেনির রাষ্ট্রীয় কাঠামো অনেকটা রেজা শাহের একনায়কতান্ত্রিক কাঠামোর মতোই ছিল। তবে তা চরিত্রগতভাবে বেশি নিষ্ঠুর।

  • ইরানে রাজনৈতিক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সক্রিয় সংস্কারবাদীরা।

১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ইরানে ঘটে এক মহাবিপ্লব। ইতিহাসে যা ইসলামি বিপ্লব নামে পরিচিতি পায়। ফলাফল, ৩৮ বছরের শাসক রেজা শাহ পাহলভির পতন এবং ১৬ জানুয়ারি জনরোষের মুখে তাঁর দেশত্যাগ। ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাসন থেকে ইরানে ফেরেন গণবিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। সেদিন তাঁকে স্বাগত জানাতে রাজধানী তেহরানের সড়কে জড়ো হন লাখো মানুষ।

বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে তেহরানের ‘প্যারাডাইস অব জোহরা’ সমাধিক্ষেত্রে যান খোমেনি। এখানে গণবিপ্লবে শহীদদের দাফন করা হয়েছিল। পথের ধারে লাখো মানুষ উল্লাস করে তাঁকে স্বাগত জানান। সেখানে খোমেনি এক বক্তৃতায় বলেন, ইরানে রাজতন্ত্র বাতিল করা হবে। গঠন করা হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

‘তাঁর নাম মাসা আমিনি’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে ইরানের রাস্তায় প্রতিবাদরত নারী-পুরুষ
ছবি: সংগৃহীত

ইরানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, শাহের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শাপুর বখতিয়ারের সরকারকে প্রতিস্থাপন করা। দেশটির নতুন যাত্রাপথ মসৃণ করা। একই সঙ্গে তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভবিষ্যৎ ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের একটি খসড়া জাতির সামনে তুলে ধরেন। একপর্যায়ে শাপুর বখতিয়ারকে পদত্যাগ করতে বলেন খোমেনি। যদিও শাহের সামরিক বাহিনী তখনো রাজতন্ত্রকে রক্ষা করতে প্রস্তুত ছিল। শাপুর বখতিয়ার নিজেও গণবিপ্লবের বাস্তবতা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি ইরানে সামরিক আইন ও কারফিউ জারির নির্দেশ দেন।

কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। খোমেনি জনগণকে কারফিউ অমান্যের নির্দেশ দেন। সাড়া দেয় জনতা। ইরানে দেখা দেয় চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা। অবশেষে ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানের সেনাবাহিনী নিজেদের ‘নিরপেক্ষতার’ ঘোষণা দেয়। পদত্যাগ করে আত্মগোপনে যান প্রধানমন্ত্রী বখতিয়ার। পতন ঘটে রাজতন্ত্রের, চূড়ান্ত জয় পায় ইসলামি বিপ্লব।

ইসলামি বিপ্লবের পর দীর্ঘ ৪৪ বছর কেটেছে। কিন্তু এই গণবিপ্লব ইরানের মানুষকে কী দিয়েছে—এই প্রশ্ন নতুন করে দেখা দিয়েছে। বিশেষত গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। মাসার বিরুদ্ধে পোশাকবিধি না মানার অভিযোগ আনা হয়েছিল, যা ইরানের শরিয়াহ আইনবিরোধী। পুলিশ দাবি করে, মাসা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে ২২ বছরের সুস্থ-সবল মাসা হঠাৎ কীভাবে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন, এর সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশি হেফাজতে গত সেপ্টেম্বরে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়
ফাইল ছবি

মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তেহরান। পরে এই বিক্ষোভ পুরো ইরানে ছড়ায়। বিক্ষোভের সমর্থনে বিশ্বের বিভিন্ন শহরেও মিছিল হয়। বিক্ষোভ দমাতে কঠোর অবস্থান নেয় ইরান সরকার। মিছিলে-সমাবেশে চালানো হয় দমনপীড়ন, গুলি। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্ট ইন ইরান (এইচআরএআই) জানায়, ইরানে গত কয়েক মাসের বিক্ষোভে অন্তত ৫২৭ জনের প্রাণ গেছে। আটক হয়েছেন সহস্রাধিক।

রেজা শাহের পশ্চিমা ঘেঁষা উদার শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণবিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে যে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই রাষ্ট্র যে চরিত্রগতভাবে অত্যন্ত রক্ষণশীল ও অমানবিক, মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে উত্তাল ইরানের চিত্র তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

রাষ্ট্রীয় চরিত্রের বদল

ইসলামি বিপ্লব ইরানের মানুষের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এনেছে, তা যাচাই করা খুব কঠিন কাজ নয়। রাজনৈতিক প্রাপ্তির কথা ভাবলে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে রাষ্ট্রের চরিত্রে। গণবিপ্লবের পর খোমেনি ইরানে একটি গণভোট আয়োজন করেন ও ইরানকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন। ইসলামিক রিপাবলিকান পার্টি (আইআরপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন খোমেনি-সমর্থিত অভিজ্ঞ ও রক্ষণশীল আলেম-উলেমারা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হোসেইন বেহেস্তি, রেজা বাহানুর, আকবর হাসেমি রাফসানজানি প্রমুখ।

আইআরপির নেতারা দ্রুত ইরানের কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে ইসলামি সংগঠন গড়ে তোলেন। এসব জায়গা থেকে বামপন্থী ও গণতন্ত্রকামীদের হটানো হয়। ১৯৭৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শপথ নেয় খোমেনির সাত সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেদিন ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের বিষয়ে খোমেনি বলেছিলেন, ‘আমি মেহেদি বাজারগানকে দেশের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেছি। এটা ইরানের প্রথম শরিয়াহভিত্তিক সরকার। তাঁকে বিরোধিতা করার অর্থ শরিয়াহ আইন অমান্য করা। এই সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হবে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সমান। আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ধর্মীয় দৃষ্টিতে মহাপাপ।’ যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের এক বছর না যেতেই মেহেদি বাজারগানকে পদ ছাড়তে হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর খোমেনির জারি করা কঠোর নির্দেশনার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, ইরানের রাষ্ট্রীয় নীতিকে ধর্মীয় ধারায় প্রবাহিত করা। সেই সঙ্গে ইরান যে মোল্লাতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে বিরোধীদের আগাম সতর্ক করা। এরপর ইরানিদের জীবনে ইসলামি বিধিবিধান কতটা চর্চা হচ্ছে, তা তদারকির জন্য নীতি পুলিশ চালু করেন খোমেনি। এই নীতি পুলিশের হাতেই নিহত হয়েছেন মাসা আমিনি।

ফাইল ছবি

ইরানের জন্য ইসলামি সংবিধান কারা লিখবেন, তা ঠিক করতে গণভোট আয়োজন করেন খোমেনি। প্রত্যাশিতভাবে সেই গণভোটে জয় পান খোমেনিপন্থীরা। এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, ইরানে ‘ভেলায়েত-ই-ফাকিহ’ নামের অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ উলেমাদের দলকে পাশ কাটিয়ে সর্বক্ষেত্রে খোমেনির সমর্থকদের জায়গা করে দেওয়া। ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় খোমেনির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির পাশাপাশি সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণের ভার আসে তাঁর হাতে। সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে খোমেনি দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনে যুদ্ধ ঘোষণার দায়িত্বভার পান। দেশের বিচার বিভাগের যে কাউকে বরখাস্ত করতে পারতেন তিনি।

ওই সময় ইরানের রেডিও-টেলিভিশনের নীতি খোমেনির হাতে নির্ধারিত হয়। তিনি ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান হন। তিনি দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিলের ১২ সদস্যের মধ্যে ৬ জনকে মনোনীত করার অধিকার পান। এই কাউন্সিল ইরানের পার্লামেন্টের কার্যবিধির ওপর নজর রাখে এবং ইসলামি বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থী নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য উপযুক্ত কি না, সেটি নির্ধারণ করে। খোমেনির একচ্ছত্র আধিপত্যের প্রমাণ, ১৯৮১ সালে তিনি দেশটির জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বনি সাদরকে বরখাস্ত করেন। খোমেনির আমলের এই রাষ্ট্রীয় কাঠামো অনেকটাই রেজা শাহের একনায়কতান্ত্রিক কাঠামোর মতোই, কিন্তু চরিত্রগতভাবে বেশি নিষ্ঠুর।

অর্থনীতিতে ছাপ নেই

ইরানের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি গণবিপ্লব। এই গণ-আন্দোলনের আগে খোমেনি দেশবাসীর সমর্থন পেতে নানা অঙ্গীকার করেছিলেন। এসব অঙ্গীকার বিশ্লেষণ করলে মোটা দাগে তিনটি লক্ষ্য চোখে পড়ে। সেগুলো হলো ভূমি সংস্কার, শ্রম আইনের সংশোধন এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের জাতীয়করণ। গণবিপ্লব সফল হওয়ার পর এই তিন ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নানা কৌশলে, বিশেষ করে ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া ইরান-ইরাক যুদ্ধের অজুহাতে কিংবা বিত্তশালীদের চাপে সেসব প্রচেষ্টা ভন্ডুল হয়ে যায়।

এ ছাড়া ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল ভূমি সংস্কার, প্রগতিশীল শ্রম আইন এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের জাতীয়করণকে অনৈসলামিক বলে বাতিল করে দেয়। পরবর্তী সময়ে এই তিনটি লক্ষ্য সংশোধন করা হয়। কিছু কিছু বিষয় বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু তাতে লাভবান হয় দেশটির নব্য ধনিক গোষ্ঠী। তাদের অধিকাংশই উলেমা সম্প্রদায় থেকে আসা কিংবা সরাসরি বাজারের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী ও উৎপাদকেরা। এই গোষ্ঠী ইসলামি বিপ্লবে উলেমাদের সবচেয়ে বড় সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল।

গণবিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইরানের সমাজে কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নারীদের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা। বিশেষত, নারীদের পোশাকবিধি আরোপ করা। মাথা আবৃত রেখে নারীদের চলাচলের নিয়ম করা। রেজা শাহের আমলে দেশটিতে এমন নীতি ছিল না।

এমনকি রেজা শাহ তাঁর আমলে ইরানে নারীদের মাথা ঢেকে চলাচলে নিরুৎসাহিত করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ও পুরুষের সহশিক্ষা অনুমোদন করেছিলেন। পশ্চিমা আধুনিক জীবনধারার সঙ্গে মিল রেখে নারীদের জন্য রেজা শাহ তালাক দেওয়া ও চাকরিতে অংশগ্রহণে সমান সুযোগসহ নানা অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।

এ ছাড়া নারী ও শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য রেজা শাহ ‘উইমেন্স অর্গানাইজেশন ইন ইরান’ নামে দেশজুড়ে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠান পরিবার পরিকল্পনায় সহায়তা করা, নারীদের আইনগত পরামর্শ দেওয়া, পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন কাজ করত। ইরানের পার্লামেন্টে ওই সময় ২০ জন নির্বাচিত নারী সদস্য ছিলেন। স্থানীয় ও মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলেও নারী প্রতিনিধিত্ব ছিল। ইসলামি বিপ্লবের পর পরিস্থিতি ক্রমেই বদলাতে শুরু করে। নারীদের ওপর আরোপিত হয় একর পর এক বিধিনিষেধ, খর্ব হয় অধিকার। সেই অর্থে বলা যায়, ইসলামি বিপ্লব ইরানকে এগিয়ে নেয়নি।

সক্রিয় সংস্কারবাদীরা

ইরানের এখনকার পরিস্থিতি প্রমাণ করে, দেশটিতে রাজনৈতিক স্বাধীনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। নেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা। দেশটির নিয়ন্ত্রণ এখন রাজনৈতিক দল ইসলামিক রিপাবলিকান পার্টি ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডসের কবজায়।

ইরানে প্রতিবাদের ঝড় যে ওঠে না, তা বলা যাবে না। পর্বতসমান প্রতিবন্ধকতার পরও ইরানে এমন এক নাগরিক সমাজের উত্থান ঘটেছে, যাঁরা সমাজের সত্যিকার সংস্কারের আশা করেন। এর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সংস্কারপন্থী মোহাম্মদ খাতেমির ইরানের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা। সম্প্রতি ইরানের সংস্কারপন্থীরা নিজেদের সংগঠিত করতে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এই সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন আয়াতুল্লাহ খোমেনির নাতি হাসান খোমেনি।

ইরানের ইসলামি বিপ্লব বাংলাদেশের জন্য কোনোভাবে প্রাসঙ্গিক? এই প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ, এখানকার ধর্মীয় পক্ষগুলোর লক্ষ্য বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্র করা এবং শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্য পূরণে এখানেও গণবিপ্লবের তাত্ত্বিক ন্যায্যতা প্রমাণের নানা আদর্শিক উদ্যোগ চলমান আছে। তবে রাষ্ট্রের জাতিভিত্তিকতাকে উপেক্ষা করে ধর্মীয় রূপ দেওয়ার আয়োজনে ইরানের বিপ্লব-অভিজ্ঞতা কোনো শিক্ষা হতে পারে কি না, সেটি ভেবে দেখা প্রয়োজন। কেননা ইসলামি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইরান একটি নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে নানা পর্যায়ে সমালোচনা ও বিতর্ক আছে। সুশাসন ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ার ইউটোপিয়ান প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে ইরানের অভিজ্ঞতা আমাদের ক্ষেত্রে কোনো তাৎপর্য বহন করে কি না, সেটিও ভেবে দেখা জরুরি।

  • বদরুল আলম খান অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনি, অস্ট্রেলিয়া