একটানা ‘উষ্ণতম’ ১২ মাস পার করল বিশ্ব

একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছেরয়টার্স ফাইল ছবি

প্রথমবারের মতো টানা ১২ মাস ধরে শিল্পায়ন-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণতা ছিল বিশ্বে। বিজ্ঞানীরা একে ‘মানবজাতির জন্য সতর্কবার্তা’ বলছেন।

ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সিথ্রিএস) আজ বৃহস্পতিবার এসব কথা জানিয়েছে।

সিথ্রিএসের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুযারি পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ১৯ শতকের তুলনায় ১ দশমিক ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২৩ সালে মারাত্মক ঝড়, খরা ও দাবানলের মুখে পড়ে বিশ্ব। এল নিনোর প্রভাবে যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এ কারণে ২০২৩ সালে রেকর্ড উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। গত বছরটি সম্ভবত গত এক লাখ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর ছিল।

২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি শিল্পায়ন-পূর্ব সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখতে চুক্তি হয়েছে।

জার্মানির জলবায়ুবিষয়ক গবেষণা সংস্থা পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের গবেষক জোহান রকস্ট্রম বলেন, ‘তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এর বিরূপ প্রভাবের খেসারত দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘১ দশমিক ৫ একটি বড় সংখ্যা এবং বিশ্বব্যাপী তাপপ্রবাহ, খরা, বন্যা, শক্তিশালী ঝড় ও জলের ঘাটতি আমাদের সত্যিই খুব বাজেভাবে আঘাত করছে। ২০২৩ সাল আমাদের এটাই শিখিয়েছে।’

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আমাজন অববাহিকায় মারাত্মক খরা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অংশে অস্বাভাবিক ঠান্ডা, দক্ষিণ আমেরিকায় ভয়াবহ দাবানল এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় রেকর্ড বৃষ্টির মতো চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

গবেষক জোহান রকস্ট্রম এএফপিকে বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই মানবসমাজের জন্য একটি সতর্কতা। আমরা নির্ধারিত ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমার দিকে ধারণাও চেয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। তবে এল নিনো শেষ হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।’

কোপারনিকাস জানিয়েছিল, ১৮৫০-১৯০০ সালের জানুয়ারির গড় তাপমাত্রার তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। সে অনুযায়ী এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণতম জানুয়ারি মাস।

সিথ্রিএসের উপব্যবস্থাপক সামান্থা বার্গেস বলেন, ‘২০২৪ শুরু হয়েছে আরেকটি রেকর্ড ভঙ্গের মাস দিয়ে। জানুয়ারি শুধু রেকর্ড গড়া সবচেয়ে উষ্ণতম মাস ছিল না, আমরা টানা ১২ মাস শিল্পায়ন-পূর্ব সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা অনুভব করেছি।’

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এর ব্যবহার বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী এক দশকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) সতর্ক করে বলেছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০-এর দশকের গোড়ায় দিকে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে।

উষ্ণতম ১২ মাস পার হওয়ার বিষয়টি মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের জন্য খারাপ খবর বলে মন্তব্য করেন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ুবিজ্ঞান ও নীতিবিভাগের অধ্যাপক জোয়েরি রোজেলস। তিনি যদি বৈশ্বিক নির্গমন (কার্বন) দ্রুত শূন্যে না নামানো হয়, তাহলে বিশ্ব শিগগিরই প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে নির্ধারিত তাপমাত্রার (১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) সীমা ছাড়িয়ে যাবে।

কোপারনিকাসের তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার পাশাপাশি পূর্ব কানাডা ও দক্ষিণ ইউরোপের তাপমাত্রা ছিল গড়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু উত্তর ইউরোপ, পশ্চিম কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে কম ছিল।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে চিলিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও খরার কবলে পড়তে হয়েছে। এতে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা চলতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বজায় রয়েছে। দাবানলে উপকূলীয় ভালপারাইসো অঞ্চলে ১৩০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।

এদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করছে।

আরও পড়ুন