সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী এলিস মুনরো আর নেই

লেখক এলিজাবেথ হের সঙ্গে এলিস মুনরো (ডানে)ফাইল ছবি: রয়টার্স

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কানাডার লেখক এলিস মুনরো আর নেই। সোমবার কানাডার অন্টারিওর পোর্ট হোপে একটি সেবাকেন্দ্রে তাঁর মৃত্যু হয়। এই লেখকের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

৬০ বছরের বেশি সময় ধরে ছোটগল্প লিখেছেন মুনরো। কানাডার গ্রামীণ জীবন উপজীব্য করেই তাঁর বেশির ভাগ লেখা। এলিস মুনরোর গল্পে যে অন্তর্দৃষ্টি ও সমবেদনা ফুটে উঠত, সে জন্য তাঁকে প্রায়ই রাশিয়ার লেখক আন্তন চেখভের সঙ্গে তুলনা করা হতো।

২০১৩ সালে এলিস মুনরো সাহিত্যে নোবেল পান। সে সময় পুরস্কারের ঘোষণায় মুনরোকে ‘সমকালীন ছোটগল্পের মাস্টার’ অভিহিত করে নোবেল কমিটি বলেছিল, ‘তিনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে গল্প বলতে পারেন। তাঁর গল্পের বিষয়বস্তু সুস্পষ্ট ও বাস্তববাদী।’

মুনরোর জন্ম ১৯৩১ সালের ১০ জুলাই, কানাডার অন্টারিও প্রদেশের উইংহ্যাম এলাকায়। সেখানকার গ্রাম্য ও শান্ত পরিবেশেই তাঁর বেড়ে ওঠা। বাবা ছিলেন খামারের মালিক, মা স্কুলশিক্ষক।

মাত্র ১১ বছর বয়সেই মুনরো ঠিক করে ফেলেন, বড় হয়ে একজন লেখক হবেন। সেই মতোই এগিয়েছে সবকিছু। নিজের পেশা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আর কখনো তিনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেননি।

মুনরোর প্রথম গল্প ‘দ্য ডাইমেনশন অব আ শ্যাডো’। প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে। তখন তিনি ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সেখানেই পরিচয় হয় স্বামী জেমস মুনরোর সঙ্গে। তাঁরা বিয়ে করেন ১৯৫১ সালে।

এরপর সংসার করার পাশাপাশি লেখালেখি চালিয়ে গেছেন এলিস মুনরো। জেমসের সঙ্গে তাঁর দুই দশকের সংসার ভেঙে যায় ১৯৭২ সালে। এর আগে তিন কন্যাসন্তানের মা হন তিনি। চার বছর পর আবার বিয়ে করেন জেরাল্ড ফ্রেমলিনকে।

তখন থেকে গড়ে চার বছরে তাঁর একটি করে বই বেরিয়েছে। তাঁর বেশির ভাগ গল্পে উঠে এসেছে কানাডার গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ। অন্য বড় লেখকদের মতো তিনি বিশ্বভ্রমণে বের হননি। স্বাভাবিকভাবেই নিজের চারপাশের গণ্ডির বাইরের বিষয় নিয়ে তাঁর লেখালেখিও কম।

মুনরো গভর্নর জেনালের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনবার। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ‘ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস’, ১৯৭৮ সালে ‘হু ডু ইউ থিংক ইউ আর’ এবং ১৯৮৬ সালে ‘দ্য প্রোগ্রেস অব লাভ’ বইয়ের জন্য। তিনি কানাডার সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন। আর সাহিত্যে নোবেলের পর সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে। ‘দ্য বেয়ার কাম ওভার দ্য মাউন্টেন’ বইয়ের জন্য তিনি ওই পুরস্কার পান। তাঁর এই বই অবলম্বনে পরিচালক সারাহ পলি তৈরি করেন সিনেমা ‘অ্যাওয়ে ফ্রম হার’।

মুনরোর প্রকাশিত অন্যান্য ছোটগল্পের সংকলনের মধ্যে আছে ‘লাইভস অব গার্লস অ্যান্ড উইম্যান’ ১৯৭১, ‘সামথিং আই হ্যাভ বিন মিনিং টু টেল ইউ’ ১৯৭৪, ‘দ্য মুনস অব জুপিটার’ ১৯৮২, ‘ফ্রেন্ড অব মাই ইয়ুথ’ ১৯৯০, ‘ওপেন সিক্রেটস’ ১৯৯৪, ‘দ্য লাভ অব আ গুড উইম্যান’ ১৯৯৮, ‘হেটশিপ ফ্রেন্সশিপ কোর্টশিপ লাভশিপ ম্যারিজ’ ২০০১, ‘রানঅ্যাওয়ে’ ২০০৪, ‘টু মাচ হ্যাপিনেস’ ২০০৯ এবং ‘ডিয়ার লাইফ’ ২০১২।