সূর্যগ্রহণ দেখা তাঁদের নেশা, ছুটছেন উত্তর আমেরিকায়

সূর্যগ্রহণফাইল ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

কেট রুশো, অস্ট্রেলিয়ান একজন মনোবিদ। আজ থেকে ২৫ বছর আগে ১৯৯৯ সালে জীবনে প্রথমবার সূর্যগ্রহণ দেখেন তিনি। তখন তাঁর বয়স ছিল ২০-এর কোঠায়। থাকতেন উত্তর আয়ারল্যান্ডে। ফ্রান্সের দক্ষিণ উপকূলে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন কেট।

এ ঘটনা কেটের জীবন বদলে দেয়। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ সরাসরি দেখাটা যেন নেশার মতো হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জীবনে। আগামী সোমবার (৮ এপ্রিল) আবারও সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ-গবেষণা করবেন তিনি। এটা তাঁর জীবনে ১৪তম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা। এ জন্য তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের উভাল্ডে গেছেন।

প্রথমবার সূর্যগ্রহণ দেখার স্মৃতি হাতড়ে কেট বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, সেটা আমার প্রথম ও একমাত্র পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখার ঘটনা। কিন্তু সেটা হয়নি।’ দুর্দান্ত এ অভিজ্ঞতা অর্জনে কেট ছুটে চলেছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে।

৫১ বছরের কেট স্মৃতিকাতর হয়ে বলেন, প্রথমবারের মতো সূর্যের ওপর চাঁদের ছায়া পড়তে দেখাটা আবেগঘন মুহূর্ত ছিল।

কেটের মতো লাখো মানুষ এখন উত্তর আমেরিকায় ভিড় করেছেন। উদ্দেশ্য, সোমবারের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ নিজের চোখে দেখা।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেদিন উত্তর আমেরিকার ভেতরের-বাইরের এক লাখের বেশি মানুষ জীবনের অন্যতম সেরা একটি অভিজ্ঞতা অর্জনে বেরিয়ে পড়বেন। যেসব এলাকা থেকে ভালোভাবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে, তাঁরা সেসব এলাকায় চলে যাবেন।

যখন চাঁদের ছায়া পড়ে সূর্য পুরোপুরি ঢেকে যায়, দিনের বেলায় কিছু সময়ের জন্য রাতের আঁধার নেমে আসে; সেটাকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বলে। তবে কেট বলছেন, সেটার অনুভূতি এর চেয়েও বেশি কিছু।

কেটের ভাষ্য, ওই সময় হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যায়। বাতাস বইতে শুরু করে। মনে হয়, এই বুঝি ঝড় এল। আলো ক্রমে কমে আসে। দিগন্তে হালকা কমলা বা লালচে আভা দেখা যায়। সূর্যকে দেখতে পাতলা রিংয়ের মতো লাগে।

এ অভিজ্ঞতা কেটকে সূর্যগ্রহণ দেখার সময় মানুষের আবেগী প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করতে উৎসাহ জুগিয়েছে।

অনেকটা একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ৬১ বছরের ম্যাকপিস। কানাডার টরন্টোয় থাকেন তিনি। এবার নিয়ে ১৯ বার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখবেন তিনি। বলেন, ‘আমরা এত সুন্দর একটি সৌরজগতে কীভাবে বসবাস করতে পারি?’

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় ৪১ বছর ডেটা এনালিস্ট ও ফ্লাইট কন্ট্রোল স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন পল মালে। তাঁর বয়স এখন ৭৬ বছর। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। থাকেন অ্যারিজোনায়। সূর্যগ্রহণ সরাসরি দেখাটা তাঁর পছন্দের কাজ।

১৯৭০ সাল থেকে ৮৩ বার সূর্যগ্রহণ দেখেছেন পল। আংশিক ও পূর্ণগ্রাস—সব ধরনের সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ জন্য ভ্রমণ করেছেন ৪২টি দেশ। এমনকি সূর্যগ্রহণ দেখতে পছন্দ করা মানুষদের জন্য একটি পর্যটন সংস্থাও খুলেছেন তিনি।

সোমবার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য মেক্সিকোর কাবো সান লুকাস উপকূলে নৌ ভ্রমণের আয়োজন করেছে পলের প্রতিষ্ঠান। প্রায় ২০০ জন এতে অংশ নেবেন। দল বেঁধে সূর্যগ্রহণের বিরল মুহূর্ত স্মৃতিতে ধরে রাখবেন।