বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবায় সেরা তাইওয়ান, দশে আর কারা আছে

বিশ্বের প্রত্যেক মানুষই সহজে, দ্রুত ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা চায়। সব দেশেরই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কয়েকটি দেশ এই খাতে এমন স্তরে পৌঁছেছে, যেখান থেকে তারা পুরো বিশ্বের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সরকারিভাবে প্রচুর বিনিয়োগ, সমন্বিত ডিজিটাল সেবা, প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ, নাগরিকদের প্রতি যত্নশীল মনোভাব ও গবেষণার অগ্রগতির কারণেই তারা বিশ্বে সেরা।

সিইওওয়ার্ল্ড স্বাস্থ্যসেবা সূচক ২০২৪-এ বিশ্বের ১১০টি দেশ ও অঞ্চলের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পাঁচটি মানদণ্ডে মূল্যায়ন করা হয়েছে। মানদণ্ডগুলো হলো—স্বাস্থ্য অবকাঠামো, চিকিৎসাকর্মীদের দক্ষতা, ব্যক্তিপ্রতি স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়, মানসম্মত ওষুধের সহজলভ্যতা এবং স্বাস্থ্যসংকট মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি। সূচকটির আলোকে স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের বৈশিষ্ট্য ও অর্জন তুলে ধরা হলো।

তাইওয়ান

ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি হসপিটাল
ছবি: হাসপাতালের ওয়েবসাইট থেকে

তাইওয়ানের স্বাস্থ্যসেবার মূল শক্তি ন্যাশনাল হেলথ ইনস্যুরেন্স স্কিম, যা একক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও হাসপাতালভিত্তিক সেবায় তাইওয়ান বেশ এগিয়ে রয়েছে। নাগরিকেরা কম খরচে যেকোনো হাসপাতালে সেবা নিতে পারেন। স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। ডিজিটাল হেলথ কার্ড এবং কেন্দ্রীয় রেকর্ড–ব্যবস্থার ফলে সেবার মান খুবই উন্নত।

সিইওওয়ার্ল্ড স্বাস্থ্যসেবা সূচক ২০২৪-এ তাইওয়ানের গড় স্কোর ৭৮ দশমিক ৭২। স্বশাসিত অঞ্চলটির অবকাঠামোগত মান ৮৭, ওষুধের প্রাপ্যতা ৮৩ এবং সরকারের স্বাস্থ্যসংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি ৮২ পয়েন্টেরও বেশি।

দক্ষিণ কোরিয়া

সিউলের সেভেরেন্স হসপিটাল
ছবি: হাসপাতালের ওয়েবসাইট থেকে

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৯৭ শতাংশ নাগরিক ন্যাশনাল হেলথ ইনস্যুরেন্স (এনএইচআই) ব্যবস্থার আওতাভুক্ত। দেশটির সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ চিকিৎসকের অভাব নেই। টেলিমেডিসিন, রোবোটিক সার্জারি ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ডেটা ব্যবস্থাপনায় কোরিয়া অনেক আগেই বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। কম খরচে উচ্চমানের সেবার জন্য দেশটি এখন বিশ্বজুড়ে আদর্শ। বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবায় দক্ষিণ কোরিয়ার গড় স্কোর ৭৭ দশমিক ৭।

অস্ট্রেলিয়া

দ্য রয়্যাল মেলবোর্ন হসপিটাল
ছবি: হাসপাতালের ওয়েবসাইট থেকে

অস্ট্রেলিয়ার ‘মেডিকার’ নামের স্বাস্থ্যনীতি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সরকারি-বেসরকারি হাইব্রিড সেবা মডেল। সরকার চিকিৎসা ব্যয়ের একটি বড় অংশ বহন করে। আবার বেসরকারি খাতের মাধ্যমেও উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ায় শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় সমতা রক্ষা করা হয়েছে। এ ছাড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় দেশটির গড় স্কোর ৭৪ দশমিক ১১।

কানাডা

চতুর্থ অবস্থানে থাকা কানাডায় বিশ্বখ্যাত ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার’ চালু রয়েছে। দেশটির প্রত্যেক নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা সরকারিভাবে বিনা খরচে সেবা পান। হাসপাতালে চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, ওষুধ—সবই সরকারি খরচে হয়ে থাকে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষার সময় কিছুটা বেশি হলেও গড় মানের দিক দিয়ে কানাডার স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেশ প্রশংসিত। স্বাস্থ্যসংকট মোকাবিলায় দেশটির সরকারের প্রস্তুতি স্কোর ৮৮ পয়েন্ট, যা বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ।

সুইডেন

সুইডেনের কারোলিনস্কা ইউনিভার্সিটি হসপিটাল
ছবি: হাসপাতালের ওয়েবসাইট থেকে

পঞ্চম স্থানে রয়েছে সুইডেন, যার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে। স্বাস্থ্যসমতা দেশটির প্রধান নীতি। প্রাথমিক সেবাকেন্দ্রে অধিকাংশ রোগ নির্ণয় করা হয়। আর শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে বিশেষায়িত সেবা। সুইডেন ই-হেলথ ও গবেষণাতেও অনেক এগিয়ে। অবকাঠামোতে স্কোর ৭৮ ও ওষুধের প্রাপ্যতায় প্রায় ৭৫।

আয়ারল্যান্ড

আয়ারল্যান্ডের অবকাঠামোগত স্কোর ৯২-এর ওপরে এবং ওষুধের প্রাপ্যতায় তা ৯৬। সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমার ভারসাম্যপূর্ণ মিশ্রণে গড়ে উঠেছে দেশটির স্বাস্থ্যনীতি। তবে সরকারের প্রস্তুতির স্কোর তুলনামূলক কম হওয়ায় গড় স্কোরে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে আয়ারল্যান্ড। দেশটির গড় স্কোর ৬৭ দশমিক ৯৯।

নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডসে স্বাস্থ্যসেবা বেসরকারিভাবে বিমা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তা সরকারি নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রাথমিক সেবা থেকে শুরু করে বিশেষায়িত চিকিৎসা পর্যন্ত, সব ক্ষেত্রেই সমন্বয় আছে। দেশটিতে চিকিৎসকের গড় ব্যয় ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী। দেশটির মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন চিকিৎসা বেশ প্রশংসনীয়।

জার্মানি

জার্মানির স্বাস্থ্যনীতি ‘সিক হেলথ ইনস্যুরেন্স’-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রায় শতভাগ নাগরিক এ ব্যবস্থার আওতায় রয়েছেন। জার্মানিতে সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসার মান সমান। চিকিৎসকপ্রতি রোগীর হার খুব ভালো ও ওষুধ সাশ্রয়ী। রয়েছে ডিজিটাল হেলথ রেকর্ড ও ই-প্রেসক্রিপশন ব্যবহারের নিয়ম।

নরওয়ে

অসলো ইউনিভার্সিটি হসপিটাল
ছবি: হাসপাতালের ওয়েবসাইট থেকে

নরওয়ের স্বাস্থ্যনীতি সম্পূর্ণ করভিত্তিক। সরকার প্রত্যেক নাগরিকের চিকিৎসা ব্যয় বহন করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও হাসপাতাল, ক্লিনিক ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রসূতিসেবা, শিশুস্বাস্থ্য এবং বয়স্ক চিকিৎসায় বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গবেষণায়ও নরওয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে।

ইসরায়েল

ইসরায়েলের স্বাস্থ্যবিমা কাঠামো বাধ্যতামূলক হলেও ব্যক্তিকেন্দ্রিক। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রতিরোধমূলক কেয়ারের প্রাধান্য রয়েছে। রোগী-চিকিৎসক অনুপাত এবং নার্সিং সেবার মানেও দেশটি বিশ্বে অন্যতম। সরকারের প্রস্তুতির সূচকে তাদের স্কোর ৯০-এর ওপরে।