মানুষের কেন লেজ নেই, উত্তর খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

মানুষের কেন লেজ নেই, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরাফাইল ছবি: এপি/ইউএনবি

কিছু বিজ্ঞানীর দাবি, মানুষের অতি প্রাচীন পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত প্রাণীদের লেজ ছিল। কিন্তু মানুষের কেন লেজ নেই? দীর্ঘদিন ধরে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা।

বিজ্ঞানীদের দাবি, দুই–আড়াই কোটি বছর আগে বানর থেকে বনমানুষ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মানুষের জীবনবৃক্ষের শাখা–প্রশাখা থেকে লেজ নামক জিনিসটি হারিয়ে গেছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছিলেন, কেন এবং কীভাবে এমনটা ঘটল। তবে এবার বিজ্ঞানীরা অন্তত একটি গুরুত্বপূর্ণ জেনেটিক পরিবর্তনকে চিহ্নিত করেছেন, যা এ ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক নেচার সাময়িকীতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছে। এতে গবেষক ও ব্রড ইনস্টিটিউটের জিনতত্ত্ববিদ বো জিয়া লিখেছেন, ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনের ভেতর আমরা একটি একক রূপান্তর ঘটতে দেখেছি।’

গবেষণাটি করার জন্য বিজ্ঞানীরা মানুষসহ ছয় প্রজাতির বনমানুষ এবং ১৫ প্রজাতির লেজযুক্ত বানরের জিনোমের মধ্যে তুলনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন চিহ্নিত করার পর বিজ্ঞানীরা তাঁদের তত্ত্বের পরীক্ষা–নিরীক্ষা শুরু করেন।

ইঁদুরের ভ্রূণের মধ্যে একই ধরনের রূপান্তর হচ্ছে কি না, তা জানার জন্য জিন–সম্পাদনা প্রযুক্তি সিআরআইএসপিআর ব্যবহার করেছেন তাঁরা। এতে দেখা গেছে, এসব ইঁদুর লেজ ছাড়াই জন্ম নিয়েছে।

তবে জিয়া মনে করেন, লেজ হারানোর ক্ষেত্রে অন্য জেনেটিক পরিবর্তনেরও ভূমিকা থাকতে পারে।

আরেকটি বিষয়েও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে যাচ্ছেন। সেটি হচ্ছে, লেজ না থাকার কারণে এসব পূর্বসূরি বনমানুষ এমনকি মানুষের টিকে থাকতে সুবিধা হয়েছে কি না।

লেজ না থাকাটা কেন সহায়ক হয়েছে, তা নিয়ে নানা ধারণাগত তত্ত্ব আছে। কেউ কেউ বলেন, লেজ না থাকার কারণে মানুষ ধীরে ধীরে সোজা হয়ে হাঁটতে শিখেছে।

স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের হিউম্যান অরিজিনস প্রজেক্টের পরিচালক রিক পটস মনে করেন, লেজ না থাকার কারণে কিছু বনমানুষ গাছ ছাড়ার আগেই লম্বালম্বি শারীরিক ভঙ্গিতে অভ্যস্ত হতে পেরেছে।

তবে সব বনমানুষই এখনো মাটিতে বসবাস করে না। ওরাংগুটান ও গিবন হলো লেজহীন বনমানুষ, যারা এখনো গাছে থাকে। পটস বলেন, এসব বনমানুষের চলাফেরার ধরন বানর থেকে অনেকটাই আলাদা। তারা গাছের চূড়ায় ছুটে বেড়ায় এবং ভারসাম্য রক্ষার জন্য তাদের লেজ ব্যবহার করে।