জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা কি সামলাতে পারবে ক্রিকেট

দাবদাহ, খরা, অতিবৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ সব প্রভাব সামলাতে হচ্ছে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটকে। মাঠে খেলতে নেমে প্রতিবছরই আগের চেয়ে আরও বেশি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন ক্রিকেটাররা। তাঁদের ওপর আঘাতটা আসছে শারীরিক ও মানসিক—দুই দিক থেকেই। বিশ্ব ক্রিকেটের ওপর চরম আবহাওয়ার প্রভাব নিয়ে গত ৪ আগস্ট একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। সেটির সংক্ষেপিত অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।

২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। দূষণ এড়াতে তাঁরা মাস্ক পরেন
ছবি: এএফপি

একটা কৌতুক করা যাক। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ এবারের গ্রীষ্মে যদি ক্যারিবীয় অঞ্চলে একটি বৃষ্টিস্নাত দিন চান, তাহলে আপনি একটি ক্রিকেট ম্যাচ শুরু করুন। কৌতুকটির উদ্দেশ্য নিছক হাসিঠাট্টা করা। তবে আড়ালে তা ২০১৮ সালের জলবায়ুবিষয়ক একটি প্রতিবেদনকেই যেন নীরবে সমর্থন দিচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে, তাতে ঘরের বাইরের খেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে ক্রিকেট।

জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ফুটবলের পরই ক্রিকেটের স্থান। বিশ্বে এ খেলার ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ভক্ত-অনুরাগী রয়েছেন। ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোয়। এ তালিকায় রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। মানবসৃষ্ট কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে দাবদাহ, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এসব দেশ ও অঞ্চল।

ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশেও ক্রিকেটের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের খড়্গ নেমে এসেছে। দেশগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দাবদাহের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থা ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে; থাকছেও আগের চেয়ে লম্বা সময় ধরে। ২১টি উষ্ণতম বছরের মধ্যে ২০টিই এসেছে ২০০০ সালের পরে।

আরও পড়ুন

মনে হবে যেন উনুনের মুখ খুলছেন

গত ১০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে চলতি বছর ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে উষ্ণ বসন্ত দেখেছে ক্রিকেট। ব্রিটেনেও এ বছরই স্মরণকালের উষ্ণতম দিনের মুখোমুখি হয়েছেন ক্রিকেটাররা। গত জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল পাকিস্তানের মুলতানে তিনটি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল। তখন শহরটিতে তাপমাত্রা ১১১ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (প্রায় ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পৌঁছায়। মুলতান পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ এলাকাগুলোর একটি। এরপরও ওই তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে মুলতান সফরে গিয়েছিলেন ২৯ বছর বয়সী আকিল হোসেন। গরম থেকে রেহাই পেতে খেলায় বিরতির সময় সতীর্থদের সঙ্গে ‘আইসভেস্ট’ (বরফযুক্ত পোশাক) পরে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। আকিল বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, মনে হবে, আপনি যেন উনুনের মুখ খুলছেন।’

তবে গরমই শুধু ক্রিকেটারদের জন্য মাথাব্যথার কারণ নয়। বৃষ্টিও তাঁদের জন্য একটি বাধা। গত জুলাইয়ে বৃষ্টি ও মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে ডমিনিকায় একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গায়ানা ও ত্রিনিদাদে একই কারণে বাকি ম্যাচগুলোয় ওভার সীমিত করা হয়। ২০১৭ সালে ইরমা ও মারিয়া নামে দুটি ‘ক্যাটাগরি-৫’ ঘূর্ণিঝড় ক্যারিবীয় অঞ্চলের পাঁচটি দেশের ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোর ব্যাপক ক্ষতি করেছিল।

২০১৯ সালে ক্রিকেট ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আরেক প্রতিবেদন বলছে, একজন পেশাদার ব্যাটসম্যান সারা দিন খেললে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়, তা ম্যারাথনে দৌড়ানোর সমান। তবে ফারাক হলো, ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীরা গরম থেকে বাঁচতে ছোট পোশাক পরেন, আর ক্রিকেটে প্যাড, গ্লাভস ও হেলমেট পরে থাকায় উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন

কাজ করার এখনো সুযোগ আছে

খেলাধুলার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কথা বলছিলেন ধারাভাষ্যকার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সাবেক ক্যাপ্টেন ড্যারেন গঙ্গা। বিষয়টি নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে পড়াশোনা করছেন তিনি। ৪৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে আবহাওয়ার কারণে দলগুলোর সফর পরিকল্পনায় বাধা আসছে। পাশাপাশি বৃষ্টি, ধোঁয়া, দূষণ, ধুলা ও গরমের কারণে ম্যাচের সময়সূচিতেও হেরফের হচ্ছে।’

এ অবস্থা সামাল দিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন ড্যারেন গঙ্গা। তাঁর কথা, ‘আমি মনে করি, কিছু ক্ষেত্রে আমরা শেষ সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি। তবে অন্য কিছু ক্ষেত্রে কাজ করার এখনো সুযোগ আছে।’

খেলাধুলা ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসংঘের একটি উদ্যোগে এখনো স্বাক্ষর করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। ওই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, ২০৫০ সাল নাগাদ খেলাধুলাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। যদিও অস্ট্রেলিয়া তাপমাত্রাসংক্রান্ত কিছু নীতি বাস্তবায়ন করেছে এবং খেলার মধ্যে পানি পানের বিরতির সংখ্যা বাড়িয়েছে, তবে চরম আবহাওয়ার মধ্যে ক্রিকেট খেলার জন্য বৈশ্বিক কোনো নীতিমালা নেই। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি আইসিসি।

আইসিসি সম্পর্কে ব্রিটিশ ক্রীড়া লেখক ডেভিড গোল্ডব্লাট বলছিলেন, এটি বালুতে মাথা গুঁজে রেখে সত্য অস্বীকার করার মতো। খেলাধুলা ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ২০২০ সালে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন তিনি। তাঁর ভাষ্যমতে, ক্রিকেট খেলা দেশগুলোকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ, একরাশ সমস্যা সত্যিকার অর্থে খুব বেশি দূরে নেই।

প্রচণ্ড গরমের মধ্যে নিজেদের কিছুটা ঠান্ডা রাখতে খেলার সময় ক্রিকেটারদের ট্রাউজারের বদলে শর্টপ্যান্ট পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ২০১৯ সালের জলবায়ুবিষয়ক প্রতিবেদনে। বিষয়টি আপাতদৃষ্টে যৌক্তিক মনে হলেও কঠোর রীতিনীতি অনুসরণকারী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তা আমলে নেয়নি। অনেক ক্রিকেটারও তা করতে রাজি নন। তাঁদের মতে, শর্টপ্যান্ট পরে ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠে পড়ে গেলে কেটে-ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। ভারতীয় ক্রিকেটার যুজবেন্দ্র চাহাল বলছিলেন, ‘এরই মধ্যে আমার হাঁটু দুটি শেষ হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন

পেট্রল ভরে ছেড়ে দিলেই গাড়ি চলে?

এরপরও জলবায়ুর চরম অবস্থার মধ্যে ক্রিকেটের টিকে থাকা এবং এ খেলার বিভিন্ন ফরম্যাটের (টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) ক্লান্তিকর সময়সূচি নিয়ে ক্রিকেটের ভেতর-বাইরে—দুই অঙ্গনেই প্রশ্ন উঠছে। গত ১৯ জুলাই ইংল্যান্ডের তারকা ক্রিকেটার বেন স্টোকস ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘আমরা গাড়ি না যে আপনারা পেট্রল ভরবেন আর চলার জন্য ছেড়ে দেবেন।’

কাকতালীয়ভাবে স্টোকস এমন দিন অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যেদিন ব্রিটেনের ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ দিন রেকর্ড করা হয়। ১৯ জুলাই ব্রিটেনের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) ছুঁয়ে যায়। এমন তাপমাত্রা এখন নতুন বাস্তবতায় অনেকটি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন জলবায়ুবিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় ডারহাম শহরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামে স্বাগতিকেরা। শহরটি তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা। এরপরও খেলোয়াড়দের স্বস্তি দিতে বাড়তি পানি পানের বিরতিসহ রাখা হয়েছিল বরফ ও ছাতার ব্যবস্থা। এত সব সতর্কতার পরও ক্লান্ত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ইংল্যান্ড দলের ম্যাথু পটসকে।

ওই ম্যাচ নিয়ে তোলা একটি ছবিতে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের এইডেন মার্করামকে মাথায় ও ঘাড়ে বরফের ব্যাগ রাখা অবস্থায় দেখা যায়। তাঁকে বেশ বিষণ্নও দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, তিনি কুস্তি লড়েছেন। খবর পাওয়া যায়, ম্যাচটি দেখতে আসা অনেক দর্শক অচেতন হয়ে পড়েছিলেন, অনেকে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

নয়াদিল্লিতে গত ৯ জুন ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলতে নেমে গরম, আর্দ্রতা ও দূষণের মুখে একই পরিস্থিতিতে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। সন্ধ্যাকালীন ওই ম্যাচের সময় দিল্লির তাপমাত্রা ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু বেশি) ছুঁয়ে যায়। এ নিয়ে ভারতের ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান বলেন, ‘এর সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। সত্যি বলতে কি, গরমের দিকে আমি নজরও দিই না। কারণ, গরম নিয়ে বেশি ভাবলে তা অনুভবও করব বেশি।’

ভারতে ক্রিকেটাররা বলিউড তারকাদের মতোই জনপ্রিয়। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও দিল্লির ওই ম্যাচে স্টেডিয়ামে ৩০ হাজারের বেশি দর্শক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিল ১৭ বছর বয়সী সক্ষম মেহেন্দিরাত্তা। করোনা মহামারি শুরুর পর বাবাকে নিয়ে প্রথমবারের মতো স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যায় সে। সক্ষম বলে, ‘ভালোই লাগছে। কে গরমকে তোয়াক্কা করে?’ আর দুর্দান্ত ব্যাটিং দেখার পর তার বাবা নরেশের প্রতিক্রিয়া ছিল, ক্রিকেট তাঁকে শান্তি দেয়।

২০১৫ সালে ভারত সফরের পর এবার অবশ্য সতর্ক অবস্থানে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সে বছর চেন্নাইয়ে দলটির আটজন খেলোয়াড় ও দুজন স্টাফকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। জানা যায়, তাঁদের অসুস্থতার কারণ ছিল গরম ও খাবারে বিষক্রিয়া। সে ঘটনা স্মরণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ফিজিওথেরাপিস্ট ক্রেইগ গোভেনডার বলেন, সেটি ছিল এক গোলমেলে অবস্থা।

ভারতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ সফরে পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন গোভেনডার। দলের খেলোয়াড়দের পা শীতল রাখতে পানিভর্তি পাত্র রাখা হয়েছিল; খাবারে যোগ করা হয়েছিল ইলেকট্রোলাইট ক্যাপসুল; ছিল ম্যাগনেশিয়াম ও বরফ দিয়ে তৈরি পানীয়; আর মুখ, পিঠ ও কাঁধ ঠান্ডা রাখার জন্য বরফভর্তি তোয়ালে।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলের জার্সিতে বাতাস চলাচলের বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। অনুশীলন শুরুর আগে-পরে খেলোয়াড়দের ওজন মাপা হতো। তাঁরা পানিশূন্যতায় ভুগছেন কি না, নজর রাখা হতো সেদিকে। ৯ জুনের ওই ম্যাচের সময় খেলোয়াড়দের অনেকেই নাকি গরম সহ্য করতে না পেরে বরফ মেশানো পানিতে গোসল করেছিলেন।

ক্রিকেটের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এরই মধ্যে আমাদের খেলার ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে।’ কামিন্সের এই মন্তব্য গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।

২০১৭ সালে নয়াদিল্লিতে খেলতে গিয়ে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররাও। খেলার সময় ড্রেসিংরুমে তাঁদের অক্সিজেন নিতে দেখা যায়। অনেকে আবার মাঠে বমি পর্যন্ত করেছিলেন।

পরের বছর ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অ্যাশেজ চলাকালে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, পানিশূন্যতা ও গরমের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন ইংল্যান্ড দলের ক্যাপ্টেন জো রুট। ম্যাচের একপর্যায়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এ ঘটনার পর মুখ খোলেন ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের তত্কালীন প্রধান টনি আইরিশ। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পরিণতি কী হতে যাচ্ছে—একজন খেলোয়াড় মাঠে ঢলে পড়বেন?’

২০১৮ সালেই কেপটাউন সফরের সময় ভারতীয় খেলোয়াড়দের গোসল দুই মিনিটে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তখন সেখানে চলছিল খরা। একই কারণে স্থানীয় ক্লাব ও স্কুলগুলোতে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করা হয়।

আবার ২০১৯ সালে দাবানলের জেরে সিডনি শহর এতটাই ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার স্টিভ ওকেফের মনে হয়েছিল, দিনে তিনি যেন ৮০টি সিগারেট খাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

ধাক্কা সামলাতে নেওয়া হয়েছে কিছু পদক্ষেপ

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে অবশ্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো ম্যাচ দিনের শেষ ভাগে শুরু করা হচ্ছে অথবা সময়সূচিতে বদল আনা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ক্লাবগুলোর ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন দেশটির জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন কামিন্স।

লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এখন পুরোপুরি বায়ু থেকে উত্পাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। এগিয়ে এসেছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ক্রিকেটাররাও। পরিবেশ-সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে কয়েকটি ম্যাচে তাঁদের সবুজ জার্সি গায়ে দেখা গেছে।

এদিকে এ কথাও বারবার তোলা হচ্ছে যে ধনী ও উন্নত দেশগুলো যারা সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে, তাদের এ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ কমাতে কাজ করতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মুখপাত্র ডারিও বার্থলের কথায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের লোকজন ব্যক্তিগত জেট বিমানে করে উড়ে বেড়াচ্ছেন, আর আমাদের প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহার না করতে সবক দিচ্ছেন।’

●ভাষান্তর: শেখ নিয়ামত উল্লাহ